ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৭ জন দগ্ধ

সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাসের আগুনে বৃদ্ধার মৃত্যু

প্রকাশিত: ১০:৩৩, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০

  সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাসের আগুনে বৃদ্ধার মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাসের চুলার আগুনে পুড়ে বৃদ্ধা নূরজাহান বেগমের (৭০) মৃত্যু ও একই পরিবারের আরও সাতজন দগ্ধ হয়েছে। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দু’জনকে বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে রাখা হয়েছে। সোমবার ভোরে সিদ্ধিরগঞ্জের সাহেবপাড়া এলাকায় বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তা ফারুক মিয়ার পাঁচতলা বাড়ির নিচতলায় ভাড়াটিয়ার ফ্ল্যাটে এ ঘটনা ঘটে। দগ্ধরা হলো কিরণ (৪৩), হীরণ (২৫) ও তার স্ত্রী মুক্তা (২০), মেয়ে লিমা (৩), আবুল হোসেন (২২), কাউসার (১৬) ও আপন (১০)। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, সকাল পৌনে এগারোটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নূরজাহান বেগম। তার শ্বাসনালীসহ শরীরের শতভাগ আগুনে পুড়ে যাওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে। তিরি আরও জানান, দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডাঃ বিধান সরকার সাংবাদিকদের জানান, সিদ্ধিরগঞ্জে গ্যাসের আগুনে দগ্ধ বেশির ভাগ রোগীরই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। আবার অনেকের শরীরের ৪০-৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে। যে কারণে তাদের প্রত্যেকের অবস্থাই সঙ্কটাপন্ন। মৃত নূরজাহানের মেয়ে লিপি আক্তার জানান, ভোরে তার মা বাসার চুলা জ্বালানোর জন্য ম্যাচের কাঠি ধরানোর সঙ্গে সঙ্গে রান্নাঘরে আগুন লেগে যায়। এ সময় নূরজাহান বেগমের আর্তচিৎকারে তার ছেলে দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে আগুন অন্য চার রুমে ছড়িয়ে পড়ে। মাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায় দুই ছেলে কিরণ ও হীরণ, মেয়ে মুক্তা ও নাতি-নাতনিরা। এতে তারাও আগুনে দগ্ধ হয়। মুহুর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ফ্লাটের চারটি ঘরের মধ্যে। কিন্ত বাড়ির কলাপসিবল গেট তালাবদ্ধ থাকায় বাইরের কেউ ঘরে ঢুকতে পারেনি। ঘরে অক্ষত থাকা মেয়ে লিপি আক্তার আগুন নেভাতে পানি দিতে শুরু করে। পরে আশপাশের লোকজন ফ্ল্যাটের জানালার গ্লাস ভেঙ্গে পানি দিতে শুরু করে। খবর পেয়ে আদমজী ইপিজেডের ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট এসে পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে আগুনে আটজন দগ্ধ হয়। আশপাশের লোকজন পরে আহতদের উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন। এ সময় লোকজন জানালার গ্রিল ভেঙ্গে লিপি ও তার মেয়ে ইকরামনিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। নূরজাহান বেগমের মেয়ের জামাই ইলিয়াছ মিয়া জানান, তাদের বাড়ি নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায়। পরিবারটি বর্তমানে সাইনবোর্ড সাহেবপাড়া এলাকায় একটি বাড়ির পাঁচতলার নিচতলায় ভাড়া থাকে। রাতে ওই এলাকায় গ্যাসের চাপ কম ছিল, ফলে চুলা বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। ভোরে রান্নার জন্য গ্যাসের চুলায় আগুন ধরাতে বৃদ্ধা নূরজাহান বেগম ম্যাচের কাঠি ধরাতেই আগুন পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় তার আর্তচিৎকারে ছেলে ও ছেলের স্ত্রী নাতি-নাতনিরা এগিয়ে এলে তারাও আগুনে দগ্ধ হয়। আগুনে ঘরের চারটি কক্ষের খাট, ওয়্যারড্রব, আলমারি, ফ্যানসহ সব আবসাবপত্র পুড়ে যায়। সেই আগুনে দগ্ধ আটজনকে উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নূরজাহান বেগম। একই ভবনের চতুর্থতলায় ভাড়া থাকেন আলেয়া বেগম। তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে গ্যাসের চাপ কম থাকায় আমাদের সিলিন্ডার গ্যাস কিনে রান্নাবান্নার কাজ করতে হয়। মাস শেষে বাড়িওয়ালাকে গ্যাসের প্রতি চুলায় এক হাজার টাকা করে পরিশোধ করতে হয়। তিনি বলেন, গভীর রাতে বা ভোরে গ্যাসের চাপ ভাল থাকে। কিন্তু দিনের বেলায় গ্যাস কোথায় যায় তার কোন উত্তর মেলে না। যে কারণে অনেক নারী গ্যাসের চাপ বোঝার জন্য চুলার চাবি চালু রেখে ঘুমিয়ে যান। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন জানান, গত চার পাঁচ বছর ধরে সিদ্ধিরগঞ্জের সাহেবপাড়া, কান্দাপাড়া, চৌধুরীপাড়া, পাইনাদী নতুন মহল্লা, আবদুল আলীপুল, মিজমিজিসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় দিনের বেলায় গ্যাসের চাপ খুব কম থাকে। গ্যাসের চাপ কম থাকায় এসব এলাকার মা-বোনেরা দিনের বেলা রান্নাবান্না করতে পারেন না। রাত বারোটা একটার পর গ্যাসের চাপ বাড়ে। যে কারণে গভীর রাত জেগে তাদের রান্নাবান্নার কাজ করতে হয়। অনেক গৃহবধূকে ভোরে ঘুম চোখে রান্নাবান্নার কাজ করতে হয়। তিনি দাবি করেন গ্যাচের চাপ কম থাকার বিষয়টি স্থানীয় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে মৌখিক ও লিখিতভাবে কয়েক দফা জানানো হয়েছে। কিন্তু তিতাস কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি দাবি করেন, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই আজকের এই দুর্ঘটনা। তিনি বলেন, ধারণা করা হচ্ছে বৃদ্ধ নূরজাহান বেগমও ঘুম চোখে রান্না ঘরে গিয়ে ম্যাচের কাঠি ধরাতে গিয়েই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। দগ্ধ হয়েছেন পরিবারের শিশুসহ আরও সাতজন। ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে সারা রাত গ্যাসের চুলা থেকে অল্প অল্প গ্যাস বের হয়ে পুরো বাড়িতে জমা হয়েছে। পরে সকালে চুলায় আগুন ধরালে ওই জমে থাকা গ্যাসের কারণে আগুন ধরে যায়। তিনি বলেন, বিষয়টি আরও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, খবর পেয়ে আদমজী ইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক শুভ আহমেদ জানান, রাতের বেলা গ্যাসের চুলা বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে পড়ে পরিবারের সদস্যরা। ধারণা করা হচ্ছে চুলা চালু থাকার কারণেই গ্যাস নির্গত হয়ে রুম ভরে ছিল। আর সেই চুলাতে আগুন ধরাতে গিয়ে পুরো ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে আটজন দগ্ধ হয়েছে।
×