ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কারবারের মতে জীবনের নিরাপত্তাই আগে

প্রকাশিত: ০০:৫৬, ২৩ জুন ২০২০

কারবারের মতে জীবনের নিরাপত্তাই আগে

জিএম মোস্তফা ॥ করোনাভাইরাসের বাধা অতিক্রম করে ইতোমধ্যেই সরব হয়েছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন। ইতোমধ্যেই মাঠে গড়িয়েছে ইউরোপিয়ান ফুটবল। ক্রিকেটও ফেরার অপেক্ষায়। অন্যসব খেলার মধ্যে টেনিসও শুরুর পরিকল্পনা করছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। করোনাভাইরাসের বাধা জয় করে আবারও কোর্টে নামতে মুখিয়ে রয়েছেন জার্মান তারকা এ্যাঞ্জেলিক কারবারও। তবে তার মতে টেনিস কোর্টে নামার আগে সকল খেলোয়াড়কে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নাম্বার ওয়ান তারকা এ্যাঞ্জেলিক কারবার বলেন, ‘অবশ্যই আমরা সকলেই আবারও খেলতে চাই। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা চাই কোর্টে ফিরতে। তবে আমি মনে করি, অংশগ্রহণকারী সকল খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা যদি নিশ্চিত করা হয় তাহলেই কেবল আবারও কোর্টে টেনিস ফেরাটা সম্ভব। আমার জন্যও জীবনের নিরাপত্তাটা সবার আগে।’ গত কয়েক বছর ধরে বিশ্ব প্রমীলা টেনিসে যাদের দাপট দেখছে বিশ্ব তাদের মধ্যে এ্যাঞ্জেলিক কারবার অন্যতম। তবে কারবারের ছোটবেলার গল্পটা একটু বিচিত্র। লোকেরা পোল্যান্ডে জন্ম নিয়ে জার্মানিতে বসতি গড়ে। কিন্তু এ্যাঞ্জেলিক কারবারের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ভিন্ন হয়েছে। তার জন্ম জার্মানির ব্রেমেন শহরে। বাবা স্লাওমির কারবার একজন পোলিশ নাগরিক। মা বিয়েটা কারবারও পোল্যান্ডের মানুষ। একটা ছোট বোন ও বাবা-মায়ের সঙ্গে বড় হয়ে উঠেছেন জার্মানির আরেক শহর কিয়েলে। মাত্র ৩ বছর বয়সেই টেনিস খেলা শুরু করেন। পেশাদার টেনিসে ঢোকার পর ২০১২ সালে কারবার নিজেদের আদি বাড়ি পোল্যান্ডের পোজান শহরে ফিরে যান। তবে বসবাস শুরু করেন নানার কাছে। কারণ নানার বাসায় একটি ইনডোর টেনিস কোর্ট ছিল। এটারই সুবিধা নিতে ও রাত-দিন পরিশ্রম করে নিজেকে আগে এগিয়ে নিতে পোল্যান্ডে বসবাস শুরু করেন। তবে আন্তর্জাতিক টেনিসে জার্মানিরই প্রতিনিধিত্ব করেন কারবার। ছোটবেলা থেকে পরিবারের সমর্থনে জার্মানি ও পোল্যান্ডের অজ¯্র টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু ২০০৩ সালের আগে তিনি কখনও কোন শিরোপা জিততে পারেননি। সেবার ১৫ বছর বয়সে এসে প্রথম শিরোপা জেতেন। নিজের জার্মান ও পোলিশ পরিচয় নিয়ে কারবারের কোন দ্বিধা নেই। ২০০৭ সালে কারবারের গ্র্যান্ডস্লাম অভিষেক হয়। সে বছর ফ্রেঞ্চ ওপেনে অংশ নিয়ে প্রথম রাউন্ডেই বাদ পড়েন তিনি। একই বছর ইউএস ওপেনে শুরু করেন সেরেনা উইলিয়ামসের বিপক্ষে। সেখানেও সরাসরি সেটে হেরে বিদায় নেন। প্রথম সাফল্যের জন্য ২০১৬ সাল অবধি অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে। সাফল্য ও শ্রেষ্ঠত্বের জন্য কারবারের এই যে অদম্য চেষ্টা সেটা প্রথম সাফল্যের মুখ দেখেছিল পেশাদার টেনিসে অভিষেকের আট বছর পর এসে। ২০১১ ইউএস ওপেন শুরু করেছিলেন ৯২ নম্বর র‌্যাঙ্কিং নিয়ে। সেখানেই একটার পর একটা বিস্ময়কর জয় দিয়ে পৌঁছে গেলেন সেমিফাইনালে। আর এই সাফল্যের ফলে ওই বছরটা শেষ করলেন ৩২ নম্বর র‌্যাঙ্কিংয়ে থেকে। এরপর থেকেই যেন নিজের আত্মবিশ্বাসটা খুঁজে পান কারবার। তবে ক্যারিয়ারের সেরাটা পেতে তাকে অপেক্ষা করতে হলো আরও পাঁচ বছর। ২০১৬ সালে এসে তিনি প্রথম গ্র্যান্ডস্লামের দেখা পান। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে প্রথমবারের মতো উঠে গেলেন গ্র্যান্ডস্লাম ফাইনালে। সেখানে তখনকার চ্যাম্পিয়ন সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে জিতলেন ক্যারিয়ারের প্রথম কোন মেজর টুর্নামেন্ট। সে বছরটা টেনিস কোর্টে স্বপ্নের মতো কাটে কারবারের। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের পর ইউএস ওপেনেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন তিনি। একই বছরে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থানটাও নিজের করে নেন কারবার। এরপর রিও অলিম্পিকেও দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছিল স্বর্ণপদক জয়ের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পেরে ওঠেননি তিনি। ২০১৮ সালে উইম্বলডনের শিরোপা উঁচিয়ে ধরে নতুন নজির গড়েন স্টেফিগ্রাফের এই উত্তরসূরি। কিন্তু গত বছরটা টেনিস কোর্টে খুব নিষ্প্রভ কেটেছে তার। তবে অতীতের সেই ব্যর্থতা নিয়ে নয় এই মুহূর্তে করোনাভাইরাসের প্রতিবন্ধকতা দূর করে কোর্টে ফেরাটাই কারবারের বড় চ্যালেঞ্জ। আর শুরুটাও করতে যাচ্ছেন ইউএস ওপেন দিয়ে। সবকিছু সঠিকভাবে এগোলে নিজের হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার দারুণ সুযোগ পাবেন জার্মানির এই তারকা খেলোয়াড়। যদিওবা এখন পর্যন্ত ইউএস ওপেনে খেলার ব্যাপারে নিশ্চিত কিছু বলেননি এই মুহূর্তে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ২১ নম্বরে থাকা এ্যাঞ্জেলিক কারবার।
×