ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নাসির উদ্দিন আহমেদ

অসাম্প্র্রদায়িক মানবিক ও জনবান্ধব আওয়ামী লীগ

প্রকাশিত: ২১:৫৬, ২৩ জুন ২০২০

অসাম্প্র্রদায়িক মানবিক ও জনবান্ধব আওয়ামী লীগ

আজ ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দীর্ঘ ৭০ বছরের আওয়ামী লীগের ইতিহাস, আত্মত্যাগ, অসাম্প্রদায়িকতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মানবিক উন্নত দেশ গড়ার সংগ্রামের ইতিহাস। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকা টিকাটুলির কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে বর্তমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রচিত হয়েছে এক নতুন ইতিহাস। বাঙালী জাতীয়তাবাদের গোড়াপত্তন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর মুসলিম লীগের পশ্চিমাপ্রীতি, ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, দমন-পীড়ন ও প্রতিহিংসার রাজনীতির বলয় থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রগ্রেসিভ নেতাদের একটি প্রাথমিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ১৫০ নম্বর মোঘলটুলিতে। এ বৈঠকে কলকাতা থেকে এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যোগদান করেছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় অবশেষে ২৩ জুনের সম্মেলনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি এবং এম শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং নিখিল পাকিস্তানের আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে থেকেই এ সম্মেলনে সহ-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দলে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশের ০৬ বছরের মাথায় ১৯৫৫ সালে দলের নাম থেকে মুসলিম কথাটি বাদ দেয়া হয়। ধীরে ধীরে দলের মধ্যে তখন নেতা শেখ মুজিবের নেতৃত্বের অসাধারণ দক্ষতা, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা প্রকাশ পেতে থাকে এবং অল্প সময়েই তিনি দলের এক অবশ্যম্ভাবী নেতা ও সর্বময় সিদ্ধান্ত প্রদানের অধিকারী হয়ে ওঠেন। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন এবং ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলনে ও সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু এদেশের হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান সকল মানুষকে একত্রিত ও উজ্জীবিত করে মুক্তিযুদ্ধের যে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তারই হাত ধরে সকল ধর্ম, বর্ণ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন ভূখ-। বাংলাদেশ নামক ভূখ- হবে অসাম্প্রদায়িক, মানবিক, প্রগতিশীল, বিজ্ঞানমনস্ক উন্নত এক দেশ, যেখানে মেহনতী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে গড়ে উঠবে সোনার বাংলা, এই ছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্ন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সকলকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান এবং তাঁর মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে গড়ে তোলেন উন্নয়নের সকল প্ল্যাটফর্ম। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার অল্পদিনেই অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, উন্নয়ন, সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশকে একটি ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যেতে থাকে। স্বাধীনতাবিরোধী চক্র পাকিস্তানী দোসররা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি দেশের উন্নয়ন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ করে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের পথ বন্ধসহ সংবিধানের ৩৮ নং অনুচ্ছেদকে ক্ষতবিক্ষত করেছিল। উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে প্রত্যাবর্তন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রাম, নির্যাতন ভোগ করে তাঁর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন যোগ্য নেতৃত্বে ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে দেশকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে। এরপর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের ফলে কিছু সময়ের জন্য ক্ষমতার ছন্দপতন হলেও ২০০৯ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসে এবং টানা তৃতীয়বারের মতো দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের অদম্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। দৃশ্যমান হচ্ছে পদ¥া সেতু, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা সমুদ্র বন্দর, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মতো মেগা প্রকল্প। সমুদ্র বিজয়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট স্থাপন, মাথাপিছু আয়ের অজুত উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৪.৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করণসহ সকল ক্ষেত্রে অর্জিত হয়েছে অভূতপূর্ব সাফল্য। বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করে মৌলবাদকে মুক্ত হাতে দমন করা হয়েছে। এ বছর আমরা পালন করছি স্বাধীনতার মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী। ৭০ বছরের পথ পরিক্রমায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্জন অভূতপূর্ব। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী এ দলটি আজ উন্নয়নবান্ধব, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক, মৌলবাদ বিরোধী শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক দল এবং পেছনে রয়েছে প্রতিষ্ঠাকালীন সকল নেতাকর্মীসহ আজ পর্যন্ত নেতৃত্ব দানকারী সকল নেতাকর্মীর চরম ধৈর্য ও আত্মত্যাগ। জাতির পিতা আমাদের একটি স্বাধীন ভূখ- দিয়ে গেছেন, যেখানে জননেত্রী শেখ হাসিনা তা পরম মমতায় কঠিন দৃঢ়তায় উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত সরকার অতি সুন্দরভাবে পরিচালনা করছেন। করোনার এ মহামারীতে তিনি অসীম সাহস, ধৈর্য ও বিচক্ষণতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়ে আশ^স্ত করছেন। চিকিৎসক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, সাংবাদিকসহ সকল ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাকে পরম মমতায় বলছেন ধৈর্য্য হারাবেন না, আস্থা রাখুন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ অদৃশ্য ভাইরাসকে প্রতিহত করে আবার বাংলাদেশ জেগে উঠবে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়। ২০২১ সালের করোনামুক্ত বাংলাদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন হবে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে। এ প্রত্যাশায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ২৩ জুন ৭০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর শুভেচ্ছা। লেখক : সাবেক তথ্য ও সাংস্কৃতিক সচিব
×