ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রিসভার বৈঠক

করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা

প্রকাশিত: ১১:২৮, ১৭ মার্চ ২০২০

করোনা মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রোধে দেশী-বিদেশীদের সঙ্গে সাক্ষাত সীমিত করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বড় ধরনের জনসংযোগ, মিটিং বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। একই সঙ্গে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধেরও নির্দেশ দেন তিনি। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভা বৈঠকের শুরুতেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। এই আলোচনায় অংশ নেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও। বৈঠকে জানানো হয়, ইতালিতে রবিবার ব্যাপক সংখ্যক লোক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। স্পেনের অবস্থাও ভয়াবহ। এসব অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারী আমলা ও মন্ত্রীদের বিদেশীদের সঙ্গে সাক্ষাত সীমিত করার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সাক্ষাত সীমিত করতে হবে। সাক্ষাত অত্যাবশ্যকীয় হলে পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। সরকারী অফিসে বৈঠকসহ সব কাজকর্ম সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। নিজেকে যেমন রক্ষা করতে হবে। তেমনি এর বিস্তার যাতে রোধ করা যায় সে ভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে কাউকে দেখতে না গেলে ভাল। কেউ দেখতে গেলেও নিরাপদ দূরত্বে থেকে সতর্কতা অবলম্বন করে দেখতে হবে। সবাইকে ব্যক্তি পর্যায়ে এবং পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে সতর্ক থাকতে হবে। এই পরিস্থিতিতে বড় ধরনের কোন মিটিং বা সমাবেশ বা সামাজিক অনুষ্ঠান করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন এবং ১৪ মার্চ আরও দু’জন রোগী পাওয়া যায়। প্রথম তিনজনের মধ্যে দু’জন বিদেশ থেকে আসায় তৃতীয় আরেক জনের শরীরে করোনা ছড়ায়। আর পরের দুজনের একজন ইতালি ও অপরজন জার্মানি থেকে দেশে ফিরেছিলেন। সোমবার নতুন করে আরও তিনজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ দেখা দেয়ার কথা জানায় আইইডিসিআর, যাদের মধ্যে দু’জনই শিশু এবং একজন নারী। দেশে আটজনের শরীরে সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়া শুরু করেছে। সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, অভিভাবকেরা নিশ্চিত করবে যে তাদের ছেলেমেয়েরা একা বাইরে ঘুরে না বেড়ায়। তাদের ছুটি দেয়াই হচ্ছে সেফটির জন্য। বাইরে ঘোরাফেরা করলে তদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে। একা একা যেন বাইরে না যায়, অভিভাবকদের সঙ্গে যেতে পারে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যদিও সংক্রমণের ঘটনা অত্যন্ত কম, তবুও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের সব পর্যায়ে, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে, মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সব কোচিং সেন্টারও এই সময় বন্ধ রাখা হবে বলে জানান তিনি। দীপু মনি বলেন, অভিভাবকরা উদ্বেগ জানিয়েছিলেন, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের কেউ কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বাড়িতে থাকার নির্দেশনার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানাব, (স্কুল ছুটির সময়) শিক্ষার্থীদের অবশ্যই বাড়িতে থাকা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ তার মানে এই নয় সর্বত্র তারা ঘুরে বেড়াবে, বেড়াতে যাবে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে যাতে সংক্রমণ না হয়। কাজেই সেটি মাথায় রেখে অভিভাবকরা যেন নিশ্চিত করেন শিক্ষার্থীরা যার যারা বাড়িতে থাকবে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার যে নির্দেশ রয়েছে তা প্রতিপালন করি।
×