ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দিল্লীর দর্শকরা ‘শেখ সাদী’ নাটকটি গ্রহণ করেছে ॥ এইচ আর অনিক

প্রকাশিত: ১২:৪৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

দিল্লীর দর্শকরা ‘শেখ সাদী’ নাটকটি গ্রহণ করেছে ॥ এইচ আর অনিক

বাংলাদেশের মঞ্চনাট্য অঙ্গনে অন্যতম তরুণ প্রতিভা এইচআর অনিক। চন্দ্রকলা থিয়েটারের কর্ণধার অভিনেতা, নাট্যকার, নির্দেশক অনিক অসংখ্য নাটক রচনা ও অভিনয়ের পাশাপাশি নির্দেশনাও দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি তার নির্দেশনায় মঞ্চে এসেছে একক অভিনয়ের নাটক ‘শেখ সাদী’। নাটকটি নিয়ে দেশে-বিদেশে সফর করছেন তিনি। সম্প্রতি দিল্লী সফরে ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছেন তিনি। ‘শেখ সাদী’ নিয়ে আবারও কলকাতার দমদমে যাচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তার থিয়েটার ভাবনা এবং ‘শেখ সাদী’ ও বিভিন্ন সফর নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। শেখ সাদী নাটক মঞ্চে আনার প্রেক্ষাপট কী? বর্তমান সময়ে নাটকটির গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু? এইচ আর অনিক : আমি সবসময় সমাজের কথা, দেশের কথা, সাধারণ মানুষের কষ্টের কথা নাটকের মাধ্যমে বলতে চাই। ‘শেখ সাদী’ নাটকের প্রেক্ষাপট অনেকটা তেমনি। শেখ সাদী একজন মহাকবি, তিনি সবসময় অবহেলিত মানুষের কথা তার কাব্যগ্রন্থে লিখেছেন। বর্তমান সময়ে ‘শেখ সাদী’ নাটকের গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপক। অপূর্ব কুমার কু-ুর রচনায় ‘শেখ সাদী’ নাটকে সাধারণ মানুষের সম্মান, মর্যাদা, মানুষের সঙ্গে মানুষের সৌজন্যতা বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। তার ওপর মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব কিন্তু বর্তমানে মানুষ কতটা সেরা জীব সে প্রশ্ন থেকেই যায়। নাটকটি নিয়ে দিল্লী সফরের অভিজ্ঞতা কেমন, সেখানকার দর্শকরা নাটকটিকে কিভাবে গ্রহণ করল? এইচ আর অনিক : দিল্লীতে আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে চন্দ্রকলা থিয়েটার এ বছর নিয়ে টানা দশ বছর অংশগ্রহণ করেছে। এ বছর ‘শেখ সাদী’ নাটকের জন্য শ্রেষ্ঠ নির্দেশক ও শ্রেষ্ঠ অভিনেতার এ্যাওয়ার্ড পাই। মহাকবি শেখ সাদী সম্পর্কে দিল্লীতে অল্প বিস্তর সকলেই জানে। তাই নাটকটির বিষয়বস্তু তারা সহজেই বুঝতে পেরেছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত নাটকটি দিল্লীতে মঞ্চায়ন করতে পেরেছি। সেখানকার দর্শক নাটকটি ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছে। নাটকটির মধ্যে দিল্লীর কথাও বলা হয়েছে। নাটকটির মঞ্চায়ন শেষ হওয়ার পর অনেক দর্শক আবেগে কেঁদে ফেলেছে। তারা আমাকে জড়িয়ে ধরে এবং একটি আবেগঘন মুহূর্তের সৃষ্টি হয়। দেশের বাইরে আর কোন কোন দেশে নাটকটি মঞ্চায়নের সম্ভাবনা রয়েছে? এইচ আর অনিক : দেশের বাইরে ইতোমধ্যে ‘শেখ সাদী’ নাটকটি ভারতের আগরতলা, ধর্মনগরে, দিল্লীতে মঞ্চায়ন হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি কলকাতার দমদম আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে নাটকটি মঞ্চায়িত হবে। এছাড়াও ‘শেখ সাদী’ নাটকটি ইরান এবং শ্রীলঙ্কাতে মঞ্চায়িত হবে। আরও কিছু দেশে নটিকটি মঞ্চায়নের জন্য কথা চলছে। একক অভিনয়ের ক্ষেত্রে কতটা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন? এইচ আর অনিক : আসলে আমি মনে করি একক অভিনয় আর বৃন্দ অভিনয় কোনটাই আলাদা নয়। অভিনয় অভিনয়ই, সেটা একক অভিনয় হোক আর বৃন্দ হোক। তবে একক অভিনয়ে একটা বড় চ্যালেঞ্জ থেকেই যায়। কারণ একক অভিনয় দেখে যদি দর্শক মনে করেন যে এটা একজনই অভিনয় করেছেন তাহলে একক অভিনয়ের সার্থকতা থমকে দাঁড়াবে। একক অভিনয় শেষে যদি দর্শক মনে করেন যে একটি বৃন্দ অভিনয় দেখেছেন তাহলেই একক অভিনয়ের সার্থকতা। আর সেটা করা একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। আর আমি চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। একক অভিনয়ের নাটক নিয়মিত মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে দলের নিয়মিত অন্য সদস্যদের মধ্যে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে কিনা? এইচ আর অনিক : আমি তা মনে করি না। অন্তত আমার দলে এর কোন নেতিবাচক প্রভাব নেই। বরং একক অভিনয়ের নাটক দলকে নিয়মিত নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে বেগবান রাখে । দেশের অন্যান্য একক মঞ্চনাটকের সঙ্গে ‘শেখ সাদী’ কতটা তুলনীয়? এইচ আর অনিক : প্রত্যেকটি একক নাটকের একটা নিজস্বতা আছে। তবে আমি ‘শেখ সাদী’ নাটক মঞ্চে আনার আগে আমি অনেকগুলো একক নাটক মঞ্চে দেখি এবং আমি ঠিক করি অন্য নাটকে যা করা হয়নি তা করার জন্য যেহেতু আমি নিজেই অভিনয় এবং নির্দেশনা দিয়েছি সেহেতু আমি নিজেকে প্রস্তুত করবার জন্য ভারতের শ্রদ্ধেয় মনোজ মিত্র স্যার এবং অভিনেতা নির্দেশক গৌতম হালদার এবং বাংলাদেশে শ্রদ্ধেয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারের কাছ থেকে অভিনয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশিক্ষণ নেই। আর তুলনা করার দায়িত্বটি অবশ্যই দর্শকের হাতেই দিতে চাই। দর্শক সঙ্কটকালীন সময়ে একক নাটক কতটা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন। এইচ আর অনিক : আমি আগেই বলেছি একক নাটক এবং বৃন্দ নাটককে আলাদা করে না দেখাই উচিত। তবে দর্শক সঙ্কটকালীন সময়ে একক নাটক দর্শককে মঞ্চে আনার ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এখনও ফেরদৌসী মজুমদারের কোকিলারা মঞ্চে আসলে হল ভর্তি দর্শক হয়। একক নাটকে যারা অভিনয় করেছেন তারা প্রত্যেকে প্রচুর পরিশ্রম করে একক নাটকে অভিনয় করেন। একজন অভিনেতা-অভিনেত্রী একঘণ্টার উপরে হল ভর্তি দর্শককে বিমোহিত করেন এটা সহজসাধ্য কাজ নয়। আপনার দলের অন্য প্রযোজনাগুলো মঞ্চায়নের খবর কী? এইচ আর অনিক : চন্দ্রকলা থিয়েটার নিয়মিত মঞ্চায়ন করছে ‘তামাশা’, ‘দ্বৈত মানব’, ‘তন্ত্রমন্ত্র’, ‘স্বপ্নের তরী’। আমাদের সবগুলো নাটক নিয়ে একটি নাট্য উৎসবের আয়োজনের কথা ভাবছি। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের জাতীয় নাট্য উৎসব নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? এইচ আর অনিক : বাংলাদেশে এই প্রথম ৬৪ জেলায় একযোগে জাতীয় নাট্য উৎসবের উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এজন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এতবড় একটা আয়োজন এটা ইতিহাস হয়ে থাকবে। সমস্ত বাংলাদেশের দলকে সমন্বয় করতে হয়েছে খুব কম সময়ে। এটা খুব সহজ কাজ নয়। আর দর্শক সঙ্কটের বিষয়টি এখন নিত্যদিনের বিষয়। আমরা নাটকের অন্য সমস্যা নিয়ে যেমন সজাগ তেমনি দর্শক সঙ্কট নিয়ে ততটাই উদাসীন। চারিদিকে জানজট মিরপুর বা উত্তরা থেকে একজন দর্শক আসতে এবং ফিরে যেতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগে তাহলে সে কেন নাটক দেখবে। বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন দর্শক সঙ্কট কাটাতে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান ফেডারেশন মঞ্চনাটকের সমস্ত দলকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চ নাটককে মর্যাদার উচ্চতর আসনে নিয়ে গেছে। -সাজু আহমেদ
×