ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্রুট ব্যাগিং করেও দুশ্চিন্তায় চাষী

রাজশাহীর আম রফতানি অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ২২:৩২, ১৮ মে ২০২০

রাজশাহীর আম রফতানি অনিশ্চিত

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর আম এবারো রফতানি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। নিরাপদ, বালাইমুক্ত আম উৎপাদন করেও গেল বছর বিদেশে রফতানি করতে পারেননি রাজশাহীর বেশিরভাগ চাষী। কোয়ারেন্টাইন পরীক্ষার কড়াকড়িতে তার আগের বছর আম পাঠানো সম্ভব হয়েছিল খুব সামান্যই। বিদেশের বাজার ধরতে চলতি বছরেও অনেক চাষী ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম উৎপাদন করছেন। তবে এবার করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত হয়ে দেখা দিয়েছে বিদেশে আম পাঠানো। রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, এবার বিমান বন্ধ। আম রফতানির কী যে হবে তা বুঝতে পারছি না! বিদেশে আম রফতানি করতে চান, এমন কোন ব্যবসায়ী এ পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তবে আমরা আমাদের প্রস্তুতি রাখছি। কয়েকজন চাষী উন্নত প্রযুক্তিতে আম উৎপাদন করছেন। পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তা আর ক’দিন পর বোঝা যাবে। বিদেশে রফতানির জন্য জেলায় এবার এক লাখ ১৫ হাজার আম ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া এলাকায় শফিকুল ইসলাম সানা নামের এক চাষী ১০ হাজার আমে ব্যাগিং করেছেন। পবার হরিপুর, কসবা এবং রাজশাহী মহানগরীর জিন্নানগরেও কিছু আম ব্যাগিং করা হয়েছে। কিন্তু চাষীরা রয়েছেন অনিশ্চয়তায়। তাই অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বেশি পরিমাণ আমে ব্যাগিং করার সাহস পাচ্ছেন না তারা। নগরীর জিন্নানগরে ১০ হাজার খিরসাপাত ও ল্যাংড়া আমে ব্যাগিং করেছেন রাজশাহী এগ্রো ফুড প্রডিউসার সোসাইটির আহ্বায়ক আনোয়ারুল হক। তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত রফতানিকারক কোন প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তারপরেও উন্নত প্রযুক্তিতে নিরাপদ ও বালাইমুক্ত কিছু আম উৎপাদন করছি। বিদেশে পাঠাতে না পারলেও দেশেই যদি ঠিকমতো আম বাজারজাত করা যায় তাহলে হয়ত লোকসান হবে না। সে আশাতেই করছি। জানি না কী হবে! গত বছর ৪০ হাজার আমে ব্যাগিং করেছিলেন আনোয়ারুল হক। বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার কানবার হোসেন বর আনোয়ারুলের বাগানে যান। নিজ হাতে আম পেড়ে খান। বলেছিলেন, রাজশাহীর আম খুব সুস্বাদু। স্বাস্থ্যসম্মত। কিন্তু আনোয়ারুল বিদেশে আম পাঠাতে পারেননি। বাধ্য হয়ে দেশের বাজারেই ব্যাগিং করা ৪০ হাজার আম ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন তিনি। আনোয়ারুল বলেন, সর্বশেষ ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ঠিকঠাক মতো আম ইউরোপের বাজারে পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে ঢাকায় প্ল্যান কোয়ারেন্টাইন উইং সেন্ট্রাল প্যাকিং হাউসে কোয়ারেন্টাইনের নামে খুব কড়াকড়ি শুরু হয়। সামান্য দাগ থাকলেই আম বাদ দেয়া শুরু হয়। ফলে তারা আম পাঠাতে পারেননি। এবারও করোনার কারণে হয়ত পারবেন না। এ নিয়ে আশা জাগাতেও পারেনি কৃষি বিভাগও। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, গতবার তো ৩৬ মেট্রিক টন আম পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। এবার কি হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে চাষীরা ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ করছেন। আম নামানোর দুই মাসে আমে ব্যাগ পরাতে হয়। এক মাস আগে কিছু খিরসাপাতে ব্যাগিং করা হয়েছে। কিছু দিন পর ল্যাংড়া, ফজলি ও আশ্বিনায় ব্যাগিং করা হবে। রাজশাহী জেলায় আম বাগান রয়েছে ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। অপরিপক্ব আম নামানো ঠেকাতে গেল কয়েক বছরের মতো এবারও আম নামানোর সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী শুক্রবার (১৫ মে) থেকে সব ধরনের গুটি আম নামানোর সময় শুরু হয়েছে। কিন্তু চাষীদের গাছে এবার আম পাকেনি। কেবল আঁটি এসেছে। আরও অন্তত দুই সপ্তাহ লাগবে পরিপক্ব হতে। তাই এখনই আম ভাঙ্গছেন না রাজশাহীর চাষীরা। তাই এখন স্থানীয় বাজারেও নেই আম।
×