ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নবম জাতীয় কাব ক্যাম্পুরি ২০২০ জীবন গঠনের শিক্ষা

প্রকাশিত: ০৭:১২, ২৭ জানুয়ারি ২০২০

নবম জাতীয় কাব ক্যাম্পুরি ২০২০ জীবন গঠনের শিক্ষা

একটি তাঁবুতে সাত জন। এর মধ্যে ছয়টি শিশু এবং একজন শিক্ষক। মোট পাঁচ দিন অবস্থান করবে তারা। তাঁবুতে এই ক’দিন শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার শিক্ষাটা দেয়া হয়। কাব ক্যাম্পে থাকার সময়ে তারা যা শিখবে, যা জানবে তা সারাজীবন পালন করবে। ‘কাবিং করব, শান্তির বার্তা আনব’ এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাকে জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া নবম জাতীয় কাব ক্যাম্পুরি ২৪ জানুয়ারি শুক্রবার মহা তাঁবুজলসা ও সমাপনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। ক্যাম্পুরিতে প্রবেশ করে প্রথমেই চোখে পড়ে সারি বেঁধে কাবদের হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য। ছায়া সুনিবিড় প্রকৃতির মাঝ দিয়ে পরনে ইউনিফর্ম, গলায় স্কাউট ব্যাজ আর মাথায় লাল-নীল-হলুদ বেলুন বেদে কেউ যাচ্ছিল নাচতে, কেউ কবিতা পড়ে শোনাতে, কেউ গল্প আবার কেউ গাইতে। ক্যাম্প ঘুরে দেখা যায় পুরো এলাকায় কিছুদূর পর পর ‘নো প্লাস্টিক’ লিখা সাইন বোর্ড। ক্যাম্পে আগত সকল কাব ইউনিটকে পলিথিন বা প্লাস্টিক না আনার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ক্যাম্পে প্রবেশের সময় প্লাস্টিক দ্রব্য নিয়ে কাউকে ঢুকতেও দেয়া হয়নি। ক্যাম্পুরিতে প্রত্যেক কাব স্কাউট সদস্য তাদের প্রতিভাকে ১২টি কার্যক্রম বা স্বপ্নের মাধ্যমে উপস্থাপন করার সুযোগ পায়। তার মধ্যে একটি স্বপ্ন ছিল সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ভিলেজ পরিদর্শন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৭টি লক্ষ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়াই ছিল এই স্বপ্নের উদ্দেশ্য। ৫০টি স্টল দিয়ে তৈরি এই ভিলেজে এসে কাব স্কাউটরা দেশের ঐতিহ্য, কৃষ্টি, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, পরিবেশ সম্পর্কে ভবিষ্যতে করণীয় সম্যক ধারণা পায়। গত বছর থেকে ‘ডেটল-হারপিক পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ’ কাব ক্যাম্পুরির পরিচ্ছন্ন পার্টনার হিসেবে কাজ করছে। এদের স্টলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দলবেঁধে কাব সদস্যরা একে একে পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিচ্ছে। তারা বলছে, পলিথিন ব্যবহার করবে না। ময়লা যেখানে সেখানে না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলবে। শপথের পর একসঙ্গে তারা একবার করে হাত ধুয়ে নেয়। এই ভিলেজে ছিল বায়োস্কোপ দেখা, পুতুলনাচ, গান, নাচসহ নানা আয়োজন। তখন প্রায় সন্ধ্যা, অনুষ্ঠান শেষে সারি বেঁধে কাবেরা হেঁটে চলেছে তাঁবুর দিকে। পথে পড়ে থাকা টিস্যু, কাগজ কুড়িয়ে তা যথাস্থানে ফেলছে। এবারের কাব ক্যাম্পুরিতে ছিল চারটি ভিলেজ। প্রতিটি ভিলেজে ছিল সাব-ক্যাম্প। সব মিলিয়ে আটটি ক্যাম্পে সারাদেশ থেকে আসা ৮৮৮টি প্রতিষ্ঠানের পাঁচ হাজার ৩২৮ জন কাব স্কাউট, ৮৮৮ জন কাব স্কাউট লিডার, ৫৪৩ জন কর্মকর্তা, ৫১৯ জন স্বেচ্ছাসেবক রোভার স্কাউট, ৭৯ জন সাপোর্ট স্টাফ, ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, আনসার, বাবুর্চিসহ প্রায় ৯ হাজার অংশগ্রহণকারী ক্যাম্পুরিতে যোগ দেন। এ ছাড়াও ক্যাম্পুরিতে অভিভাবক দিবস, টপ এ্যাচিভার্স ও উডব্যাজ রিইউনিয়নে স্কাউটার, রোভার স্কাউট, স্কাউট, কাব স্কাউট ও স্কাউট শুভানুধ্যায়ী অংশ নেন। সন্ধ্যার পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক প্রধান অতিথি হিসেবে ক্যাম্প ফায়ার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ স্কাউটসের কমিশনার ড. মোঃ মোজাম্মেল হক খানের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী কাব স্কাউটরা স্বতঃম্ফূর্ত আনন্দে দলীয় ও নিজস্ব ধ্যান-ধারণায় চিত্তবিনোদনের জন্য তাদের উপস্থাপনা পরিবেশন করে। এর আগে সকালে ক্যাম্পুরির সফলতা নিয়ে ক্যাম্পুরি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আয়োজকরা জানান, শুক্রবার দিনব্যাপী কুয়াকাটা ভিলেজের কাব স্কাউটরা এসডিভি (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ভিলেজ)-এ অংশগ্রহণ করে এসডিজির ১৭টি গোল সম্পর্কে সাধারণ ধারণা পায়। পাশাপাশি কাব স্কাউটরা এই স্বপ্নে নিজ দেশের ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ, জলবায়ু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, তথ্যপ্রযুক্তি ও মুক্তিযুদ্ধসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ধারণা লাভ করে।
×