ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জনগণের প্রতি আস্থা নেই, তাই বিদেশীদের কাছে নালিশ বিএনপির ॥ কাদের

প্রকাশিত: ১০:৫৯, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২০

জনগণের প্রতি আস্থা নেই, তাই বিদেশীদের কাছে নালিশ বিএনপির ॥ কাদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের জনগণের প্রতি আস্থা না থাকায় বিএনপি নেতারা বিদেশীদের কাছে নালিশ করে বেড়াচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সোমবার সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ে সমসাময়িক ইস্যুতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি, ‘সরকারকে লাথি মেরে বিদায় করা উচিত’ ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেনের এমন মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন। ঢাকার মেয়র পদে বিএনপির দুই পরাজিত প্রার্থী আগের দিন কূটনীতিকদের কাছে ‘ভোট কারচুপির যে চিত্র’ তুলে ধরেছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির জনগণের প্রতি আস্থা নেই বলে মন্তব্য করেন কাদের। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি রাজনৈতিকভাবে এখন দেউলিয়া অবস্থায় নিপতিত। এখন আসলে নালিশ করাই রাজনৈতিক পুঁজি, নালিশই তাদের একমাত্র অবলম্বন। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, সভা-সমাবেশ করে জনগণের কাছে নালিশ করতে পারে। বিচারক হতে পারে আমাদের দেশের জনগণ। তারাই ভোট দেবে, আন্দোলন করবে, তারা রেসপন্স না করলে আন্দোলন হবে না, তারা ভোট না দিলে আমরা জিততে পারব না- এটাই বাস্তবতা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি বিদেশীদের কাছে যতই ধরনা দিচ্ছে ততই স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, দেশের মানুষের প্রতি তাদের আস্থা কম। বিদেশীদের কাছে নালিশ করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। দেশের জনগণের প্রতি যদি তাদের আস্থা থাকত তাহলে বিদেশীদের কাছে এত ঘন ঘন ধরনা দেয়া, নালিশ করা থেকে বিরত থাকত। গত এক ফেব্রুয়ারি ঢাকা সিটিতে প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন হয়। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে বিএনপির মেয়রপ্রার্থী কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলেছে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের সমাবেশে দেয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে কাদের বলেন, আমরা প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করি, আক্রমণের ভাষার মধ্যেও একটা শালীনতা থাকতে হবে। যেমন ড. কামাল হোসেন সাহেব বক্তব্য দিতে গিয়ে খেই হারিয়ে হঠাৎ বলে ফেললেন, এই সরকারকে লাথি মেরে নামাবে। আবার লাথি মেরেই সরকারকে বিদেশে পাঠিয়ে দেবে। দুটি শব্দ উনি ব্যবহার করেছেন, দুটিই গর্হিত ভাষা; রাজনীতির জন্য শোভন নয়। ওবায়দুল কাদের বলেন, অনুর্ধ-১৯ ক্রিকেট দলের ঐতিহাসিক বিজয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ বিজয় উদ্যাপন করা হবে। খেলোয়াড়দের গণসংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে মন্ত্রিসভায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই অভিনন্দন জানানো ও গণসংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সুবিধামতো দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। রবিবার দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে প্রথম কোন বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। ওবায়দুল কাদের বলেন, ঐতিহাসিক বিজয়ে আমাদের তরুণ টাইগারদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। তাদের দুর্দান্ত পারফরমেন্সে ভারতের মতো বিশাল শক্তিকে পরাজিত করে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, এ বিজয় আমরা উদ্যাপন করব। তিনি বলেন, বিজয়ী বীরদের গণসংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ্ড আমরা স্বাধীনতার পর এবারই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছি। কাদের বলেন, এ জয়ের পথ ধরেই একদিন বাংলাদেশ বিশ্বকাপও আনবে, এটা আমরা প্রত্যাশা করি। এ দুর্দান্ত পারফরমেন্স আমাদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে ক্যাপ্টেন আকবর যে ম্যাচিউরিটি ক্যাপ্টেনসিতে প্রদর্শন করেছে ছয় উইকেট যাওয়ার পর আমরা তো ভাবিনি যে জিততে পারব। এরপরও আকবরের নেতৃত্ব দলকে যেভাবে বিজয়ের স্বর্ণ দুয়ারে টেনে নিয়ে গেছে সেটা সত্যি একটা স্মরণীয় ঘটনা। গ্রাম থেকে খেলায়াড়দের তুলে আনতে তৃণমূল পর্যন্ত প্রশিক্ষণ জরুরী মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই যে বিশ্বকাপ বিজয়ের নায়ক ক্যাপ্টেন আকবর তার বাড়ি কিন্তু পিছিয়ে পরা কুড়িগ্রাম, এ দলে আবার পঞ্চগড়ের খেলোয়াড়ও রয়েছে। আমাদের বিকেএসপিতে তৃণমূলের যে প্রশিক্ষণ সেটা চমৎকার। এখানেই নতুন নতুন ক্রিকেটার সৃষ্টি হয়। ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কিনা, প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণ গণনা অনুষ্ঠানে সব রাজনৈতিক দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ড. কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকী, এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী উপস্থিত থাকলেও বিএনপির কেউ আসেননি। ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে কোকো যখন মারা গেলো, সন্তানহারা মাকে সান্ত¡না দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গিয়েছিলেন। কিন্তু ঘরের দরজায় তালা, গেটে তালা দিয়ে সব বন্ধ রাখা হয়েছিল। সব তালাবদ্ধ ছিল। অমঙ্গলীয় দেয়াল তুলে ফেলতে হবে। রাজনীতিতে সৌজন্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে। সবকিছুই যেন মানি না, মানব না সংস্কৃতির দিকে যাচ্ছে। এই সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কাদেরের মন্তব্যে গণফোরামের বিবৃতি এদিকে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্যকে বিভ্রান্তিমূলক দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে দলটি। ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়ে সোমবার গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, তার (ওবায়দুল কাদের) বক্তব্যটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, সত্যের অপলাপ এবং বিভ্রান্তিমূলক। এটা সম্পূর্ণভাবে ড. কামাল হোসেনের মতো সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার যে অপচেষ্টা মাত্র; তা দেশপ্রেমিক জনগণ সহজেই অনুধাবন করতে সক্ষম। গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে সুব্রত চৌধুরী আরও বলেন, সর্বস্তরের জনগণ এদেশের মালিক। সেই মালিকানা কেড়ে নিয়ে ক্ষমতার দম্ভে কেউ যদি অট্টালিকায় বসে সাধারণ শ্রমজীবী, মজুর, রিক্সাওয়ালা, কৃষক, শ্রমিকসহ প্রতিটি মানুষকে রাস্তার মানুষ হিসেবে গণ্য করেন, গণতন্ত্রের আয়নায় তাদের নিজেদের চেহারা দেখার জন্য আহ্বান জানাই। যারা ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল করে আছেন। যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জনগণের সব অধিকার ছিন্নভিন্ন করেছেন। যারা লুটপাট করে দেশকে ধ্বংস করেছেন। যারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন ও গণবিরোধী; কেবলমাত্র তাদের পক্ষেই ড. কামাল হোসেনের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার অপপ্রয়াস চালাবে, এটাই স্বাভাবিক। তাদের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য গণতান্ত্রিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। ড. কামাল হোসেন গণমানুষের অভিপ্রায় অনুসারে মতামত প্রকাশ করে থাকেন। স্বৈরতন্ত্রের গুহায় বসে যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছেন, তাদের মুখে গণতন্ত্রের ছবক দেয়া কোনক্রমেই বাঞ্ছনীয় ও শোভনীয় নয়। এ ধরনের অনভিপ্রেত বক্তব্য দেয়া থেকে তাদের বিরত থাকার আহ্বান জানাই।
×