ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জ টঙ্গী ও নান্দাইলে সড়ক অবরোধ

বেতন বোনাস দাবিতে রাজধানীর চার গার্মেন্টসে বিক্ষোভ

প্রকাশিত: ২২:৪০, ২১ মে ২০২০

বেতন বোনাস দাবিতে রাজধানীর চার গার্মেন্টসে বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বকেয়া বেতন ভাতা, ওভারটাইম ও শতভাগ ঈদ বোনাসের দাবিতে ঢাকার মালিবাগ, কমলাপুর, গুলশান ও পোস্তাগোলা এলাকায় চারটি গার্মেন্টসের হাজার হাজার কর্মী রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সকাল ১০টা থেকে শুরু করে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিক্ষোভের ঘটনাগুলো ঘটে। তবে বিক্ষোভকারীরা কোন ভাংচুর বা অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায়নি। বুধবার সকাল ১০টার দিকে ড্রাগন স্যুয়েটার কারখানার প্রায় পাঁচ শ’ শ্রমিক মালিবাগ আবুল হোটেলসহ আশপাশের এলাকায় বিক্ষোভ করে। প্রথমে বিক্ষোভকারীরা মালিবাগ ডিআইটি রোডের ১৮ তলা ২৫/২ নম্বর ভবনে অবস্থিত গার্মেন্টস কারখানাটির সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তারা আশপাশের রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, গার্মেন্টসটির মালিক বিজিএমইএ-এর সাবেক সভাপতি মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ওরফে ওসি কুদ্দুসের। কোন প্রকার নোটিস ছাড়াই চলতি বছরের ২৮ মার্চ কারখানাটি বন্ধ করে দেয় কারাখানা কর্তৃপক্ষ। ততদিনে স্টাফদের কারও সাত থেকে দশ মাস পর্যন্ত বেতন বকেয়া পড়ে। আর শ্রমিকদের কারও কারও দুই থেকে তিন মাস বেতন বকেয়া পড়ে। ঈদের আগেই সমুদয় টাকা পরিশোধ করতে দফায় দফায় সময় নিয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করেনি। এতে করে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন। ৩৫ বছরের পুরনো কারখানাটি বিনা নোটিসে কুমিল্লায় স্থানান্তর করা হচ্ছে। অথচ শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের কোন টাকা দেয়া হয়নি। সব নিয়ম মেনে কারখানা যেথা ইচ্ছা সেথা নিয়ে গেলে, তাদের কোন আপত্তি নেই। তবে তার আগে তাদের সমুদয় টাকা দিতে হবে। অন্যথায় তারা আরও বড় ধরনের আন্দোলন করার ঘোষণা দিয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের হাতিরঝিল থানার এসআই অমিত মিত্র ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জনকণ্ঠকে জানান, ড্রাগন স্যুয়েটার কোম্পানির শত শত শ্রমিক বকেয়া বেতন, ওভারটাইম ও ঈদ বোনাসের টাকার জন্য সকাল থেকেই রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছিল। দুপুর ২টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। পুলিশের মধ্যস্থতায় তারা চলে গেলেও আরও বড় আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে গেছে বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া বুধবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকার কমলাপুর এলাকায় সেখানকার বিন্নি নামের একটি গার্মেন্টসের শতাধিক শ্রমিক রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। তাদের দাবি, বিকাশে বেতন-ভাতা ও বোনাস দেয়ার কথা থাকলেও তা দেয়নি। শেষ পর্যন্ত পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় দুপুর ১২টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বুধবারের মধ্যেই টাকা দেয়ার আশ্বাসে বিক্ষোভকারীরা চলে যায়। বিক্ষোভকারীদের কারও দুই মাস আবার কারও এক মাসের বেতন বকেয়া আছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও তারা জরুরী ত্রাণ পায়নি বলে দাবি করেছে। মতিঝিল থানার পরিদর্শক তদন্ত মনির হোসেন জানান, গার্মেন্টসটির মালিককে ডেকে আনা হয়েছিল। বুধবারের মধ্যেই বিকাশের মাধ্যমে সমুদয় টাকা পরিশোধ করার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। এরপর শ্রমিকরা রাস্তা ছেড়ে দিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। এর আগে গত ১৬ এপ্রিল একই দাবিতে গার্মেন্টসটি কর্মীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিল। তখনও মালিকপক্ষ টাকা দিয়ে দিবে বলে আশ্বাস দিয়েছিল। এদিকে বুধবার রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-১ নম্বর মোড়ে শমসের এ্যাপারেলস নামের একটি কারখানার তিন শতাধিক শ্রমিক সকাল ১০টার দিকে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। গুলশান মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম জানান, বকেয়া বেতন ও শতভাগ ঈদ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। পরে মালিকপক্ষের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শ্রমিকরা আধ ঘণ্টা পরেই রাস্তা ছেড়ে চলে যান। এদিকে বুধবার ভোর থেকেই শ্যামপুরের পোস্তাগোলা এলাকার সিভিক এ্যাপারেলস নামের একটি কারখানা ও আলম মার্কেটের সাত থেকে আট শ’ পোশাক শ্রমিক বকেয়া বেতন, ওভারটাইম ও শতভাগ ঈদ বোনাসের দাবিতে পোস্তাগোলা সেতু ও মূল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এতে করে ওই রাস্তায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শত শত পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ে। শ্যামপুর থানার ওসি মজিবুল আলম জানান, এ বিষয়ে গার্মেন্টসটির মালিক পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। ঈদের বেতন আগামী মাসের ৫ তারিখের মধ্যে বিকাশ বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়ার আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শ্রমিকরা শান্ত হন। এরপর দুপুর ১টার দিকে বিক্ষোভকারীরা চলে যান। গত প্রায় ১৫ দিন করে গাজীপুর, ঢাকা, সাভার, আশুলিয়া, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বকেয়া বেতন, ভাতা, ওভারটাইম ও ঈদ বোনাসের দাবিতে বিচ্ছিন্নভাবে বিক্ষোভ করে যাচ্ছে পোশাক শ্রমিকরা।নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জে দুটি রফতানিমুখী পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন ও শতভাগ ঈদ বোনাসের দাবিতে বুধবার সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। ফতুল্লায় পোস্ট অফিস এলাকার হামিদ ফ্যাশন লিঃ নামের কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন ও শতভাগ ঈদ বোনাসের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কের পোস্ট অফিস মোড়ে এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করে শ্রমিকরা। অপরদিকে সিদ্ধিরগঞ্জের সুমিলপাড়া এলাকার ওয়েস্ট নীটওয়্যার লিঃ কারখানার শ্রমিকরা চলতি মাসের বেতন ও শতভাগ বোনাসের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। এছাড়া বুধবার দুুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ-আদমজী-ডেমরা সড়ক অবরোধ করে তারা বিক্ষোভ করে। শ্রমিকরা জানান, হামিদ ফ্যাশনের শ্রমিকদের এপ্রিল-মে মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস বকেয়া রয়েছে। মালিক কর্তৃপক্ষ এক মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস ৬০ শতাংশ দেয়ার জন্য শ্রমিকদের প্রস্তাব দেয় কিন্তু শ্রমিকদের দাবি তারা দুই মাস কাজ করেছে তাদের দুইমাসের বকেয়া বেতন ও শতভাগ ঈদ বোনাস পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু মালিকপক্ষ তা দিতে রাজি না হওয়ায় শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জের ওয়েস্ট নীটওয়্যার লিঃ কারখানার শ্রমিকরা চলতি মাসের বেতন ও শতভাগ ঈদ বোনাসের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মানার আশ্বাস দিয়েছেন। পরে শ্রমিকরা ফিরে গেছেন। নিজস্ব সংবাদদাতা, টঙ্গী থেকে জানান, ঈদের আগে বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে বুধবার টঙ্গীতে ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে গার্মেন্টস শ্রমিকরা। অবরোধের কারণে টঙ্গী-গাজীপুর মহাসড়কে ৪ ঘণ্টা সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। এ সময় পণ্যবাহী শত শত যানবাহন রাস্তার দুদিকে আটকা পড়ে? টঙ্গী পূর্ব-পশ্চিম থানার ওসি এমদাদুল হক ও আমিনুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, টঙ্গীর ক্লাসিক ফ্যাশন কনসেপ্ট কারখানার শ্রমিকরা তাদের বেতন-বোনাস পরিশোধের দাবিতে কারখানার কাজকর্ম ছেড়ে মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে আসে। সংবাদদাতা, নান্দাইল, ময়মনসিংহ থেকে জানান, উপজেলার বাঁশহাটি এলাকায় টার্গেট ফাইন গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। বুধবার দুপুর ২টার দিকে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে তারা ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এ সময় সড়কের দুই পাশের দূরপাল্লার শতশত পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ে। জানা গেছে, চন্ডীপাশা ইউনিয়নে অবস্থিত বাঁশহাটি টার্গেট ফাইন গার্মেন্টসের নিটিং শাখার ৪ শতাধিক শ্রমিক বেতন-বোনাস না পেয়ে বুধবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গার্মেন্টের সামনে অবরোধ করেছে। কিন্তু মালিক পক্ষের কোন সারা না পেয়ে তারা তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের চৌরাস্তা এলাকায় এসে রাস্তা অবরোধ ও বিক্ষোভ শুরু করে। এ সময় মহাসড়কের দুই পাশে পণ্যবাহী ও ছোট ছোট যানবাহনের জট সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশের আশ^াসে অবরোধ তুলে নেয়।
×