ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুমিনুলের এক টেস্টে দুই সেঞ্চুরির রহস্য

প্রকাশিত: ০০:৫৪, ২৩ জুন ২০২০

মুমিনুলের এক টেস্টে দুই সেঞ্চুরির রহস্য

মোঃ মামুন রশীদ ॥ টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা শুরুর পর থেকেই বাংলাদেশ দলকে নানা সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে চলতে হয়েছে। এখন পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে নিজেদের সেরা নৈপুণ্যটার স্বাভবিকতা খুঁজে পেতে লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে। বিশেষ করে ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণেই টেস্ট ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত প্রত্যাশিত ও সন্তোষজনক অবস্থানে যেতে পারেনি বাংলাদেশ। টপঅর্ডাররা নিয়মিতই সংগ্রাম করেন এখনও। তবে বিশেষ করে ওয়ানডাউন পজিশনে ছিল দীর্ঘদিনের দুশ্চিন্তা। সেই চিন্তাটা লাঘব করেছেন মুমিনুল হক সৌরভ। টেস্ট ক্রিকেটে তিনি ২০১৩ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে এই পজিশন নিয়ে আর চিন্তা করতে হয়নি। নিয়মিতই তার ব্যাট হেসেছে। এমনকি টানা ১১ টেস্টে অর্ধশতাধিক রানের ইনিংস খেলার একটি রেকর্ডও গড়েছেন তিনি। আরেকটি রেকর্ড আছে তার। সেটি হচ্ছে একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে এক টেস্টের উভয় ইনিংসে শতক হাঁকানোর গৌরব। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সফরকারী শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম টেস্টের দুই ইনিংসে তিনি ১৭৬ ও ১০৫ রান করেছিলেন। সেই কীর্তি গড়ার রহস্য নিজেই সম্প্রতি জানিয়েছেন মুমিনুল। বিকেএসপিতে গুরু নাজমুল আবেদিন ফাহিমের অধীনে অনুশীলন করেই নিজেকে ফিরে পেয়েছিলেন, তারপরই জোড়া এই শতক পান তিনি। ২০০০ সালের ১০ নবেম্বর বাংলাদেশ দল টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করে। এর আগেই এক টেস্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকানোর ঘটনা ছিল ৪৯টি। বাংলাদেশ দল টেস্ট খেলুড়ে হওয়ার পর এমন ঘটনা গত ২০ বছরে হয়েছে আরও ৩৭টি। এর মধ্যে মুমিনুল একমাত্র বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান যার এই কৃতিত্ব রয়েছে। অথচ বরাবরই বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং দুই ইনিংসে হয়েছে দুই রকম অভিজ্ঞতার। কোন একটি ইনিংসে ভাল হলে অপর ইনিংসে হয়েছে ব্যাটিংয়ে ভরাডুবি। ২০১৮ সালে প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি হাঁকান মুমিনুল শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। ক্যারিয়ার শুরুর বছর দুয়েকের মধ্যেই টেস্ট স্পেশালিস্ট তকমা পাওয়া মুমিনুল তার নামের যথার্থতা প্রমাণ করেছেন এর মাধ্যমে। টানা ১১ টেস্টে অন্তত অর্ধশতক হাঁকানোর অবিস্মরণীয় রেকর্ড গড়েছিলেন মুমিনুল ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৫ সালের মে পর্যন্ত সময়ে। দেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে অভূতপূর্ব এই কীর্তির মাধ্যমেই তিনি টেস্ট স্পেশালিস্ট মর্যাদা পেয়ে যান। সেই মুমিনুল ২০১৭ সালে দেশের শততম টেস্ট জয়ের ম্যাচ খেলতে পারেননি। মুমিনুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে তিনি স্পিন খেলতে পারেন না। পরবর্তীতে দলে থাকলেও বেশ চাপের মধ্যেই ছিলেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় তার সে সময়ের ব্যাটিং পারফর্মেন্স দেখলেই। টানা ১১ ইনিংসে মাত্র ১টি অর্ধশতক পেয়েছিলেন ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট খেলতে নামার আগে। সিরিজের প্রথম সেই টেস্টের প্রথম ইনিংসেই রঙ্গনা হেরাথসহ লঙ্কানদের দুর্দান্ত স্পিন আক্রমণের বিরুদ্ধে ১৭৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস উপহার দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেন মুমিনুল। পরের ইনিংসেও চাপের মুখে পড়া বাংলাদেশকে ম্যাচ বাঁচানো ১০৫ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। প্রথম ও একমাত্র বাংলাদেশী হিসেবে এক টেস্টের উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকানোর অনন্য কীর্তি গড়েন এর মাধ্যমে। অবিস্মরণীয় এই কীর্তির পেছনে আছে কঠোর পরিশ্রম। যেখান থেকে ক্রিকেটার হয়ে উঠেছেন সেই বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অনুশীলন করেছেন নিজেকে ফিরে পেতে। নিয়েছেন গুরু ফাহিদের নির্দেশনা। এ বিষয়ে মুমিনুল বলেন, ‘আমি তখন খুব খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলাম। এর আগের সিরিজে আমাকে দল থেকে বাদ দেয়া হয়। আমাকে দলের এক শ’ নম্বর টেস্ট ম্যাচের আগেও বাদ দেয়া হয়। ম্যানেজমেন্টের মনে হয়, আমি স্পিন ভাল খেলি না। আমি এই চ্যালেঞ্জ নিতে চেয়েছিলাম এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নিজেকে ফিরে পেতে চেয়েছিলাম। আমি দুই সপ্তাহের জন্য বিকেএসপিতে চলে যাই। সেখানে থাকি এবং আমার শিক্ষক ফাহিম স্যারের তত্ত্বাবধানে থাকি। একজন ভিডিও এ্যানালিস্ট ছিল তখন, সেও আমাকে ভিডিও দেখিয়ে অনেক সাহায্য করে। স্পিনারদের কীভাবে খেলতে হয় সেই ব্যাপারে আরও ধারণা দেয়। আমাদের দ্বিতীয় ইনিংস ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমি আরও নজর দিচ্ছিলাম, কীভাবে ওদের স্পিনারদের খেলব।’
×