ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্যাতনকারী ঢামেকের নার্স পলাতক

শিশু গৃহকর্মীকে গরম খুনতির ছেঁকায় তোলপাড়

প্রকাশিত: ১১:৪৩, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

শিশু গৃহকর্মীকে গরম খুনতির ছেঁকায় তোলপাড়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুখে স্কচটেপ পেঁচিয়ে নিজের বাসার শিশু গৃহকর্মীকে গরম খুনতির ছেঁকা দেয়ার ঘটনায় ঢাকা মেডিক্যালসহ সারাদেশে হৈ চৈ পড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি সমালোচনার ঝড় বইছে ওই নার্সের কর্মস্থল ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কাকতালীয় হলেও সত্য, মালা নামের ওই দগ্ধ শিশু আবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটেই ভর্তি হয়েছে। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে। নির্যাতনকারী নার্সও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটেই কর্মরত। এ ঘটনায় নার্স পলাতক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে ইতোমধ্যেই পুলিশ নার্সের স্বামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। তাকে দুই দিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। শুক্রবার ঢাকার দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকায় এমন লোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটে। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মাযহারুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, মালা নামের ওই শিশুটিকে উদ্ধার করে শুক্রবার ভোরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানেই সে চিকিৎসাধীন। এ বিষয়ে শিশুটির খালা সোমা বেগম যাত্রাবাড়ী থানায় এক দম্পতিকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার আসামি করা হয় নার্স ও তার স্বামীকে। নার্স দিলারা পলাতক রয়েছেন। তার স্বামী রাজীবকে আটক করা হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহীনুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, দক্ষিণ যাত্রাবাড়ীর ৩০৫/৮/এ/১ নম্বর বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে। এই বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে মামলার আসামি এক নার্স ও তার স্বামী বসবাস করেন। তাদের সংসারে দুইটি সন্তান আছে। সন্তান দেখাশোনাসহ বাসার কাজকর্ম করতে এলাকা থেকে মালা নামের দশ বছর বয়সী ওই গৃহকর্মীকে ঢাকায় নিয়ে আসেন ওই দম্পতি। ওই নার্সের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার দশমিনা থানা এলাকায়। আর গৃহকর্মী মালার বাড়িও একই জেলার গলাচিপা থানা এলাকায়। প্রায় ছয় মাস যাবত মালা ওই দম্পতির বাড়িতে কাজ করছিল। গত বহস্পতিবার মালা মার খাওয়ার পর পালিয়ে গিয়ে পাশেই ভাড়া থাকা এক খালার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। সেই খালা বিষয়টি পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ গিয়ে মালাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করে। ভর্তির আগে মালার জবানবন্দী নেয়া হয়। মালার ভাষ্য মোতাবেক মাঝে মধ্যেই তাকে কারণে অকারণে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে মারধর করত ওই দম্পতি। কিন্তু তারা গরিব হওয়ায় পেটের দায়ে তার প্রতিবাদ করতে পারত না। সর্বশেষ তার ওপর নির্মম নির্যাতন করা হয়। তার মুখে স্কচটেপ দিয়ে আটকানোর পর তাকে গরম খুনতি দিয়ে ছেঁকা দেয়া হয়। নার্স তাকে এভাবেই মাঝে মধ্যে নির্যাতন করত। মালার পিঠ, পা ও হাত ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন আছে। পলাতক নার্স দিলারা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের নার্স বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। নার্স পলাতক। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মালার খালা সোমার দাবি, গত ১০ জানুয়ারি শুক্রবার নার্স দিলারা বেগমের পিতা গ্রামের বাড়ি থেকে দুইটি দেশী মুরগি নিয়ে আসেন। পরিবারের সবাই একটি মুরগি রান্না করে খান। অপর মুরগিটি ফ্রিজে রাখা হয়। পরদিন মুরগিটি আর ফ্রিজে পাওয়া যায় না। নার্স দিলারার ধারণা মালা মুরগি চুরি করেছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নার্স মালাকে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকেন। মালা মুরগি সর্ম্পকে কিছুই জানে না বলে দাবি করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে নার্স মালাকে মারধর করে। মারধরের কারণে মালা চিৎকার শুরু করে। চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন জড়ো হতে পারে। এতে ঝামেলা হবে। এমনটা ভেবে নার্স মালার মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকিয়ে দেয়। এরপর মালাকে গরম খুনতি দিয়ে ছেঁকা দেয়। পরে মালা পালিয়ে তার খালার বাড়িতে গিয়ে ওঠলে তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। পরে পুলিশ মালাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এ বিষয়ে তিনি বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আসামি করেন নার্স ও তার স্বামীকে। পুলিশ নার্সের স্বামী রাজীবকে গ্রেফতার করেছে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক সাইফুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, নার্স দিলারা বেগমের স্বামী স্থানীয় বাজারে আড়তদারির ব্যবসা করেন। তাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করা হয়। বিচারক শুনানি শেষে নার্সের স্বামী রাজীবকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ডে থাকা রাজীবের ভাষ্য মোতাবেক তার স্ত্রী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নার্স হিসেবে কর্মরত। এ বিষয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ এ কে এম নাসির উদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা নাগাদ এ বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে এ ধরনের ঘটনা তিনি শুনেছেন। মালা নামের একটি ছোট মেয়ে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছে। তার চিকিৎসার জন্য সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে পুলিশ যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চায়, অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হিসেবে পুলিশকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক অপরাধের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ হলে বিধি বিধান পর্যালোচনা করে সুযোগ থাকলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×