ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় দলে নিজের সেরাটা দিতে চান নবাগত সুমন

প্রকাশিত: ০০:৪৩, ২৯ জুলাই ২০২০

জাতীয় দলে নিজের সেরাটা দিতে চান নবাগত সুমন

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আগামী অক্টোবরে বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ও এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বকে সামনে রেখে ৩৬ জনের প্রাথমিক স্কোয়াড ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ব্রিটিশ কোচ জেমি ডে। এদের মধ্যে ছয়জনই হচ্ছেন টাঙ্গাইলের। এই ছয়জনের মধ্যে দুজন আবার নতুন মুখ। একজন নাজমুল ইসলাম রাসেল। অন্যজন সুমন রেজা। আজকের প্রসঙ্গ প্রিমিয়ার লীগের ক্লাব উত্তর বারিধারার ফরোয়ার্ড সুমন রেজাকে নিয়ে। যার জন্ম ১৯৯৫ সালের ১৫ জুন। বাবা কলেজ শিক্ষক। মা গৃহিণী। তাদের তিন ছেলে। সুমন সবার ছোট। বাবা শিক্ষক বলেই হয়তো সবসময় চাইতেন তাদের ছেলেরা পড়াশোনাটাই মন দিয়ে করুক। বড় ছেলে মরিশাস প্রবাসী, পড়াশোনা অনেকদূর করেছেন। তবে মেজ ছেলে বাবার আশা-আকাক্সক্ষার ব্যত্যয় ঘটায়। পড়াশোনা করার অবসরে ফুটবল খেলায় মেতে উঠতো। এখন তিনি পুলিশে চাকরি করেন। ছোট ছেলে আবার মেজ ভাইকেও ছাড়িয়ে গেছে। ক্লাস সেভেনে পড়ার সময় থেকেই ফুটবলে ‘পায়েখড়ি’। ফুটবল খেলে দেশের লীগের সর্বোচ্চ স্তরে এবং ডাকও পেয়েছে জাতীয় দলে। তাই বলে পড়াশোনা কিন্তু থেমে থাকেনি তার। ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে থার্ড সেমিস্টারের শিক্ষার্থী তিনি। জাতীয় দলে যারা ডাক পান তারা সাধারণত বড় বা মাঝারি শক্তির ক্লাবের হয়ে থাকেন। কিন্তু সুমনের বেলায় বিষয়টি ব্যতিক্রম। তিনি একেবারেই দুর্বল মানের একটি ক্লাবের খেলোয়াড়। ক্লাবটির নাম উত্তর বারিধারা। তিনি ক্লাবটির অধিনায়কও বটে। পরিসংখ্যান ঘেঁটে জানা গেছে, এই মৌসুমের লীগ পরিত্যক্ত ঘোষণার আগ পর্যন্ত সুমন বারিধারার হয়ে ম্যাচ খেলেছেন ৫টি (মাঠে ছিলেন ৪৪০ মিনিট), গোল করেছেন মাত্র ১টি। তাও সেটা আত্মঘাতী গোল (বিপক্ষ মোহামেডান, ফল বারিধরা ১-৪ গোলে পরাজিত)। তাছাড়া ওই লীগে বারিধারাও রেলিগেশনের খাড়ায় রীতিমতো ধুঁকছিল। ছিল ১৩ দলের মধ্যে দ্বাদশ অবস্থানে (৫ ম্যাচে ১ পয়েন্ট)। ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠতে পারে দলের পারফর্মেন্স এত বাজে হওয়ার পরও কিভাবে জাতীয় দলে ডাক পেলেন? উত্তর একটাইÑ দল খারাপ খেললেও স্বীয় নৈপুণ্যে ঠিকই সমুজ্জ্বল ছিলেন সুমন। তার খেলা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন কোচ জেমি ডে। তাই কোন কিছু না ভেবেই তিনি দলে নিয়েছেন সুমনকে। সুমন চাকরিও করছেন। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে। এখানে তিনি যোগ দেন ২০১৪ সালে সৈনিক হিসেবে। টাঙ্গাইলে একটি একাডেমিতেও ভর্তি হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে ওই মাঠে বিমানবাহিনীর ফুটবল ট্রায়াল হয়েছিল। সেখানে অংশ নিয়ে টিকে যান সুমন। চাকরিস্থল বিমানবাহিনীর অনুমতি নিয়ে ২০১৫-১৬ মৌসুমে যোগ দেন উত্তর বারিধারায়। জাতীয় দলে ডাক পেয়ে কেমন লাগছে? ‘জাতীয় দলে ডাক পেয়েছি। আমার পারফর্মেন্স মূল্যায়নের জন্য বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন এবং কোচ জেমি ডে’কে ধন্যবাদ।’ মামুনুল ইসলাম, রায়হান হাসান এবং লিওনেল মেসির ভক্ত সুমনের অনুভূতি। তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি ঘরোয়া লীগ চালিয়ে যাওয়া উচিত। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) অতি শীঘ্রই শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ (বিসিএল), প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ, অগ্রণী লীগ এবং জেলা পর্যায়ের লীগসহ অন্যান্য ঘরোয়া লীগও যত দ্রুত সম্ভব শুরু করা উচিত। লীগগুলো শুরু হলে আমরা আরও খেলোয়াড় পাব এবং আমাদের জাতীয় দলও এতে উপকৃত হবে। ভাল খেলোয়াড়রা আমাদের খেলার মান বাড়িয়ে দেবে। এটা আমাদের দেশের জন্য ভাল হবে।’ সবশেষে সুমন বলেন, ‘আমি ফিফা-এএফসি যৌথ বাছাইপর্বের দলের জন্য মনোনীত হয়েছি। আমি সেখানে আমার সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করব। টাঙ্গাইলে আমার মতো অনেক তরুণ ফুটবলার আছেন। তারা জেলা পর্যায়ে ফুটবলে খেলছে। তারা ঢাকা আসতে চায়। তারা দ্বিতীয় বিভাগ, প্রথম বিভাগ, বিসিএল, বিপিএল খেলতে চায়। তারা জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার স্বপ্নও দেখে। আমি মনে করি আমরা যত বেশি খেলব, লীগ আয়োজন করব তত বেশি তরুণ প্রতিভার খোঁজ পাব। আর এটা বাফুফের জন্যও খুব ভাল হবে, কারণ প্রচুর নতুন খেলোয়াড়ের তালিকা তখন তাদের কাছে চলে আসবে।’
×