স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ভার্চুয়াল আদালত সুচারুভাবে পরিচালনার জন্য বিচারকদের পাশাপাশি আইনজীবীদেরও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। তিনি বলেন, তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর এই পৃথিবীতে ভার্চুয়াল কোর্ট প্রথা চালু হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ভার্চুয়াল কোর্ট স্বাভাবিক বিচার ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ বদলিয়ে বিকল্প হিসেবে কাজ করার জন্য নয়। সংবিধান, সিআরপিসি (ফৌজদারি কার্যবিধি), সিপিসি (দেওয়ানি কার্যবিধি) এবং সাক্ষ্য আইন অনুযায়ী আদালতের কাজ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যে প্রচলিত পদ্ধতিতে পরিচালনা করা হয় সেটাই বলবৎ থাকবে। শুধু অস্বাভাবিক বা বিশেষ কোন পরিস্থিতির জন্য ভার্চুয়াল কোর্ট প্রথা অবলম্বন করা হবে। ভার্চুয়াল কোর্ট সম্পর্কিত অধ্যাদেশটি স্থায়ী আইনে পরিণত হলেও সেটার ব্যবহার হবে বিশেষ পরিস্থিতিতে।
রবিবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ভবন মিলনায়তনে সহকারী জজদের অনলাইন প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি সেবার সঙ্গে বিচারক ও বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের সমানতালে এগিয়ে নিতে চায় এবং সরকারী আইনী সেবার মানোন্নয়নের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে এমন একটি রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চায় যেখানে সকল মানুষ তার আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রীয় সেবাসমূহ সহজেই গ্রহণ করতে পারবেন। মন্ত্রী বলেন, সে কারণে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর বিচার কার্যক্রম সচল রাখার লক্ষ্যে সরকার দ্রুততম সময়ে ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ-২০২০’ তথা ভার্চুয়াল কোর্ট পরিচালনা আইন প্রণয়ন কওে; যা বিচার বিভাগকে আধুনিক ও গতিশীল করার জন্য একটি যুগান্তকারী আইন। তিনি বলেন, কারণ এই আইন দেশের বিচার বিভাগকে নতুন যুগে প্রবেশ করিয়েছে।
সরকার বিগত ৯ মে ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারির পরের দিনই ভার্চুয়াল আদালত গঠন করা হয় এবং ১১ মে থেকে সীমিত পরিসরে বিচার কার্যক্রম চালু করা হয়। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ১১ মে থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত ৩৫ কার্যদিবসে সারা দেশের অধস্তন আদালতের বিজ্ঞ বিচারকরা ভার্চুয়াল শুনানির মাধ্যমে মোট ৯৫ হাজার ৫২৩ টি জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করেছেন এবং একই সময়ে ৪৯ হাজার ৭৬২ আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার কারণে। এটি সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টের পূর্ণ সহযোগিতার কারণে।
এ বছর পহেলা জানুয়ারি সহকারী জজ ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ে চারমাস মেয়াদি বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্স শুরু করা হয়। ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসজনিত রোগ কোভিড-১৯ প্রথম শনাক্ত হওয়ার পর ২৩ মার্চ কোর্সটি স্থগিত ঘোষণা করা হয়। অনলাইনের মাধ্যমে সেই কোর্স সম্পন্ন করতে রবিবার পুনরায় তা উদ্বোধন করেন আইনমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন আইন সচিব মোঃ গোলাম সারওয়ার। সভাপতিত্ব করেন বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মুসা খালেদ।