ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় মৃত্যু থামবে জুলাইয়ে

পশ্চিমা দেশের চেয়ে এশিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার কম

প্রকাশিত: ২২:৪৫, ২১ মে ২০২০

পশ্চিমা দেশের চেয়ে এশিয়ায় আক্রান্ত ও মৃত্যুহার কম

রাজন ভট্টাচার্য ॥ বিশে^র ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯-এ এখন পর্যন্ত ৪৯ লাখ ১১ হাজারের বেশি আক্রান্ত। প্রতিদিন প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের চোখ রাঙানি যেন বেড়েইে চলছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কারে বিজ্ঞানীরা মরিয়া হলেও এখন পর্যন্ত আশার কোন আলো নেই। ফলে বাড়ছে দুনিয়াজুড়ে মৃত্যুর মিছিল। বুধবার বিকেল পর্যন্ত বিশ^জুড়ে করোনায় মৃত্যু দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ২৩ হাজারের বেশি। সুস্থ হয়েছেন প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। বুধবার দেশে সর্বোচ্চ আক্রান্ত এক হাজার ৬১৭ জন, মৃত্যু ১৬ জনের। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৭৩৭ জনে। মোট মৃত্যু ৩৮৬। প্রতিবেশী দেশ ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ সাড়ে ছয় হাজার, মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ৩০০’র বেশি মানুষের। দুর্বল স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও অতিরিক্ত জনবহুল হওয়া সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে মহামারী নোভেল করোনাভাইরাস সংক্রমিত কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুহার পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় কম। আমেরিকা, ফ্রান্স, ইতালিসহ অন্যান্য উন্নত দেশে যেভাবে অল্প সময়ের মধ্যে করোনা মহামারী ছড়িয়েছে এশিয়ার দেশগুলোতে তা এত দ্রুত ছড়াতে পারেনি। বৈশি^ক বিশ্লেষণ বলছে, মূলত দরিদ্র দেশগুলো ধনী দেশগুলোর চেয়ে করোনায় কম ক্ষতিগ্রস্ত। গবেষকরা বলছেন, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আক্রান্তের দিক থেকে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। এরপর আক্রান্তের দিক থেকে এগিয়ে পাকিস্তান, মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। এদিকে বিশ^ব্যাপী মৃত্যুহার কমতে থাকায় আগামী জুলাই মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুসংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে আসার আভাস দিয়েছেন গবেষকরা। চলমান করোনা মহামারীর আর আতঙ্কের মধ্যে সবচেয়ে আশার খবর। যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য ল্যানচেট মেডিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হচ্ছে, মে মাসের শুরু পর্যন্ত গোটা বিশ্বে যত মানুষ কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তাদের মধ্যে ৯০ শতাংশই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোতে। চীন, ব্রাজিল ও ইরানকে ধরলে তা ৯৬ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা সেন্টার থেকে দেয়া সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এর বিপরীতে দেখা যাচ্ছে যে, পশ্চিমা ধনী দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার অনেক জনবহুল দেশ এবং আফ্রিকার কিছু অংশের অনেক দরিদ্র দেশেও মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে কম। ইউরোপে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হওয়ার পর মৃত্যুহার (সিএফআর) সবচেয়ে বেশি। গড়ে প্রতি এক শ’ জনে ১৫ দশমিক ২ নিয়ে ফ্রান্সে তা সর্বোচ্চ। যথাক্রমে যুক্তরাজ্যে ১৪ দশমিক ৪, ইতালিতে ১৪, স্পেনে তা ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুহার ৬ শতাংশ। বিপরীতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো কোভিড-১৯ মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এই অঞ্চলে করোনায় মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি প্রতিবেশী ভারতে; ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া পাকিস্তানে ২ দশমিক ২, বাংলাদেশে ১ দশমিক ৫ এবং শ্রীলঙ্কায় কোভিড-১৯-এ মৃত্যুহার ১ শতাংশ। ল্যানচেটে প্রকাশিত নিবন্ধে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রিচার্ড ক্যাশ ও বিক্রম প্যাটেল লিখেছেন, ‘বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী পৃথিবীতে প্রথমবারের মতো কোন মহামারীতে পশ্চিমে ধনী দেশগুলোর তুলনায় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোতে মৃত্যুহার কম।’ বিষয়টা অনেকটা অবাক হওয়ার মতো। তারা বলছেন, ঐতিহাসিকভাবে পশ্চিমা এসব দেশ বাদে বিশ্বের বাকি দরিদ্র দেশগুলো মহামারী কিংবা অন্যান্যা রোগের আধারে যখন পরিণত হয় তখন পশ্চিমের দেশ ও ফাউন্ডেশনগুলো তাদের এর থেকে রক্ষায় নানা উপদেশ পরামর্শ ছাড়াও অর্থ সহযোগিতা করত। কিন্তু এবার সেই চিত্র ভিন্ন। জুলাইয়ে মৃত্যু থামবে ॥ বর্তমানে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে দৈনিক মৃত্যুহার যেভাবে কমছে তাতে করে আশা করা যায় আগামী মাস শেষে অর্থাৎ জুলাইয়ে করোনায় মৃত্যুহার শূন্যতে নেমে আসতে পারে। এমনটাই আশা করছেন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর এভিডেন্স-বেসড মেডিসিনের ডিরেক্টর অধ্যাপক কার্ল হেনেঘান। খবর ডেইলি মেইলের। যুক্তরাজ্যে বিগত কয়েক সপ্তাহে করোনায় দৈনিক মৃত্যুহারের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন আভাস দিয়েছেন এই অধ্যাপক। বর্তমানে যুক্তরাজ্যে করোনায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ হাজার ৩৪১ জন। যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের (ওএনএস) এক পরিসংখ্যান বলছে, মঙ্গলবার দেশটিতে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫৪৫ জন (দৈনিক ভিত্তিতে গত সপ্তাহের তুলনায় ১৩ শতাংশ কম)। তার আগের সপ্তাহে ১১ মে মারা যায় ৬২৭ জন। ৯ এপ্রিল এ সংখ্যা ছিল এক হাজার ১৫২ জন। অর্থাৎ আগের তুলনায় দেশটিতে দৈনিক মৃতের হার কমছে।
×