ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই ঈদের নামাজ আদায়

প্রকাশিত: ২২:৪৩, ২৯ মে ২০২০

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই ঈদের নামাজ আদায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যেই সোমবার উদযাপিত হয়েছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-ফিতর। তবে বিবর্ণ এই ঈদে ছিল না কোন আনন্দ। করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই মসজিদে মসজিদে হাজারও মুসল্লি ঈদ-উল-ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বলা হয় আগেই। ঈদের নামাজের পর হাসিমুখে কোলাকুলির চিরচেনা দৃশ্য এবার দেখা যায়নি। দূর থেকে সালাম বিনিময় হলেও মানুষের মুখে ছিল না হাসি। ঈদের নামাজের পর খুশির বদলে মানুষের চোখে মুখে ছিল আতঙ্ক আর দুঃশ্চিন্তার ছাপ। ঈদে ঢাকা থেকে যারা গ্রামে ফিরেছেন তারাও ছিলেন গ্রামবাসীর জন্য আতঙ্কের কারণ। করোনার মধ্যে আমফান যে ক্ষতচিহ্ন রেখে গেছে, তা নিয়েই কেটেছে উপকূলবাসীর বিবর্ণ ঈদ। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার ঈদের আয়োজন ভিন্ন। কোন ঈদগাঁহে ছিল না ঈদের নামাজের কোন আয়োজন। ভেদাভেদ ভুলে ঈদের জামাতের পর কোলাকুলি আর স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে বেড়ানোর মধ্য দিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির রেওয়াজ থাকলেও এ বছর ছিল না সেই দৃশ্য। কাউকে কোলাকুলি করতে দেখা যায়নি। প্রায় সবাই মাস্ক ব্যবহার করে নামাজ আদায় করেছেন। আগেই ঈদের নামাজে ৩ ফুট দূরত্ব রাখার পরামর্শ দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এছাড়াও ঈদে নিষেধাজ্ঞা আসে কোলাকুলি ও হাত মেলানোর ক্ষেত্রেও। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া হয় সরকার থেকে রবিবার সন্ধ্যায়, ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে ঘরে থেকে ঈদ উদযাপনের আহ্বান জানান। সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী তিনি বলেন, ‘এ বছর আমরা সশরীরে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হতে বা ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে না পারলেও টেলিফোন বা ভার্চুয়াল মাধ্যমে আত্মীয়স্বজনের খোঁজ খবর নেব।’ করোনার কারণে জাতীয় ঈদগাঁহে ছিল না নামাজের আয়োজন। এর বদলে দেশের সব মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মসজিদে ঈদের দিন সকাল সাতটায় ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জ্যেষ্ঠ পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান তাতে ইমামতি করেন। মুসল্লিরা মুখে মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নামাজ আদায় করেন। জাতীয় মসজিদ পাঁচটি ঈদের জামাত হলেও তার দৃশ্যপট ছিল ভিন্ন। সে অনুযায়ী মুসল্লিরা সারিবদ্ধভাবে দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে একটি জীবাণুনাশক কক্ষের মধ্য দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তাদের নামাজ আদায় করেন। একই চিত্র ছিল ঢাকার বাইরেও। ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ভিড় এড়াতে অনেক মসজিদেই একাধিক জামাতের আয়োজন করা হয়েছিল। নামাজ শেষে সবাই কোলাকুলি করা থেকে বিরত ছিলেন। ঈদের নামাজ শেষে করোনা মহামারী থেকে রক্ষা পেতে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া চাওয়া হয়। এদিকে ঈদের দিন মসজিদের পরিবর্তে অনেক ভবনের ছাদেও ঈদের জামাতের আয়োজন করতে দেখা গেছে। ঈদের দিনে সাধারণত মসজিদগুলোর সামনে ভিক্ষুকদের যে ভিড় থাকে এবার সেটিও তেমন ছিল না। ঢাকায় কিছু মসজিদের সামনে ভিক্ষুকদেরও দেখা গেছে দূরত্ব বজায় রেখে বসে থাকতে। ঈদের আগে নতুন কাপড় চোপড় কেনা এবং ঈদের দিন সেগুলো পরে বের হওয়া প্রচলিত রেওয়াজ থাকলেও এই ঈদে তার ব্যতিক্রম হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব রক্ষা করতে গিয়ে। একই কারণে সালাম করার বা সালামি আদায়েও আকাল দেখা গিয়েছে। এদিন রাজধানীর সড়কগুলোতে ঈদের দিন গণপরিবহন না থাকলে ও সিএনজি ও প্রাইভেটকার চলেছে ঠিকই। এদিকে ঈদের দিন রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ তার পরিবারের সদস্য এবং কয়েকজন সিনিয়র সরকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে বঙ্গভবনের দরবার হলে পবিত্র ঈদ-উল- ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। ওইদিন সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে ঈদের নামাজ আদায় করেন। বঙ্গভবন জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি মাওলানা সাইফুল কবির ঈদের নামাজে ইমামতি করেন। নামাজ শেষে দেশের জনগণের অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ সময়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার শান্তি কামনা এবং দেশে ও সারাবিশ্বে করোনায় আক্রান্তদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করা হয়। এছাড়াও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদৎবরণকারী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সব সদস্য ও দেশের জন্য বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশেষ করে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী সব শহীদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। প্রতি বছর ঈদকে ঘিরে নানা আয়োজন থাকে রাজধানীবাসীর। ঈদে পরিবার-পরিজন নিয়ে সবাই ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে রাজধানীর বিনোদনকেন্দ্রগুলো সাজে নতুন সজ্জায়। কিন্তু এবার ছিল তার ব্যতিক্রম। মহামারী করোনাভাইরাস সবকিছুতে বাদ সেধেছে। রাজধানীর কোনও বিনোদনকেন্দ্র খোলা ছিল না দর্শনার্থীদের জন্য। তবে জাতীয় সংসদ ভবন, চন্দ্রিমা উদ্যান, হাতিরঝিলের মতো উন্মুক্ত স্থানগুলোতে মানুষের আনাগোনা ছিল বেশ। মানুষের বড় অংশই এবার ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন ভার্চুয়ালি। কাছে-দূরে থাকা প্রিয়জন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী, সবাই মেসেঞ্জার, হোয়াটসএ্যাপ, ভাইভার, জুম মিটিংসহ বিভিন্ন এ্যাপে যুক্ত ছিলেন। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনার কারণে এবার জাতীয় ঈদগাঁহ, শোলাকিয়া ময়দানসহ বড় বড় ময়দানগুলোতে ঈদের জামাত হয়নি। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে ঈদের জামাত আদায়ের সুযোগ থাকলেও তা করতে হয়েছে প্রত্যেক মুসল্লিকে তিন ফুট দূরত্বে কাতারবন্দী হয়ে। সেজন্য অনেকে বাসা-বাড়িতেই ঈদের নামাজ আদায় করেছেন এবার।
×