ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

টেন্ডার জটিলতায় থমকে গেছে ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্যক্রম

প্রকাশিত: ২৩:১২, ১২ জুলাই ২০২০

টেন্ডার জটিলতায় থমকে গেছে ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্যক্রম

রাজন ভট্টাচার্য ॥ টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে রশি টানাটানির কারণে সারাদেশে ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্যক্রম থমকে গেছে। অভিযোগ আছে, একটি কোম্পানিকে কাজ দিতে ইতোমধ্যে কয়েক দফা টেন্ডার পরিবর্তন করা হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু কার্ড ছাপানোর ব্যবস্থা হলেও সার্বিকভাবে বললে থমকে গেছে বিআরটিএ অন্যতম সেবা এই কার্যক্রম। মূলত স্মার্ট কার্ড সঙ্কটের কারণে লাইসেন্স দিতে পারছে না বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। অথচ প্রায় ২৫ লাখ আবেদন ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির কাছে জমা আছে। ফলে গ্রাহক ভোগান্তি বেড়েছে চরমে। বিআরটিএ নিয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা বদনামের মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে কার্ড না থাকা। অভিযুক্তরা বলছেন, সঙ্কট প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় চলছে। সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরও নির্ধারিত তারিখে স্মার্ট কার্ড নিতে আসলে, দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়। আবার আবেদনের পর কার্ড কিংবা পরীক্ষার জন্য সময় দেয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত! ফলে গ্রাহক ভোগান্তির যেন শেষ নেই। শীঘ্রই সঙ্কট সমাধানের কোন পথও দেখছেন না সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। যদিও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা ও বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলছেন, সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা চলছে। সব মিলিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে বিআরটিএ এখন মহা অশান্তির কারণ। রাজধানীর আশপাশের দুটি বিআরটিএ কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুব বেশি তদ্বির না থাকলে তারা এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স করার আবেদন জমা নিচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইকুরিয়া বিআরটিএ কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, আবেদন জমা নিয়ে কি লাভ। জমা নেয়া মানেই লোকজন বার বার জানতে চান কবে লাইসেন্স দেয়া হবে। কার্ড সরবরাহ বাড়লে সবকিছু স্বাভাবিক হবে। সঙ্কট দেড় বছরের বেশি ॥ লাইসেন্স প্রার্থীরা বলছেন, মূলত দেড় বছর ধরেই বিআরটিএ ডিজিটাল লাইসেন্স কার্ড সঙ্কটের মুখে। লাইসেন্সের জন্য যোগ্য, গড়ে প্রতিদিন এ রকম ৪শ’ ব্যক্তি বিআরটিএর মিরপুর অফিসে ছবি তোলার জন্য গিয়ে থাকেন। মিরপুর ছাড়াও ঢাকার উত্তরা, ইকুরিয়া অফিসেও ভিড় থাকে। ঢাকাসহ সারাদেশে বিআরটিএর ৫৭টি সার্কেল অফিসও রয়েছে। সব অফিসেই সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষের ভিড় ও ভোগান্তি চলমান লাইসেন্সের জন্য। জানা গেছে, বিআরটিএতে বর্তমানে প্রায় ২৫ লাখ আবেদন জমা রয়েছে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য। অথচ দিনে গড়ে সরবরাহ করা হচ্ছে একশ’রও কম। গত বছরের নবেম্বর মাসে সারাদেশে কার্ড ডেলিভারির সংখ্যা ১ হাজার ৯৪২টি। ডিসেম্বরে এই সংখ্যা আরও কম। বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান ড. কামরুল আহসান বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স চাহিদা অনুযায়ী দেয়া যাচ্ছে না; এটা ঠিক। দরপত্র প্রক্রিয়া চলছে অনেকদিন থেকেই। সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ ও তদারকিতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি দূর করাই এখন বিআরটিএ মুখ্য উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। বিআরটিএর সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান খান বলেন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর করার পর সব পক্ষ থেকেই যানবাহনের বৈধ কাগজপত্র করা ও ড্রাইভিং লাইসেন্স করার তাগিদ বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় যদি গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হন তাহলে আইন বাস্তবায়নেও সমস্যা সৃষ্টি হবে। সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, অনেকেই দিনের পর দিন ঘুরে লাইসেন্স সমস্যার সমাধান পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু কার্ড না থাকলে সমস্যার সমাধান মিলবে কিভাবে। সম্প্রতি মতিঝিল বিআরটিসি ডিপোতে আয়োজিত এক শুনানিতে বিআরটিসি চালকরা যথাসময়ে লাইসেন্স ও কার্ড পাচ্ছেন না বলে মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলামের কাছে সরাসরি অভিযোগ করেন। সময় মতো লাইসেন্স কার্ড সরবরাহে দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়ায় না যাওয়ায় তৈরি হয়েছে এ দুরবস্থা। দেরিতে টের পেয়ে বিআরটিএ অতিরিক্ত কার্ড ছাপানোর উদ্যোগ নিলেও তাতে লেজেগোবরে দশা সৃষ্টি হয়। দরপত্র আহ্বান এবং কার্যাদেশ নিয়ে বিপাকে বিআরটিএ ॥ একাধিক কর্মকর্তা জানান, সারাদেশে এখন ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভয়াবহ সঙ্কট চলছে। লাইসেন্স মুদ্রণে দরপত্র আহ্বান এবং কার্যাদেশ প্রদান নিয়ে রশি টানাটানির কারণে বিপাকে পড়েছে বিআরটিএ। মূলত একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার জন্য বারবার টেন্ডার আহ্বান করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর একারণেই সঙ্কটের শেকড় অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। বিআরটিএ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১০ জুন লাইসেন্স কার্ডের জন্য প্রথম টেন্ডার আহ্বান করে বিআরটিএ। এতে তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। এরপর একই টেন্ডার নোটিসে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই, ২৮ জুলাই, আট ও ২৮ আগস্ট চারবার সংশোধনী আনা হয়। এরপর আগের টেন্ডার নোটিস বাতিল করে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি নতুন করে টেন্ডার আহ্বান করে বিআরটিএ। প্রশ্ন হলো টেন্ডার নিয়ে কেন এত জটিলতা। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালে প্রথম আহ্বান করা টেন্ডারে দেশী-বিদেশী বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। কিন্তু মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রাইভেট লিমিটেডকে সুবিধা দিতে টেন্ডার প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেয়া হয় এবং স্পেসিফিকেশনে পরিবর্তন আনা হয়। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স সর্বনি¤œ দরদাতা হতে পারেনি। টেন্ডারে অংশ নিয়ে সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হয় ফ্রান্সের সেপল সিকিউর এবং তার লোকাল এজেন্ট আইবিসিএজ প্রাইমেক্স কোম্পানি। তাদের টেন্ডার প্রক্রিয়া নস্যাৎ করতে ওঠেপড়ে লাগে মাদ্রাজ। তারা বিআরটিএতে দাখিল করা সেপল সিকিউর-এর টেন্ডারের কাগজপত্র সংগ্রহ করে বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি চিহ্নিত করে। প্রশ্ন হলো সরকারী প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র কিভাবে মাদ্রাজের হাতে গেল? তারপর মাদ্রাজ লিখিতভাবে সেপলের বিরুদ্ধে বিআরটিএতে কয়েকটি ঠুনকো অনিয়ম তুলে ধরে এর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে লিখিত আবেদন করে। এখানে প্রশ্ন হলো যদি কাগজপত্রে কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে তা ধরার দায়িত্ব টেন্ডার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্টদের। বাইরের একটি প্রতিষ্ঠানের ত্রুটি চিহ্নিত করার এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন উঠে। ত্রুটির বিষয়ে বিআরটিএ আনুষ্ঠানিক সেপলের কাছে জানতে চাইলে কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করা হয়। এক পর্যায়ে মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের আবেদন আমলে নিয়ে সেপলের বিরুদ্ধে কয়েক দফা তদন্ত হয়। পরিবর্তীতে তা মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাই শেষে বিআরটিএ’র নির্দেশে টেন্ডার বাতিল করা হয়। অর্থাৎ সেপলের আবেদন আমলে নেয়া হয়নি। তখন সেপলের পক্ষ থেকে কয়েক দফা চিঠিতে কোন রকম কারণ ছাড়াই কেন টেন্ডার বাতিল করা হলো জানতে চাওয়া হয় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কাছে। এক পর্যায়ে বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, যে কোন প্রয়োজনে টেন্ডার বাতিলের এখতিয়ার বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের রয়েছে। এরপর আবারও একই কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। প্রথম বারের চেয়ে কম দর দিয়ে টেন্ডারের জন্য মনোনীত হয় মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স! শুধু তাই নয় প্রতিষ্ঠানটির কাজ নিশ্চিত করা ও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে টেন্ডার নোটিস সংশোধন করে ৩৫ লাখ স্মার্ট কার্ডের স্থলে ৪০ লাখ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। মাদ্রাজ সিকিউরিটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ॥ সর্বশেষ টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে কাজ পাওয়া মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। অর্থাৎ দেশে-বিদেশে বিতর্কিত এই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে যাচ্ছে বিআরটিএ। এ কোম্পানির নিজ দেশ ভারতে রয়েছে বড় এক দুর্নীতি কেলেঙ্কারির প্রমাণ। ভারত, শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া, বাংলাদেশসহ অনেক দেশে প্রতিষ্ঠানটি অর্থ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ আছে। ২০১৫ সালে কোম্পানিটি বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করে বিএমইটির ইমিগ্রেশন কার্ড বিতরণের মাধ্যমে। মাত্র পাঁচ লাখ কার্ড তারা সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থ ব্যয় করে বিএমইটির- নিজেদের কার্ড ছাড়িয়ে নিতে হয়েছিল। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভারতীয় সরকারী সংস্থা ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি ২০১১-১২ অর্থবছরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং পরবর্তীতে তাদের যে কোন ধরনের এনরোলমেন্ট থেকে নিষিদ্ধ করে। তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ হলো আধার ডাটাকে তারা অন্য একটি প্রাইভেট কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দিত। যা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং ব্যক্তি পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারের শামিল। এই অভিযোগে মাদ্রাজ সিটিউরিটি প্রিন্টার্স আধার প্রজেক্ট থেকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হয়। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় একটি টেন্ডারে অংশ নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে এই কোম্পানির বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালে কেনিয়াতে এক দুর্নীতির অভিযোগে স্থানীয় আদালতের আাদেশে লোকাল পার্টনারসহ নয়জন পরিচালককে গ্রেফতার করা হয়। এই ফৌজদারি অপরাধের মামলাটি এখনও চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কেনিয়াতে আরও একটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে যা ‘কেবস ফার্টিলাইজার’ কেস হিসেবে সেদেশে বহুল প্রচলিত। অভিযোগ আছে বিআরটিএ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগসাজশ করে আগের টেন্ডার বাতিল করে নতুন টেন্ডারে এমএসপি সর্বনি¤œ দরদাতা হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশে বিদেশে অভিযুক্ত মাদ্রাজের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো বিআরটিএসহ মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিয়েছে। তাছাড়া মাদ্রাজ টেন্ডার প্রাক্কলনের চেয়ে ৩৭ ভাগ কম মূল্যে টেন্ডারের মূল্য নির্ধারণ করেছে। গত বছরের ১০ জুন একই টেন্ডারে মাদ্রাজ সিটিউরিটি প্রিন্টার্স দরপত্র দাখিল করেছিল এক কোটি ৬৩ লাখ ১৭ হাজার ৫০০ ডলারে। এই হিসেবে কার্ড প্রতি দর আসে চার দশমিক ৬৭ ডলার। পরবর্তীতে দরপত্রে প্রতিষ্ঠানটি এক কোটি ৪১ লাখ ৫৬ হাজার ৮০৫ ডলারে দরপত্র দাখিল করে। এতে কার্ড প্রতি দর আসে তিন দশমিক ৫৩ ডলার। লাইসেন্স সরবরাহের পরিসংখ্যান ॥ নিরাপদ সড়কের দাবিতে ২০১৮ ও ১৯ সালে দু’দফা সারাদেশে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে। এরপর থেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা অপ্রত্যাশিত রকমে বেড়ে যায়। এ ছাড়া নতুন সড়ক আইন অনুযায়ী লাইসেন্স না থাকার অপরাধে প্রথম বার ৫ হাজার টাকা ও দ্বিতীয় বার ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার কথা ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের। এ কারণেও লাইসেন্স প্রত্যাশীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। একদিকে বিপুল চাহিদা অন্যদিকে সক্ষমতা সত্ত্বেও হাতেগোনা কয়েকটি কার্ড মুদ্রণের কারণ জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি জানায়, কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নির্দেশনা অনুযায়ী কার্ড মুদ্রণ করা হয়। বিআরটিএর প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারাও বিষয়টি স্বীকার করেন। তাদের মতে, চুক্তি অনুযায়ী কার্ডগুলো এক সঙ্গে মুদ্রণ করে দিলে পরে বড় ধরনের বিপদ দেখা দেবে। তাই জরুরী বিবেচনায় সীমিত পরিসরে কার্ড সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে পাঁচ বছরে ১৫ লাখ লাইসেন্স সরবরাহের জন্য টাইগার আইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বিআরটিএ। তাদের সময়সীমা ২০২২ সাল। তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই বেশি কার্ড ছাপাতে হয় চাহিদার কারণে। এ পর্যন্ত ডেলিভারি দেয়া হয়েছে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার ৪২৮টি কার্ড। সেই হিসেবে ৬২ হাজার ৫৭২টি কার্ড সরবরাহ করবে চুক্তিবদ্ধ ভেন্ডর। কিন্তু এখনই এসব কার্ড সরবরাহ করে দিলে পরবর্তীতে বড় ধরনের বিপত্তির আশঙ্কা থেকে যায় বলে গুরুত্ব বিবেচনায় এখন খুবই সীমিত পরিসরে কার্ড দিচ্ছে বিআরটিএ। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কার্ডের জন্য নতুন করে দরপত্র আহ্বান করলে আরও এক বছর পিছিয়ে যেতে হবে এই আলোচনা ছিল অনেক আগে থেকেই। বিআরটিএ সংশ্লিষ্টরা মতামত দেন, কার্যাদেশ শেষে যন্ত্রপাতি আমদানিসহ মুদ্রণ প্রক্রিয়ায় যেতে দেড় বছর লাগবে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণে মধ্যবর্তী সঙ্কট নিরসনের জন্য বর্তমান প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটিকে কাজ দিতে চেয়েছিল বিআরটিএ। বিদ্যমান চুক্তির অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ তথা সাড়ে ৪ লাখ কার্ড ছাপানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে। টাইগার আইটি বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত এমন যুক্তিতে প্রস্তাবটি গত ২৮ আগস্ট নাকচের পর ঘটনার নাটকীয় মোড় নেয়। এদিকে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের আগেই টাইগার আইটিকে অতিরিক্ত ৩০ শতাংশ কার্ড মুদ্রণের জন্য চিঠি দেয় বিআরটিএ। আবার এমএসপিকেও কার্ড ছাপানোর জন্য অনুরোধ করে চিঠি দেয় সংস্থাটি। এ প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেয়া সংক্রান্ত প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে চিঠি দেয় বিআরটিএ। এর মধ্যে বিষয়টি আইনী জটিলতায় গড়ায়। ফলে থেমে যায় ওই প্রক্রিয়া। টেন্ডার জটিলতার কারণে সঙ্কট সামাল দিতে বিকল্প উপায় কিছু কার্ড সরবরাহ করে বিআরটিএ। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। টাইগার আইটির প্রকল্প পরিচালক এ বি এম মহিউদ্দিন বলেছেন, চুক্তি অনুযায়ী ২০২২ সালের মধ্যে তাদের ১৫ লাখ লাইসেন্স সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু চাহিদার কারণে সময়ের তুলনায় বেশি লাইসেন্স মুদ্রণ করে দিতে হয়েছে তাদের। চার বার চিঠি দিয়ে বিষয়টি বিআরটিএকে জানানো হয়। কিন্তু তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। তাই কার্যক্রম গুটিয়ে নেয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ’র এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দিন দিন কার্ডের চাহিদা বাড়ছে, কিন্তু টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতার অবসান না হওয়ায় সঙ্কট তিমিরেই থেকে যাচ্ছে। সর্বশেষ টেন্ডারে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া নিয়ে আলোচনা চলছে। আশা করি তারা কাজ পেলে দ্রুত কার্ডের সমস্যা কেটে যাবে।
×