ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বসন্তের সাজ পোশাক

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বসন্তের সাজ পোশাক

ফাল্গুনের সতেজতার কথা মনে এলেই এক ধরনের প্রশান্তি বিরাজ করে। শীতের ঝরাপাতাগুলোর মর্মর শব্দ ছাপিয়ে বৃক্ষপল্লবে নতুন পাতা উঁকি দেয়ার দৃশ্য; সত্যি অন্য সব দৃশ্যকে যেন হার মানায়। সেই সঙ্গে সোনাভরা রোদের ঝিলিক যদি আছড়ে পড়ে, তা হলে তো কথাই নেই। দূর থেকে প্রতিটি গাছকে মণিমুক্তার ভান্ডার মনে হয়। প্রকৃতির এ অপরূপ লীলা বুঝি বসন্তেই সম্ভব। পাখির কলতান, ফুলের সমাহার মনকে আন্দোলিত করে তোলে। প্রকৃতি স্বরূপে বিকশিত হয়ে জানান দেয়, সময় এখন ঋতুরাজ বসন্তের। বসন্তের এই দোলা যেন উৎসবের আমেজকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। এক মন উতলা করা আবহ সৃষ্টি করে চারদিকে। এ ঋতুর রূপময় বৈচিত্র্যে মনের আকাশও যেন রঙিন হয়ে ওঠে। বসন্ত ঋতুকে আরও বর্ণিল করে তোলে বাঙালীর বিভিন্ন উৎসব-পার্বন। চারদিক যেন উৎসবে মুখরিত হয়ে থাকে, আর এ উৎসবে প্রাণের আবেগে ছুটে চলে সবাই। এর সঙ্গে তাল মেলাতে আর একটি বিষয় বেশ নজর কাড়ে, তা হচ্ছে পোশাক। অর্থাৎ উৎসবের আমেজের পাশাপাশি পোশাকও এমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অধিকাংশ মানুষ এখন উৎসবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পোশাক নির্বাচন করে থাকে। এতেই বোঝা যায়, বাংলাদেশের ফ্যাশন ট্রেন্ডের মাত্রাটা কতখানি। দিন দিন বাড়ছে ফ্যাশনসচেতন মানুষের সংখ্যা। ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নেয়া বাঙালীর আদি ঐতিহ্য। সম্প্রতি এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রংভিত্তিক পোশাকের ব্যবহার। পহেলা ফাল্গুনের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করতেই চলে ব্যাপক আয়োজন। এ যেন মনের বসন্তকে চিরজাগ্রত করার একটি প্রয়াস। গ্লোবালাইজেশনের যুগে যতই দিন গড়াচ্ছে ততই ব্যস্ত হয়ে পড়ছে মানুষ। তা সত্ত্বেও বাঙালী তাদের নিজস্ব উৎসবগুলো উদ্যাপন করতে ভুলে না। ঠিক তেমনি পহেলা ফাল্গুন নিয়ে বাঙালীদের উৎসাহ-উদ্দীপনার কোন কমতি নেই। বারো মাসে তেরো পার্বনÑ কথাটির যথার্থতা রাখতেই বুঝি পহেলা ফাল্গুন উৎসবের আবির্ভাব। একটা সময় ছিল ফাল্গুনী মেলায় দলবেঁধে পরিবারের সবাই বেড়াতে যেত। তখন অবশ্য নির্দিষ্ট কোন রং-ডিজাইনের বালাই ছিল না। বর্তমানে এর ছোঁয়া শহরের জীবনেও লেগেছে। তবে প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। পহেলা ফাল্গুনের দুপুর গড়িয়ে বিকেল আসতেই আপজনদের নিয়ে ঘুরতে বেড়িয়ে পড়া। পরন্ত বিকেল কিংবা গোধূলীলগ্ন কোন কিছুই যেন মনে থাকে না। যতটুকু সময় একান্ত মনে উৎসবের আমেজে কাটিয়ে নেয়া যায় ততটুকুই প্রাপ্তি। আর এ প্রাপ্তিটুকুই প্রেরণা জোগায় কর্মচাঞ্চল্যের। এ উৎসবে বড় একটি আকর্ষণ হচ্ছে পোশাক। বাসন্তী রংকে প্রাধান্য দিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে পহেলা ফাল্গুনের পোশাক। এ নিয়ে ফ্যাশন হাউসগুলোর তৎপরতা অবশ্য চোখে পড়ার মতো। মানুষের রুচি ও চাহিদাভেদে পোশাকের পসরা সাজিয়েছেন তাঁরা। তালিকায় ছেলেদের জন্য রয়েছে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, শার্ট, টি-শার্ট, শর্ট পাঞ্জাবি, কোর্তা। মেয়েদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার, কামিজ, শর্ট কামিজ, ফতুয়া, কোর্তা, শাল। প্রতিটি পোশাকেই রয়েছে বাসন্তী রঙের ছোঁয়া। ডিজাইন ভেরিয়েশনও চোখে পড়ার মতো। শুধু যে পোশাকেই এ উৎসব সীমাবদ্ধ তা নয়, এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফুলের গয়না, মাটি ও পাথরের গয়না, ব্রেসলেটসহ নানান আইটেমের বাজারও বেশ রমরমা। মানুষের রুচি ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে ফ্যাশন হাউসগুলো দিন দিন তাদের সম্ভার সমৃদ্ধ করছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে ফ্যাশন হাউসের সংখ্যা, যার ফলে ক্রেতারাও হাতের নাগালে পেয়ে যাচ্ছেন তাদের পছন্দসই পোশাকটি। বসন্তের পোশাক ডিজাইন নিয়ে ডিজাইনার পিয়াল হাসান জানান, যেহেতু বসন্তেও হাল্কা ঠা-া অনুভূত হয়; সে কারণে একটু মোটা ফেব্রিক নিয়ে কাজ করা হয়েছে। এছাড়াও খাদি কাপড়ের একটা চাহিদা বসন্ত উৎসবে বরাবরই থাকে। অন্যবারের চেয়ে অনেক বেশি ডিজাইন ভেরিয়েশন রাখা হয়েছে এবার। হাল্কা বেটানের কাজ থাকলেই হাতের কাজ এপ্লিককে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। মেয়েদের ফুল সিøভ কোর্তা এবং ফতুয়ায় বুকে এবং হাতে গর্জিয়াস সুতোর কাজ লক্ষণীয়। শাড়ি এবং সালোয়ার কামিজের সঙ্গে ম্যাচ করা শাল এবার এক্সট্রা দ্যুতি ছড়াবে। বর্তমানে দেশীয় লোকজ ও কারুশিল্প বেশ সমাদৃত। দেশীয় ঐতিহ্য রক্ষায় দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলো একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে আড়ং, নিপুণ, রং, অঞ্জন’স, কে-ক্র্যাফট, প্রবর্তনা, বাংলার মেলা, বিবিয়ানা, দেশাল, সুতি, নগরদোলা, জি অন্যতম। দেশীয় সামগ্রী ব্যবহার করে আধুনিক সাজে সজ্জিত এসব ফ্যাশন হাউসে রুচিসম্মত পোশাকের সমাহার রয়েছে। যে কোন বয়সীর পোশাক মিলবে এখানে। দামও হাতের নাগালে। হাজারো ব্যস্ততায় বের হওয়া যায় না অনেক সময়। সেদিক থেকে পহেলা ফাল্গুন যেন আমাদের সামনে মন প্রফুল্ল করে দেয়ার সুযোগ এনে দেয়। প্রকৃতির উচ্ছলতা দেখেই বোঝা যায় বসন্তের আগমনী বার্তা। একদিন যদি প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া যায়, ক্ষতি কী। আর এ কারণেই হয়ত পহেলা ফাল্গুনের দিন ঢাকায় যত উদ্যান আছে সেখানে লোকজনের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো। আর এ ধরনের উৎসবে নিজেকে যদি রাঙানোই না যায় তাহলে উৎসবটাই যেন বৃথা। যার ফলে বসন্ত উৎসবটা অনেকাংশেই ফ্যাশনকে প্রভাবিত করে। আর এভাবেই বাঙালীর উৎসবগুলো নাড়া দিয়ে যায় ফ্যাশন হাউসগুলোকে। ছবি : জুয়েল রানা মডেল : আনিতা, প্রীতি ও আলিফ পোশাক : ঢাকঢোল ও বিবর্তন মেকআপ : রাজিয়া’স বিউটি স্টাইলিং : এডলফ খান
×