ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাগেরহাটে উপকূলীয় বাঁধ তৈরিতে বালু ব্যবহারে উদ্বেগ

প্রকাশিত: ১২:১০, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বাগেরহাটে উপকূলীয় বাঁধ তৈরিতে বালু ব্যবহারে উদ্বেগ

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ জলোচ্ছ্বাস, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর এক প্রকার রক্ষা কবজ শরণখোলা উপজেলা ঘেঁষা বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী পাউবোর ৩৫/১ পোল্ডারের বেড়ি বাঁধটি মাটির পরিবর্তে বালু দিয়ে নির্মাণ করার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা কাক্সিক্ষত এ বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া বাঁধের উপরের অংশে সামান্য মাটির ব্যবহার করলেও সে ক্ষেত্রেও নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৭ সালে ৩৫/১ পোল্ডারের ৬৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করে চায়নার (এইচ. সি. ডব্লিউই) নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পার্শ্ববর্তী উপজেলা মোরেলগঞ্জের খাউলিয়া ইউনিয়নসহ শরণখোলা উপজেলার ৪টি ইউনিয়নের অভ্যন্তরে ৬৩ কি.মি. বাঁধের পাশাপাশি ১৯৮৪ সালে নির্মিত বলেশ্বর ও ভোলা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলোর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্মাণাধীন জরাজীর্ণ ৩২টি সহ প্রায় অর্ধশত স্লুইসগেট (জলকপাটের) নতুন করে নির্মাণ কাজ করছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বৃহৎ এ প্রকল্পের তদারকির দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের রহস্যজনক উদাসীনতায় সংশ্লিষ্টরা মাটির পরিবর্তে বাঁধের কাছ থেকে অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে স্লুইসগেইট ও বাঁধ নির্মাণ করছে। ফলে উপকূলবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এ বাঁধটির স্থায়িত্ব নিয়ে উৎকণ্ঠিত উপকূলের মানুষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে, ঠিকাদারদের একটি সূত্র জানায়, প্রতিটি স্লুইসগেট নির্মাণের পর তা মাটি দিয়ে ভরাট করার কথা থাকলেও তার পরিবর্তে লাখ লাখ ফুট (সি.এফ.টি) নি¤œমানের বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। ওই গেটগুলো ছেড়ে দেয়ার পর তা থেকে পানি নিষ্কাশন শুরু হলে ভেতরে পানি প্রবেশ করে বালু সরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, উপজেলার তাফালবাড়ি, চালিতাবুনিয়া, খোন্তাকাটা, রায়েন্দাসহ কয়েকটি এলাকার একাধিক বাসিন্দা বলেন, কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর ধরে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্র বালি লুট করলেও রহস্যজনক কারণে তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতা এবং উপজেলার রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা রেজাউল করিম খান রেজা বলেন, বাজার রক্ষার নামে অবৈধ দখলদারদের বাঁচিয়ে শরণখোলা উপজেলার প্রধান খালের ভেতর থেকে ৯৫ ফুটের শহর রক্ষাবাঁধ নির্মিত হলে ধীরে ধীরে খালটি মরে যাবে। যার ফলে উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষের কৃষি ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারের জন্য পানির প্রধান উৎস বন্ধ হয়ে মানুষের দুর্ভোগ ও পরিবেশের বিপর্যয় ঘটবে। এছাড়া গাছপালা মারা যাওয়া পাশাপাশি ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। তবে প্রকল্প তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রকল্প এলাকায় উপযুক্ত মাটির সঙ্কট রয়েছে এবং বাঁধের নিচের অংশে বালু দেয়ার নিয়ম আছে। তাই কোন সমস্যা হবে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নেয়া শুরু হয়েছে। এদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ নাহিদুজ্জামান বলেন, এ ক্ষেত্রে পাউবো বাগেরহাট অফিসের কিছুই করণীয় নেই। প্রকল্পটি শেষ হলে আমাদের শুধু বুঝিয়ে দেয়া হবে। এ বিষয়ে, প্রকল্পটির ডেপুটি টিম লিডার হাবিবুর রহমান জানান, নিয়ম অনুসারে বেরিবাঁধের কাজ চলছে। সব ক্ষেত্রে আমাদের তদারকি আছে। অবৈধ বালু উত্তোলন দেখার দায়িত্ব প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নয়। এটা সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসনের বিষয়।
×