ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেটে জলবায়ু অর্থায়নে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি

প্রকাশিত: ২১:০১, ২৯ জুন ২০২০

বাজেটে জলবায়ু অর্থায়নে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলতি অর্থবছরের মোট বরাদ্দের তুলনায় জলবায়ু খাতে প্রস্তাবিত মোট বরাদ্দ কিছুটা বাড়লেও আনুপাতিক হারে এ বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। চলতি অর্থবছরের তুলনায় মোট বরাদ্দ ১ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ শূণ্য দশমিক ২৯ শতাংশ কমেছে। এ খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কার্যকারিতা বাড়াতে অবিলম্বে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন, ২০১০ পরিবর্তন করে জলবায়ু কমিশন গঠনের উদ্যোগসহ পাঁচ দফা দাবি করে নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশ (এনসিসি’বি)। রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে নেটওয়ার্ক অন ক্লাইমেট চেঞ্জ ইন বাংলাদেশ (এনসিসি’বি)-এর উদ্যোগে ‘জলবায়ু বাজেট ২০২০-২১-আকাক্সক্ষা : স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য তুলে ধরা হয়। মূলত আগামী অর্থবছরের বাজেটে জলবায়ু অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পরিত্রাণ এবং জলবায়ু অভিঘাত মোকাবেলায় যথাযথ বরাদ্দের দাবিতে নাগরিক সমাজের আকাক্সক্ষা তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এনসিসি’বির কর্মী সরকার আল ইমরানের উপস্থাপনায় সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন উন্নয়ন ধারার ট্রাস্টের সদস্য সচিব আমিনুর রসুল বাবুল। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিআরাইউর সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ এবং কালেরকণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিক নিখিল চন্দ্র ভদ্র। সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য পাঠ করেন ‘এনসিসি’বি’র রিসার্চ এ্যান্ড এ্যাডভোকেসি অফিসার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। লিখিত বক্তব্যে মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বছর ২৫টি মন্ত্রণালয়/বিভাগের মোট বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের ৫৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ (৩ লাখ ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা), যার মধ্যে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ (২৪ হাজার ২২৫ কোটি ৭ লাখ টাকা) জলবায়ু অর্থায়ন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত অর্থবছরে মোট বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৫৮ দশমিক ১১ শতাংশ (৩ লাখ ৪ হাজার ৩৮ কোটি ২২ লাখ টাকা) এবং জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ ছিল ৭ দমমিক ৮১ শতাংশ (২৩ হাজার ৭৪৮ কোটি ৫৩ লাখ টাকা)। অর্থাৎ গত অর্থবছরের তুলনায় এ বছর মোট বরাদ্দ ১৭ হাজার ৯৪৬ কোটি ৮ লাখ টাকা এবং জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ ৪৭৭ কোটি ২ লাখ টাকা। অর্থাৎ কিছুটা বরাদ্দ বাড়লেও আনুপাতিক হারে এ বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরের তুলনায় মোট বরাদ্দ ১ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বরাদ্দ শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ কমেছে। মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বাজেট বরাদ্দের উল্লেখযোগ্য অংশ যথাযথ পরিকল্পনার অভাবে আবার অব্যয়িত থেকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এবারের জলবায়ু সংশ্লিষ্ট বাজেট বরাদ্দে খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কৃষি, বন ও পরিবেশের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়া হয়নি। তদুপরি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলোর মধ্যে বাজেট বরাদ্দ ভারসাম্যপূর্ণ নয়। আবার জলবাফু ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থ বরাদ্দ অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে বেশি দেয়া হয় কিন্তু দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসকরণ, প্রশমন ও অভিযোজন এবং গবেষণা ও জ্ঞানের সমন্বয় ইত্যাদি খাতে বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তিনি বলেন, বরাদ্দের ক্ষেত্রে অনেক সময় স্থানীয় ঝুঁকি ও দুর্যোগের মাত্রা বিবেচনা না করে অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রকল্প বরাদ্দ দেয়া হয়। ফলে জলবায়ু অর্থায়নে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়। তিনি তার বক্তব্যে জলবায়ু অভিঘাতপূর্ণ ও দারিদ্র্য পীড়িত অঞ্চলের ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে বাজেট বরাদ্দের দাবি করেন। রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন কোন তত্ত্বগত বিষয়ে সীমাবদ্ধ নেই, এটি এখন একটি বাস্তবতা। আমাদের আমফান, সিডরের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মেকাবেলা করতে হচ্ছে। ফলে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে জাতীয় বাজেটে মোট জিডিপি’র ১% বরাদ্দ করা এখন সময়ের দাবি। নিখিল চন্দ্র ভদ্র বলেন, বাজেট নিয়ে সারাদেশের মানুষেরই প্রত্যাশা তৈরি হয় এবং এবারও তাই হয়েছে। এনসিসি’বি জলবায়ু বাজেট নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণমূলক এবং সময় উপযোগী বক্তব্য হাজির করেছেন। আমরা নাগরিক সমাজের পক্ষে তাদের এই পাঁচ দফা দাবির বাস্তবায়ন চাই।
×