ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নান্দাইলে আওয়ামী লীগ নেতাসহ পরিবারে ১১ উপকারভোগী!

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ২০ এপ্রিল ২০২০

 নান্দাইলে আওয়ামী লীগ  নেতাসহ পরিবারে ১১ উপকারভোগী!

সংবাদদাতা, নান্দাইল, ১৯ এপ্রিল ॥ নান্দাইলে আওয়ামী লীগের এক নেতার দুই স্ত্রী, পুত্র, শ্বশুর ও ভাইসহ ১১ নিকট আত্মীয়ের উপকারভোগীর তালিকায় নাম রয়েছে। এরা সবাই ১০ টাকা কেজি দরের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ৩০ কেজি করে চাল ক্রয় করেছেন। অথচ নেতার বাড়ির আশপাশে খেয়ে না খেয়ে আছেন অনেক হতদরিদ্র। এ নিয়ে এলাকায় চলছে নানা গুঞ্জন। জানা গেছে, ওই নেতার নাম সাইদুল ইসলাম (৪৫)। তিনি গাঙ্গাইল ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। তিনি তালজাঙ্গা গ্রামের আব্দুল আজিজের পুত্র। হতদরিদ্রদের তালিকা করার সময় দলীয় লোক হিসেবে ওই নেতা দায়িত্বে ছিলেন। তাই তিনি তার পরিবারের নাম দিতে ভোলেননি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাঙ্গাইল ইউনিয়নে চারজন ডিলারের মাধ্যমে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর তালিকাভুক্তদের চাল বিতরণ করা হয়। ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বাংলাবাজারে অবস্থিত ডিলার ইকবাল হোসেনের দোকান থেকে চাল ক্রয় করেন। ওই ডিলারের দোকানে গিয়ে উপকারভোগীদের নামের তালিকা ঘেঁটে দেখা যায়, ১১০৭ নাম্বার কার্ডটি নেতা সাইদুল ইসলাম নিজেরই। ১০৮২ তার প্রথম স্ত্রী পারভীন আক্তারের। ১১৩১ দ্বিতীয় স্ত্রী সাজেদা আক্তারের। ১০৮৩ নেতার পুত্র জাকারিয়ার। জাকারিয়া স্থানীয় একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দফতরি পদে চাকরি করেন। ১০৮৪ নেতার শ্বশুর আব্দুল কাদিরের। ১০৭৮ নেতার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ার নামে। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকরিজীবীর স্ত্রী। ১০৯৫ নেতার ভাইয়ের নামে। এছাড়া নেতার ভাতিজা ও ভাইয়ের স্ত্রীর নামে উপকারভোগী কার্ড রয়েছে বলে গ্রামের লোকজন সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাইদুল ইসলাম বলেন, কার্ডগুলো উদ্বৃত্ত হয়েছিল। পরে এগুলো ফেরত যাচ্ছে দেখে তার কিছু দরিদ্র আত্মীয়ের নামে করে দেন। তাছাড়া আমিও তো গরিব মানুষ। জমিজমা কিছুই নেই। যা আছে তা দিয়ে কোনমতে চলি। গ্রামে আরও হতদরিদ্র মানুষ রয়েছে। তাদের দেননি কেন-প্রশ্ন করা হলে সাইদুল ইসলাম বলেন, ওই সময় তাদের ভোটার আইডি কার্ড আমার কাছে ছিল না। গাঙ্গাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আতাউল করিম বাবুল বলেন, হতদরিদ্রদের বাদ দিয়ে দলের একজন সচ্ছল নেতার পরিবারের নিজেদের নামে চাল ক্রয়ের কার্ড থাকা মানে সোজা অনিয়ম। এ বিষয়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী পরিচালনা কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুর রহিম সুজন বলেন, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীতে কিছু কিছু এলাকায় অসঙ্গতির কথা শোনা যাচ্ছে। এই দিকটা বিবেচনা করে সব ইউনিয়নে নতুন করে তালিকা তৈরি করা হবে। টাঙ্গাইলে এক পরিবারেই যাচ্ছে ৯০ কেজি নিজস্ব সংবাদদাতা টাঙ্গাইল থেকে জানান, সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নে রাফিজুল ইসলামের নামে দুইটি কার্ড। তার স্ত্রী বোনোয়ারা বেগমের নামেও আরেকটি কার্ড। এভাবে একই পরিবারের দুইজনের নামে তিনটি কার্ড দিয়ে ১০ টাকা কেজি দরে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে মোট ৯০ কেজি চাল তুলছেন। অভিযোগটি করেন সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান। মূল তালিকা দেখে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। দেলধা গ্রামের রাফিজুলের সিরিয়াল ১০৪১ ও ১০৯৬। তার স্ত্রীর ১১১১। একই ধরনের অভিযোগ রাঙ্গাচিড়া গ্রামের আবদুস সবুরের স্ত্রী বেনু বেওয়ার বিরুদ্ধে। তার নামেও রয়েছে দুইটি কার্ড। সিরিয়াল ৬১৪ ও ৬৯৭। জানা যায়, রাঙ্গাচিড়া গ্রামের আব্দুস সবুর খলিফা মারা গেছেন অনেকদিন আগে। তার নামেও কার্ড আছে (ক্রমিক নং ৭০০)। একইভাবে হাতেম আলী (১৪২), মোহাম্মদ (২৭৮) ও দুলাল হোসেন (৪৫৯)। এরা তিনজন চরপৌলি গ্রামের। তারা মারা গেছেন। এরপরও তাদের নামে তোলা হচ্ছে ১০ টাকা কেজি দরের চাল। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়নে এভাবেই চলছে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণ। দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অন্যতম এলাকায় পরিণত হয়েছে এই ইউনিয়ন। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সোলায়মান মন্ডলের নিজের নামে কার্ড নেই। তবে তার ছেলের নামে কার্ড রয়েছে। লিটন মন্ডল (৬৮৪), ছেলের বউ সালমা (৬৯২), ভাইয়ের নামে বাদশা মন্ডল (৭৩৩), ভাইয়ের বউ বাহারুন বেগম (৭২৮), ভাইয়ের ছেলে আব্দুল বাছেদ (৭৩১), তার স্ত্রী চামেলী বেগম (৭৩২) এর নামেও রয়েছে কার্ড। এছাড়া তার মেয়ের জামাতার নামেও কার্ড তৈরি করা হয়েছে। ৪, ৫, ৬ সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য পারুলের সতীন সখিনা বেগমের (৭৬৮) নামে, শাশুড়ি হাজেরা বেগমের নামেও (৭২৫) কার্ড রয়েছে। বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির মালিক হয়েও পানাকুড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামেরও (৮৬৭) রয়েছে ১০ টাকা কেজি দরে চাল কেনার কার্ড। জহুরুল ইসলাম জানান, তিনি কার্ডের মাধ্যমে যে চাল কিনেন। তা তার বাড়ির কবুতরের খাওয়ার জন্য। যেখানে অনেক মানুষ খাওয়ার জন্য এই চাল কেনেন সেখানে কবুতরকে এসব চাল খাওয়ানোর যৌক্তিকতা কতটুকু। চরপৌলী গ্রামের সিরাজুল ইসলাম (৪৪৬) ও নুরতাজ (৫৮৭)। তারা দু’জনে স্বামী-স্ত্রী। তারা দুজনেই কার্ড পেয়েছেন এবং তারা প্রতিমাসে ৬০ কেজি করে চাল কিনছেন। কাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ জানান, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। এ কারণে পুরাতন সব কার্ড জমা নিয়ে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে এই ধরনের কার্ড বাতিল করে নতুন করে কার্ড দেয়া হবে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতিকুল ইসলাম জানান, একই ব্যক্তি বা একটি বাড়িতে দুইটি কার্ড থাকতে পারে না। পুরাতন সব কার্ড যাচাই-বাছাই করে নতুন করে কার্ড দেয়া হবে। এভাবে কেউ অনিয়ম করলে ছাড় দেয়া হবে না।
×