ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

করোনায় ঢাকাবাসী কতটা সতর্ক?

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ২৮ মার্চ ২০২০

 করোনায় ঢাকাবাসী  কতটা সতর্ক?

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমানে সারা বিশ্বে আতঙ্কের নাম করোনাভাইরাস। বিশ্বের ১৯২টি দেশে এখন পর্যন্ত বিস্তার লাভ করেছে এই ভাইরাসটি। করোনা সংক্রমণ থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। দেশে এ ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত হয় গত ৮ মার্চ। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ-নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য মতে দেশে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪ জন। মারা গেছেন ৫ জন। সরকারের পক্ষ থেকে বার বার সবাইকে বাসায় অবস্থান করার কথা বললেও অনেকেই তা মানছিলেন না। কিন্তু দেশে করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যুর খবরের পর নিজেদের অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছেন ঢাকাবাসী। শুক্রবার থেকে তার প্রভাব পড়েছে নগরীর শপিংমল, বাজার ও রাস্তায়। অনেকেই প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ ঘরে খাবার মজুদ করছেন, আবার কেউ পাড়ি দিয়েছেন গ্রামে। বর্তমানে ঢাকার রাস্তায় যানবাহনের চাপ নেই বললেই চলে। প্রয়োজন ছাড়া কাউকে বাইরেও তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। নিতান্তই যারা বের হচ্ছেন, তারা জীবিকার তাগিদে। এদিকে যারা রাজধানীতে নিজ উদ্যোগে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন তারা বলছেন, ভুক্তভোগী না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোন কিছু বিশ্বাস করতে চাই না। তাই সরকার আগে থেকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বললেও সেটি কেউ মাথায় নেয়নি। রাজধানীর হাতিরপুলের বাসিন্দা জান্নাতুল ফেরদৌসি বলেন, কে কী বলল, আমরা তা বিশ্বাস করতে বা মানতে চাই না। যখন করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যু হলো, তখন সবার নজরে এলো বিষয়টি। কোন উপসর্গ দেখা দিলে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই সবাইকে নিজ উদ্যোগে বাসায় থাকা উচিত। কারণ, সরকার তো একা সব করতে পারবে না। আমাদেরও সহায়তা করা দরকার। মিরপুর ডিওএইচএসের বাসিন্দা তানিয়া আফরোজ বলেন, একজন মারা যাওয়ার পর আমরা বাসা থেকে বের না হওয়ার বিষয়টি সিরিয়াসলি নিয়েছি। এখন সবাই সতর্ক। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া আমরা কেউ বাইরে যাচ্ছি না। ভাইরাসে একজনের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষ বিষয়টাকে গভীরভাবে নিতে পারেনি কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ সালাহ্উদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, অপ্রত্যাশিত যে কোন ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই মানুষ সেটা মেনে নিতে পারে না। একটু সময় নেয়। এই বিষয়টিকে ডিনায়াল বলে। এই টাইমটি হলো ডিনায়াল পিরিয়ড। একেক ঘটনায় এই সময় একেক রকম হয়। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টিও তারা প্রথমে মেনে নিতে পারেনি। একটা গা-ছাড়া ভাব নিয়ে চলেছে। কিন্তু একজনের মৃত্যুর খবরের পরই তারা সতর্ক হয়ে গেছে। এটাই স্বাভাবিক। রাজধানীর মোহাম্মাদপুর, ধানম-ি, নিউমার্কেট, শাহবাগ, কাওরানবাজার ও পান্থপথ সিগন্যাল ঘুরে ও গুগল ম্যাপের তথ্য মতে রাজধানীতে কোথাও এখন আর কোন জ্যামের খবর পাওয়া যায় না। রাস্তায় যান চলাচল খুবই সীমিত। কোন সিগন্যালে গাড়ির জটলাও দেখা যায় না। কাওরানবাজার পুলিশ বক্সে কথা হয় এএসআই মোস্তাকিম সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে মানুষ বাসায় অবস্থান করছেন। রাস্তায় পরিবহন না থাকায় তেমন চাপ নেই। চাপ না থাকলেও তো আমরা দায়িত্বে অবহেলা করতে পারি না। তাই পরিবারকে ঘরে রেখে আমরা এখনও রাস্তায় আছি। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। আর মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব ও সতর্কতা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসনকে সহায়তা করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়োজিত রয়েছে।
×