ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জি.এ.মিল্টন

করোনাকালে ই-লার্নিং

প্রকাশিত: ০০:২৬, ২৬ জুলাই ২০২০

করোনাকালে ই-লার্নিং

করোনার কারণে সেই মার্চ থেকেই বাসায় অবস্থান করতে হচ্ছে। এই মহামারী যে এতদিন পর্যন্ত গড়াবে তা কখনও ভাবতেই পারিনি। তাই বিশ^বিদ্যালয় হলেই রয়েছে বেশিরভাগ বই-পত্র। যে দুই-একটা বই সঙ্গে নিয়ে এসেছি তাও একবার শেষ হয়েছে। দ্বিতীয়বার পড়তে গেলেই চলে আসছে বিরক্তি। আর একবার বিরক্তি চলে আসলে সেদিন পড়াশোনা বাদ দিয়ে স্মার্ট ফোনটা হাতে নিয়ে বিছানার ওপর ধপাস করে শুয়ে পড়ছি। ফলে সেদিন পড়াশোনার নাম গন্ধ খুঁজে পাওয়াও দুষ্কর। তাই নিজেকে সামাল দেয়ার জন্য চলে বিকল্প ভাবনা। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন বইয়ের পিডিএফ পড়া যায়। সেগুলো যদি বেশি করে নিজের ফোনে বা কম্পিউটারে সংরক্ষণ করতে পারি; তাহলে একটি বই পড়তে না ভাল লাগলেও আরেকটি বই পড়া যাবে। যেমন কথা তেমন কাজ। শুরু হলো ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে পিডিএফ বই খোঁজা। কোনটা বই বেশি ভাল আর কোনটা ভাল নয় তা বাছাই করে বেশ কয়েকটি পিডিএফ বই কম্পিউটারে সংরক্ষণ করি। সূচনা হলো পড়াশোনার আরেক অধ্যায়। ইন্টারনেট সংযোগকে সিংহভাগ শিক্ষার্থী বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করলেও অনেকেই একে পড়াশোনার কাজেও ব্যবহার করতে অভ্যস্ত। কেউ কেউ সারাদিন বিশে^র আনাচে-কানাচে কোথায় কি হচ্ছে তার খবরাখবর এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে নিয়ে থাকে। আবার অনেকে নিজেকে শিক্ষার জ্ঞানগর্ভে নিয়ে যাওয়ার জন্য সারাক্ষণ ব্যস্ত রাখে বিভিন্ন বইপত্রের পিডিএফ ও খবরের কাগজের ই-পেপার নিয়ে। এতে করে সে অন্য শিক্ষার্থীদের থেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকে। শুধু আমি নই, করোনার এই পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে পড়াশোনা করছে এমন হাজারো শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে। কেননা এখন প্রায় শিক্ষার্থীদের বাসায় বন্দী জীবনযাপন করতে হচ্ছে। আর ওদিকে নিজেদের হল বা মেস থেকে বইপত্রও নিয়ে না আসার দরুন তাদেরকেও সাহায্য নিতে হচ্ছে ইন্টারনেটের। যদিও বর্তমানে হল বা মেস থেকে বইপত্র নিয়ে আসার সুযোগ আছে তারপরও শিক্ষার্থীরা রয়েছে দোটানায়। একাডেমিক পড়াশোনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন চাকরির বই এমনকি বিভিন্ন দৈনন্দিন খবরের কাগজও তারা পড়ছে এর মাধ্যমে। অনলাইনে ই-পেপার ও অনলাইন গণমাধ্যমই এখন শিক্ষার্থীদের দেশ-বিদেশের খবর রাখার একমাত্র অবলম্বন। যাকে আমরা বলতে পারি ই-শিক্ষা বা ইলেকট্রনিকস শিক্ষা। গত কয়েকদিন আগে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয় বন্ধু রুবেল আহমেদ হৃদয়কে বলেছিলাম, ‘কিরে, কেমন আছিস? তোর ছবিসহ পেপার যে বের হয়েছে। নিয়েছিস কিনা?’ সে এক নিশ^াসে উত্তর দেয়, ‘না, বন্ধু। পেপার নেয়া হয়নি; করোনার কারণে বাসায় পেপার নেয়া হয় না। তুই যে ছবিটা আমাকে মেসেঞ্জারে দিয়েছিস সেটি কেবল মোবাইলে সেভ (সংরক্ষণ) করে রেখে দিয়েছি। ওইটাই কয়েকবার পড়েছি। ছবিটা পেপারে দেয়ার জন্য তোকে ধন্যবাদ।’ হৃদয়ের মতো এমন অনেক ক্যাম্পাস বন্ধু, ছোট ভাইদের সঙ্গে কথা হয় নিত্যদিনে। তাদের কথার যেন একটাই উত্তর। ‘নারে বন্ধু, বাসায় তো কোন বইপত্র নিয়ে আসিনি। আর কখনও ভাবতেও পারিনি এতদিন বাসায় থাকতে হবে। তাই এখন বাসায় বসে থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই কাজ চালাচ্ছি। বিভিন্ন ধরনের বইপত্রের পিডিএফ, ই-পেপার, অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো দেখতে মন চাইলে বসে বসেই দেখছি। আর এভাবেই চলছে দিনগুলো। এমনই কথার উদ্রেক হয়েছে বন্ধু আজিজুল হাকিম শুভর সঙ্গে কথা বলে। শুভ বলছে, ‘ক্যাম্পাস ছুটির পর হল থেকে বইপত্র কিছু নিয়ে আসা হয়নি, কি যে যন্ত্রণার মধ্যে পড়ছি। এখন তো বাইরে যাওয়াও নিরাপদ নয়। তাই সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন পিডিএফ পড়ি। ফেজবুক চালাই। বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলি। এভাবেই দিন পার হচ্ছে।’ পড়াশোনা কেমন করছিস ফেসবুকে জানতে চাইলে বন্ধু ইলিয়াস আহমেদ বলে, ‘ধুর, এই করোনার মধ্যে কি আর পড়াশোনা হয়। তার ওপর বাসায় বই নিয়ে আসিনি আবার ক্যাম্পাসেও যাওয়া হচ্ছে না। তাই বাসায় বসে বসে শুধু ফোন চাপি। অনলাইনে বিভিন্ন বই-টই দেখি, পেপার পড়ি, এভাবেই যাচ্ছে দিনগুলো।’ এভাবে প্রায় শিক্ষার্থী বাসায় বসে বসে পড়াশোনা করছে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে। এখন ইন্টারনেট যেন তাদের হয়ে গেছে নিত্যদিনের একমাত্র সঙ্গী। এর মাধ্যমে তারা বন্ধুদের সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক রক্ষা করছে। পাশাপাশি বিনোদন ও শিক্ষার হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করছে। যেন ইন্টারনেট ধরা দিয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে। তবে যারা শহর বা শহরের কাছাকাছি বসবাস করছে কেবল তারাই এর উপযোগিতা উপলব্ধি করছে। কেননা গ্রামে এর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। কোথাও কোথাও ইন্টারনেট সংযোগই হয় না। আবার কোথাও অত্যধিক ধীরগতিতে কাজ করে; যা দিয়ে কাক্সিক্ষত কোন বিষয় ইন্টারনেট থেকে পাওয়াই দুষ্কর। তবে অনলাইনে বা পিডিএফের মাধ্যমে পড়াশোনার নেতিবাচক দিকও রয়েছে। অনলাইনে থাকতে থাকতে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে যাওয়ার সম্ভাবনাও কিন্তু নিহায়ত কম নয়। অনলাইনে থাকতে থাকতে ইউটিউবে প্রবেশ করলে আর পড়াশোনার মনই থাকে না। যদিও ইউটিউব এক ধরনের শিক্ষার মাধ্যম হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও পিডিএফ পড়তে পড়তে ফোন বা কম্পিউটারের পর্দা চোখের রেটিনার ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। যার ফলে চোখে এক সময় ঝাপসা দেখা যায়। মাঝে মাঝে চোখে বড় ধরনের ক্ষতিও হতে পারে। তাই পিডিএফ ডাউনলোড করে একেবারে ফোনে বা কম্পিউটারে সংরক্ষণ করে নিতে হবে। তাছাড়া যথাসম্ভব অনলাইনে বেশিক্ষণ না থাকার চেষ্টা করাই বাঞ্ছনীয়।
×