ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আমদানিকারকদের শত কোটি টাকার পণ্য বন্দরে আটকা

প্রকাশিত: ০৯:১৩, ২৪ এপ্রিল ২০২০

আমদানিকারকদের শত কোটি টাকার পণ্য বন্দরে আটকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনা পরিস্থিতিতে দেশের শিল্প কারখানাকে টিকিয়ে রাখতে এ খাতে বিপুল অঙ্কের প্রণোদনা দেয়া হলেও বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের স্বার্থ সুরক্ষায় কোন উদ্যোগ নেই। উপরন্তু বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের আমদানিকৃত পণ্য খালাসে এনবিআরের সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় বন্দরে তাদের শত শত কোটি টাকার পণ্য আটকা পড়েছে। এতে একদিকে যেমন বন্দরে কন্টেনার জট বৃদ্ধি পাচ্ছে; অন্যদিকে বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের আমদানিকৃত পণ্যভর্তি কন্টেনারগুলোর ওপর প্রতিদিন বন্দর, শিপিং ও বেসরকারী ডিপো চার্জ বাড়ছে। এতে তাদের বিনিয়োগ (পুঁজি) ধ্বংস হচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলমান থাকলে তারা পণ্য আমদানির সক্ষমতা হারিয়ে ব্যাংক ঋণে জর্জরিত হবেন। এমনকি তাদের অনেকের পথে বসারও ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে। অথচ এ খাতের সঙ্গে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সম্পৃক্ততা রয়েছে। পাশাপাশি বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের আমদানিকৃত পণ্যের একটি বড় অংশ শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে তারা নিঃস্ব হয়ে পথে বসলে শিল্প ক্ষেত্রে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এছাড়া বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের কাছ থেকে প্রতি বছর পাওয়া শত শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে সরকার বঞ্চিত হবে। বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের আমদানিকৃত পণ্যভর্তি কন্টেনারগুলো খালাসে এনবিআরের সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় তাদের শত শত কোটি টাকার পণ্য বন্দরে আটকা আছে। এরই মধ্যে গত ২৪ মার্চ এনবিআরের অফিস আদেশে (আদেশ নং ০৮.০১.০০০০.০১১.০৯.০১৮.১৯-১৭৯) সাধারণ ছুটি চলাকালীন সময়ে আমদানিকৃত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, জরুরী চিকিৎসা, অন্যান্য সেবা সামগ্রী শুল্কায়নসহ খালাস প্রদান এবং রফতানি ও ইপিজেডের পণ্য চালান শুল্কায়ন ও খালাস কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করে। পরবর্তীতে এনবিআরের নতুন অফিস আদেশ (১৭(০৩) শূ:নী: ও বা:/২০১৩/১৩৮ তাং ৩০.০৩.২০২) এর মাধ্যমে নতুন পণ্য সংযুক্ত করা হয়। এগুলো হলো- শিল্পের কাঁচামাল ও সরকারী/বেসরকারী/স্বায়ত্তশাসিত আমদানি পণ্য। তবে কমিশনার অব কাস্টমস, চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক আমদানিকারক কর্তৃক আমদানিকৃত পণ্য শুল্কায়নসহ খালাস বন্ধ রাখে। পরবর্তীতে এনবিআরের নতুন অফিস আদেশে (১৭(০৩) শূ:নী: ও বা:/২০১৩/১৪০ তাং ০৭.০৪.২০২০ তারিখে- এর মাধ্যমে বেসরকারী আমদানি কথাটি বাদ দিয়ে আধাসরকারী সংযুক্ত করে নতুন পণ্য যেমন মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, কৃষি যন্ত্রপাতি ও উপকরণ, পোল্ট্রি/ডেইরি/মৎস্য শিল্পের খাদ্য ও উপকরণ এবং কূটনৈতিক সুবিধায় আমদানিকৃত পণ্য সংযুক্ত করে তা শুল্কায়নসহ খালাস করার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের আমদানিকৃত পণ্য শুল্কায়নসহ খালাস করার ব্যাপারে কোন সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পরিচালকের (ট্রাফিক) দফতর কর্তৃক জারিকৃত বিজ্ঞপ্তির (০৫/২০২০ তারিখ ০৫.০৪.২০২০) মাধ্যমে জানানো হয়েছে, সরকার কর্তৃক ঘোষিত ছুটি চলাকালীন সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে যেসব কন্টেনার জাহাজ আগমন করেছে/করবে, সেসব জাহাজের মাধ্যমে পরিবাহিত কন্টেনার কেবলমাত্র ছুটিকালীন সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাস করা হলে তার বিপরীতে প্রদত্ত/প্রদেয় বন্দরের স্টোর রেন্ট সম্পূর্ণ (১০০%) মওকুফ/ছাড়যোগ্য হবে। অথচ এনবিআরের নতুন অফিস আদেশের কারণে বাণিজ্যিক আমদানিকারদের আমদানিকৃত কন্টেনারগুলোর পণ্য কমিশনার অব কাস্টম, চট্টগ্রাম শুল্কায়নসহ খালাস করছে না। এতে যেমন বন্দরে কন্টেনার জট বাড়ছে, তেমনি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদানকৃত ছাড় থেকে বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা মওকুফ পাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্টরা জানান, তাদের আমদানিকৃত অনেক পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য এরই মধ্যে অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে তাদের বিশাল অংকের পুঁজি গচ্চা যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে তারা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে এ ট্রেডের সঙ্গে জড়িত বিপুলসংখ্যক মানুষ চাকরি হারাবে। তাদের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান (যাদের নিজেদের আমদানির আইআরসি নেই); যারা আমদানিকারক থেকে পণ্য কিংবা ক্ষুদ্র শিল্পের উপকরণ সংগ্রহ করে উৎপাদন পরিচালনা করে থাকে তাদের শিল্প কারখানা বন্ধ হবে। এতে বাজারে পণ্য ঘাটতি দেখা দেবে, পণ্যের দাম বাড়বে এবং জনগণের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস পাবে। প্রসঙ্গত, এ সব আশঙ্কা বিবেচনা করে এরই মধ্যে প্রতিবেশী ভারত সরকার ও তাদের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বন্দর, শিপিং ও বেসরকারী ডিপো চার্জ মওকুফ করে প্রজ্ঞাপন জারি তাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি থেকে মুক্তি দিয়েছে। বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানিয়েছেন, বৈশ্বিক মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনায় যেসব জাহাজ সারা দেশে অঘোষিত লকডাউনের সময় এবং এর স্বল্প সময় আগে বন্দরে ভিড়েছে কিংবা পণ্য আনলোড করেছে ওইসব পণ্যের পোর্ট চার্জ, বেসরকারী ডিপো চার্জ ও শিপিং চার্জ মওকুফ করে বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের এই মহাসঙ্কট থেকে উদ্ধার করা হয়। এতে তারাও যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে তারা জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবেন।
×