ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি

প্রকাশিত: ১৮:৫৮, ১৪ জুলাই ২০২০

স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট ‘দুর্নীতিবাজ’ কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবিতে বাম গণতান্ত্রিক জোট সহ প্রগতিশীল বিভিন্ন সংগঠনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচীতে পুলিশি বাধা এসেছে। এরপর আন্দোলনেরকারীরা দীর্ঘ সময় রাস্তা অবরোধ করে সমাবেশের মাধ্যমে বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে সামন থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচী শুরু করা হয়। কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে ছাত্র ইউনিয়ন, যুব ইউনিয়ন, খেতমজুর সমিতি, কৃষক সমিতি, উদীচী, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, হকার্স ইউনিয়নসহ বিভিন্ন সংগঠন। মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচীর মিছিলটি পল্টন হয়ে জিরো পয়েন্টে প্রবেশ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের আটকে দেন। এরপর মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা প্রায় ঘণ্টা খানেক রাস্তা অবরোধ করে সমাবেশ করেন। এসময় যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন রেজার সভাপতিত্বে এবং ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায়ের পরিচালনায় এসময় বক্তব্য রাখেন, কৃষক সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক নিমাই গাঙ্গুলী, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, যুব ইউনিয়নের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজেদুল হক রুবেল, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কার্যকরী সভাপতি রুহুল আমিন, হকার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার হায়াত, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদী হাসান নোবেল প্রমুখ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপসারণের দাবি করে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা ভাইরাস টেস্ট পরীক্ষার কোনো ফি নেয়া যাবে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন ঠিকাদার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তাদের গ্রেফতার এবং আইনের আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে অসৎ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে মিঠু গংদের উৎখাত করতে হবে। রিজেন্ট হাসপাতাল এবং জেকেজির দুর্নীতি অধিকতর তদন্ত করে এর সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত মানুষের জীবন। মানুষের জীবন বাঁচাতে সরকারের ন্যূনতম প্রস্তুতিও নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেবল চাপাবাজি আর মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছেন। আর ব্যস্ত আছেন নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা ও সমন্বয়হীনতা পাহাড় সমান। প্রথম থেকেই দেখা গেল এন-৯৫ মানের মাস্ক উৎপাদনে দুর্নীতি হয়েছে। এ দুর্নীতির সাথে স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকসহ মন্ত্রীর কাছের মানুষরা জড়িত। এ দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেসব চিকিৎসক কথা বলেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তাদেরকে শাস্তি দিয়েছে। এছাড়া এ মুহূর্তে সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজন বেশি বেশি পরিমাণ টেস্ট করা। কিন্তু আমরা জানি, বিভিন্ন জেলায় টেস্ট কিটের অভাবে পরীক্ষা বন্ধ থাকছে বিভিন্ন জেলায়। হাসপাতালগুলোতে নেই দক্ষ চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মী। হাসপাতালগুলোতে নেই পর্যাপ্ত আইসিইউ বেড, ভেন্টিলেশন সুবিধা ও কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা। অক্সিজেন সিলিন্ডার গ্যাসের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। মানুষের অসহায়ত্ব সকল মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বক্তারা আরও বলেন, এই মহামারির সময়েও থেমে নেই চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে ব্যবসা। নিম্নমানের মাস্ক-পিপিই সরবরাহ করে টাকা লুটে নিচ্ছে সরকার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। চিকিৎসক-নার্স-স্বাস্থ্যকর্মীরা যখন পিপিইয়ের অভাবে সম্মুখযুদ্ধে মারা যাচ্ছেন, তখন একটি গ্রুপ ৬৫ লাখ পিস পিপিই ইউরোপ-আমেরিকায় রপ্তানি করে। বক্তারা বলেন, সরকারের দেয়া তথ্যের চেয়ে সংক্রমণের বাস্তব চিত্র বহুগুণ বেশি। এসব নিয়ে কথা বললেই চলছে গ্রেফতার-নির্যাতন। এই অবস্থায় প্রয়োজন ছিল মানুষের ঘরে-ঘরে খাদ্য পৌঁছে দিয়ে লকডাউন জোরদার করা। কিন্তু তা না করে জাতীয় স্বার্থের কথা বলে পুঁজিপতিদের স্বার্থে লকডাউন তুলে দেয়া হলো। লাখো-কোটি মানুষকে মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া হলো। সরকার শুধু জিডিপির কথা বলছে। কিন্তু এই জিডিপি’র মধ্যে মানুষ নেই এবং তা নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনকে রক্ষা করছে পারছে না।
×