ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিপিডির প্রাক বাজেট আলোচনায় নসরুল হামিদ

বিদ্যুত উৎপাদন নীতিতে বড় পরিবর্তন আসছে

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২৫ জুন ২০২০

বিদ্যুত উৎপাদন নীতিতে বড় পরিবর্তন আসছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিদ্যুত উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বাজেট পরবর্তী বিদ্যুত জ্বালানি খাত সংক্রান্ত এক অনলাইন সেমিনারে সরকারের তরফ থেকে এ কথা জানানো হয়েছে। বুধবার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বিদ্যুত বিভাগের সঙ্গে ওই সেমিনারের আয়োজন করে। বিদ্যুত উৎপাদন মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৬ সালের সংশোধনীতে বলা হয়েছে দেশে ৫০ ভাগ কয়লা এবং ৫০ ভাগ অন্যান্য জ্বালানির বিদ্যুত উৎপাদনের নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দেশীয় কয়লা উৎপাদন সম্ভব না হওয়াতে কয়লা দিয়ে মোট উৎপাদনের ৩৫ ভাগ বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদী বিদ্যুত উৎপাদন পরিকল্পায় ৪১ হাজার মেগাওয়টের মধ্যে সেই হিসেবে ১৪ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদু্যুত কয়লা থেকে উৎপাদন হওয়ার কথা। কিন্তু বুধবার সেমিনারে বলা হয়, সরকার কয়লা থেকে মাত্র পাঁচ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করবে। কয়লার পরিবর্তে সরকার আমদানি করা গ্যাসে বিদ্যুত উৎপাদন করবে। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, বিশ্বে জ্বালানি ব্যবহারের ধরন প্রতিদিনই পরিবর্তন হচ্ছে। আমরাও পরিবর্তিত এই পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে চাইছি। তিনি বলেন, কয়লা চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রর উৎপাদন দক্ষতা ৪২ থেকে ৪৩ ভাগ সেখানে গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রর উৎপাদন দক্ষতা ৬২ ভাগ। এছাড়া এলএনজি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়। এজন্য নতুন করে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে কয়লার বদলে এলএনজিকে প্রাধ্যান্য দেয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী বিদ্যুত খাতে চাহিদা অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতার সমালোচনা করে বলেন, এখন শিল্প কারখানার ক্যাপটিভসহ আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা ২৩ হাজার মেগাওয়াট। চার হাজার মেগাওয়াট রয়েছে ক্যাপটিভ পাওয়ার। অর্থাৎ ক্যাপটিভ বাদে রয়েছে ১৯ হাজার মেগাওয়াট। এই ১৯ হাজারের মধ্যে আবার ডিরেটেড ক্যাপাসিটি (অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে উৎপাদন কমে আসায় প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা) ১০ ভাগ বাদ দিলে থাকে ১৭ হাজার মেগায়াট। এরমধ্যে আরও এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক আয়ু ফুরিয়েছে। তাহলে আমাদের উৎপাদন ক্ষমতা হচ্ছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। এখন আমাদের করোনার মধ্যে ১৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুতের দরকার হচ্ছে। এখন করোনা না থাকলে বিদ্যুতের সঙ্কট তৈরি হতো উল্লেখ করে বলেন, সমালোচনা করার আগে এসব বিষয়ে পর্যাপ্ত জানা শোনার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, একটি দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির উপর নির্ভর করে বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। আগামী ২০২১ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসেব ধরে আমরা বিদ্যুত উৎপাদন করছি। তিনি উন্নত দেশ সিঙ্গাপুরের উদাহরণ টেনে বলেন, সিঙ্গাপুরে মাথাপিছু বিদ্যুতের উৎপাদন হয় নয় হাজার কিলোওয়াট। সেখানে আমাদের হচ্ছে এখন ৫১০ কিলোওয়াট। কিন্তু মধ্যম আয়ের দেশের মাথাপিছু বিদ্যুত উৎপাদন অন্তত এক হাজার ৫০০ কিলোওয়াট। সেই তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তর। এজন্য দেশে ব্যাপকভাবে শিল্পায়নের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। জাপান মাতারবাড়ি মহেশখালীতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করতে চায়। এজন্য তারা সেখানে বন্দর নির্মাণ করতে চায়। শিল্প কারখানা নির্মাণে বিনিয়োগে আগ্রহী। প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশে ১২৩ শিল্প পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম মিরসরাইতে যে শিল্প পার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে তার বিদ্যুত চাহিদা ঢাকার বিদ্যুত চাহিদার সমান। ফলে আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা কয়েক বছরের মধ্যে বাড়বে। তিনি বলেন, তেল চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র রেন্টাল এবং কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রর চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে তা আর নবায়ন করা হচ্ছে না। এজন্য বেজ লোড বা সার্বক্ষণিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। উপ-আঞ্চলিক বিদ্যুত বাণিজ্য নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নেপালের জলবিদ্যুত আমরা গ্রীষ্মকালে ব্যবহার করতে পারি আর অন্যদিকে শীতকালে নেপাল এবং ভুটানের বিদ্যুতের চাহিদা বেশি থাকায় আমাদের কাছ থেকে নিতে পারে। এতে উভয় দেশ উপকৃত হবে। গ্রাহকদের বিদ্যুত বিলের ভোগান্তি দূর করতে তার বরাবরও আবেদন করা যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, করোনার কারণে মিটার দেখে বিল করা সম্ভব হয়নি। এজন্য এমন হয়েছে এই অতিরিক্ত বিল ভবিষ্যতে সমন্বয় করা হবে। প্যানেল আলোচক হিসেবে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন, বুয়েটের সাবেক শিক্ষক ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম তামিম, সাবেক বিদ্যুত সচিব ড. মোঃ ফওজুল কবির খান, ¯্রডোর সাবেক সদস্য সিদ্দিক যোবায়ের ও বাংলাদেশ ইনডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার এ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ইমরান করীম বক্তব্য রাখেন। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রবন্ধে সিপিডির তরফ থেকে দাবি করা হয়, সরকার চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুত উৎপাদন করায় অতিরিক্ত ভর্তুকি প্রয়োজন হচ্ছে। সরকারকে এখন উৎপাদন প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে ধীরে চল নীতি গ্রহণের সুপারিশ করে সিপিডি। প্রতিষ্ঠানটি বলছে যেসব কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র অতি সম্প্রতি গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলো বাতিল করতে হবে। বাজেটে কয়েকটি কয়লাচালিত প্রকল্পর জন্য জমি অধিগ্রহণ এবং সম্ভাব্যতা জরিপ চালানোর জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এসব প্রকল্প বাতিল করে সঞ্চালন এবং বিতরণে জোর দেয়ার কথা বলা হয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান সামঞ্জস্যপূর্ণ উৎপাদন এবং বিতরণ ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, কেন রেন্টাল এবং কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্রর উপর নির্ভরতা থেকে সরকার বের হতে পারছে না।
×