ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভৈরবের ৬০ কিমি খনন সম্পন্ন ॥ বইছে স্রোত

প্রকাশিত: ০৯:২২, ১৯ জানুয়ারি ২০২০

ভৈরবের ৬০ কিমি খনন সম্পন্ন ॥ বইছে স্রোত

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ ভৈরব নদের খননকৃত অংশে স্রোত বইছে। নদের পুরো অংশ খননের পর এই অঞ্চলে জলাবদ্ধতা আর থাকবে না। নদের ৯৬ কিলোমিটারের মধ্যে ৬০ কিলোমিটার ইতোমধ্যে খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। যশোর সদর উপজেলার আবাদ কচুয়া গ্রামের বাসিন্দা আকবর আলী। কয়েক পুরুষ ধরে ভৈরব নদের তীরে বসবাস করেন। তিনি বললেন, বুদ্ধি হওয়ার পর এই নদীতে কখনও পানির সামান্য স্রোতও দেখিনি। তবে ছোটবেলায় বাপ-দাদার কাছে শুনেছি এই নদীপথ দিয়েই এক সময় বড় বড় নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার যশোর শহর পর্যন্ত যাওয়া-আসা করত। সে সময় নদীতে স্রোত, জোয়ার-ভাটা সবই হতো। নদী গবেষকরা বলছেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দীর্ঘতম নদ এই ভৈরব। আড়াই শ’ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ নদটির দুই পাড়ে আর্য সভ্যতা বিকাশ লাভ করেছিল। গড়ে উঠেছিল শহর, নগর, জনপদ। ১৮ শতকের শেষভাগ পর্যন্তও ভৈরব নদের ছিল ভরা যৌবন। এরপর দখল আর দূষণে নদকে হত্যা প্রক্রিয়া শুরু হয়ে চলে ঊনিশ শতকজুড়ে। আস্তে আস্তে ভৈরবের যশোর অংশ হয়ে পড়ে পানি-স্রোতহীন ময়লার ভাগাড়। ভৈরবের এই করুণ দশায় একদিকে যেমন বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়তে শুরু করে পরিবেশের ভারসাম্যের ওপর, তেমনই নদের ওপর নির্ভরশীল একটি জনগোষ্ঠী পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়। একটি নৌ-রুট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সড়ক পথে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের চাপও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় কয়েক দশক ধরে যশোরবাসী দাবি করে আসছিলেন পুনর্খননের মাধ্যমে ভৈরবে আবারও যেন প্রাণ ফিরিয়ে আনা হয়। কয়েক বছর আগে যশোরে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও এই দাবি জানানো হলে তিনি তা মেনে নেন। ভৈরবের ৯৬ কিলোমিটার অংশ ও এর সংলগ্ন খালগুলো খননের জন্য একনেকে পাস হয় ২৭২ কোটি টাকার প্রকল্প। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে শুরুও হয় খনন কাজ। সরেজমিন মঙ্গলবার নদের যশোর সদরের রাজারহাট ও দাইতলা অংশ ঘুরে দেখা গেছে, খননের ফলে এ দুই অংশে জোয়ার-ভাটার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। নদের আর আট কিলোমিটার খনন করলেই ১৫০ বছর পর ভৈরব নদের যশোর শহর অংশে জোয়ার-ভাটা প্রবেশ করবে। খননকৃত এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, নদ খনন করে যাওয়ার পর তা কচুরিপানায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন ও এ নদের সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত প্রকল্প। এ প্রকল্পে ভৈরবের ৯৬ কিলোমিটার অংশ খনন করা হবে। ইতোমধ্যে ৬০ কিলোমিটার খনন সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে ভৈরব নদ সংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকবে না। নতুন নতুন নৌ রুট চালু হবে। ’
×