ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিসিক ও মিল মালিক সমিতির পরস্পর বিরোধী বক্তব্য

কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে লবণের মজুদ নিয়ে বিভ্রান্তি

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ২৩ জুলাই ২০২০

কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে লবণের মজুদ নিয়ে বিভ্রান্তি

এম শাহজাহান ॥ কোরবানির কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের প্রধান উপকরণ লবণের পর্যাপ্ত মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সরকারী সংস্থা বিসিক বলছে, দেশে লবণের কোন সঙ্কট নেই। অন্যদিকে বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, জরুরী ভিত্তিতে ৫ লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেয়া না হলে চামড়া সংরক্ষণে লবণের সঙ্কট হতে পারে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বরাবর আবেদন করে সংগঠনটি তাদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে দিয়েছে। দুই পক্ষের রশি টানাটানির মুখে আসন্ন কোরবানি ঈদে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় লবণ পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় ও উদ্বেগ বাড়ছে ট্যানারি মালিক ও পোস্তার আড়ত ব্যবসায়ীদের। তাদের মতে, দ্রুত লবণের চাহিদা, উৎপাদন, দাম ও সরবরাহ পরিস্থিতি নিয়ে উভয় পক্ষের বৈঠক হওয়া উচিত। এতে সঙ্কট সমাধানের একটি পথ বের হতে পারে। জানা গেছে, কোরবানির চামড়া সংরক্ষণে ১ লাখ ২৫ হাজার টন লবণের চাহিদা রয়েছে। এবার এই চাহিদা আরও বাড়ার কথা বলছেন চামড়া খাত সংশ্লিষ্টরা। কাঁচা চামড়া রফতানির অনুমতি পাওয়া গেলে কোরবানি শেষ হওয়ার পরও তা দ্রুত প্রক্রিয়াজাতকরণে বাড়তি আরও ১ লাখ টন লবণের প্রয়োজন হবে। কিন্তু মিল মালিকরা বাণিজ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে লেখা আবেদনে জানিয়েছেন, বিভিন্ন কারণে লবণ উৎপাদনে ব্যবহৃত ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে এখন বড় বড় উন্নয়ন প্রজেক্টের কাজ চলছে। এ কারণে লবণের উৎপাদন কমে গেছে। আমদানির উদ্যোগ না নেয়া হলে কোরবানিতেই লবণের সঙ্কট হওয়ার আশঙ্কা আছে। এছাড়া চাহিদা মেটাতে সোডিয়াম সালফেট (মানবদেহের জন্য বিষ) আমদানির সুযোগ নিবে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ লবণ মিল মালিক সমিতি, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং ট্যারিফ কমিশনের তথ্য মতে, দেশে বছরে লবণের চাহিদা ২৮ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে খাদ্য লবণ হিসেবে ১২ লাখ মেট্রিক টন, শিল্পে ১২ লাখ টন এবং কষ্টিক সোডা কারখানায় আরও ৩ থেকে ৪ লাখ টন অর্থাৎ সর্বমোট ২৮ লাখ টন লবণের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সেই তুলনায় উৎপাদন হচ্ছে না। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন বিসিকের তথ্য মতে, বছরে ১৮ লাখ টন লবণ উৎপাদন হয়। তবে রবিবার পাঠানো শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বিসিক জানিয়েছে, বর্তমানে লবণ মাঠে ১০ লাখ ৯৩ হাজার টন এবং লবণ মিলগুলোতে ১ লাখ ৮০ হাজার টনসহ দেশে ভোজ্য ও শিল্প লবণের মোট মজুদের পরিমাণ ১২ লাখ ৭৩ হাজার টন। এছাড়া, দেশের সকল জেলায় অবস্থিত ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে আয়োডিনযুক্ত ভোজ্য লবণ মজুদ রয়েছে। এছাড়া ঈদ-উল-আজহায় সারাদেশে মোট লবণের চাহিদা কম-বেশি ১ লাখ টন। বর্তমান মজুদ দিয়েই ঈদ-উল-আজহাসহ আগামী ৭ থেকে ৮ মাসের লবণের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, আগামী নবেম্বর, ২০২০ হতে লবণ উৎপাদনের নতুন মৌসুম শুরু হবে। ফলে এ বছর লবণের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। বিসিক আরও জানায়, কোরবানির পশুর চামড়া সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন লবণ সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার আলোকে ইতোমধ্যে বিসিকের পক্ষ থেকে সর্বক্ষণিকভাবে কারখানা চালু রেখে লবণ প্রক্রিয়াজাত করে ডিলার, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে সরবরাহ অব্যাহত রাখতে লবণ মিল মালিকদের দাফতরিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত ডিলার/পাইকারি বিক্রেতা পর্যায়ে পর্যাপ্ত লবণ মজুদ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বিসিকে জেলা কার্যালয়কে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিসিক কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিসিকের জেলা কার্যালয়গুলো সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জেলা ও উপজেলাভিত্তিক ডিলার এবং পাইকারি লবণ বিক্রেতাদের তালিকা প্রণয়নের কাজ চূড়ান্ত করছে। এটি প্রণয়ন সম্পন্ন হলে বিভিন্ন এতিমখানা, ইউনিয়ন পরিষদসহ কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তালিকা সরবরাহ করা হবে।
×