ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাতামুহুরী নদীতে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯

মাতামুহুরী নদীতে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকার

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ২৮ ডিসেম্বর ॥ লামা উপজেলার মাতামুহুরী নদীর উজানে বিষ প্রয়োগ করা হচ্ছে, ফলে মাছ মরে নদীর পানিতে ভেসে উঠছে। স্থানীয় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় প্রকাশ্যে এই ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। জানা গেছে, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে নদীতে বিষ ঢেলে মাছ শিকার শুরু করে দুর্বৃত্তরা। গত সোমবার ও মঙ্গলবার নদীর কলিঙ্গাকুম এলাকায় বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটে। এতে নদীর প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির লাখ-লাখ ছোট বড় মাছ আধমরা অবস্থায় ভেসে উঠে। পাশাপাশি বিষের কারণে প্রাকৃতিকভাবে তৈরি মাছের খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ফলে মাছের বংশবিস্তার বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে হুমকির মুখে পড়া জীব বৈচিত্র্য রক্ষার দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। জানা যায়, মিয়ানমার সীমান্তর্তী এলাকায় উৎপত্তি হওয়া মাতামুহুরী নদীর আলীকদম, লামা ও চকরিয়া উপজেলার ভূ-খ- দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়। বেশ কয়েকবছর ধরে শীত মৌসুমে নদীর পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লামা, আলীকদম ও চকরিয়া কেন্দ্রিক কিছু অতি লোভী মৎস্য শিকারী নদীর বিভিন্ন অংশে বিষ প্রয়োগ করে মিঠা পানির চিংড়িসহ হরেক প্রজাতির মাছ আহরণ করে থাকেন। লামা পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা সাদ্দাম হোসেন জানান, মাতামুহুরী নদীতে বিষ ঢেলে মাছ শিকার করা হয়, যারা এসব কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রতিবছর বিষ প্রয়োগের ঘটনা ঘটাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেল একটি পাহাড়ী লতার নাম। এ লতার বিষাক্ত পদার্থ (বিষ) যা পানিতে প্রয়োগ করলে মাছ পানির গভীর থেকে ওপরে উঠে আসে। ফলে যে কেউ সহজে মাছ ধরতে পারেন। দুষ্কৃতকারীরা ভোর রাতে এই বিষাক্ত লতার রস নদীর পানিতে ছিটিয়ে দেয়। পরে নদীর ভাটির অংশে বিষক্রিয়া শুরু হয়ে মাছ মরে ভেসে উঠার সঙ্গে সঙ্গে তারা এসব মাছ দ্রুত আহরণ করে বাজারে বিক্রি করে। মাতামুহুরী নদীর কলিঙ্গাকুম এলাকার বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, মৎস্য কর্মকর্তাদের নিষ্ক্রিয়তা এবং স্থানীয়দের অসচেতনতার কারণে বান্দরবানের ঝিড়ি ঝর্ণা ও নদীতে নির্বিচারে বিষ প্রয়োগে মৎস্য নিধনের ঘটনা ঘটছে। গত কয়েকদিনে নদীর প্রায় চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মরা, আধামরা মাছ পানিতে ভেসে ওঠে। ভেসে ওঠা মাছের বেশিরভাগ চিংড়ি মাছের পোনা। এ সময় শত শত উৎসুক নারী পুরুষ ও শিশুরা হাতজাল, ঠেলাজাল, চালুনী, মশারী, ফিন্যা নিয়ে নদীতে মাছ ধরে। নদীতে আধমরা মাছ ধরতে আসা ইসহাক, জসিমসহ অনেকে বলেন, শুষ্ক মৌসুমে অন্তত ৮-১০ বার তারা এভাবে মাছ ধরার সুযোগ পেয়ে থাকি। প্রতিদিনই নদীর কোন না কোন অংশে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধনের ঘটনা ঘটছে। গতবছরও নদীর তেলিরকুম, কলিঙ্গার কুম, রেপারপাড়ি কুমে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধন করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় নদীপাড়ের বাসিন্দারা জানান, সকালে লোকজন নদীতে গোসল করতে গেলে তারা মরা-আধামরা চিংড়ি পোনা আর ছোট ছোট পুঁটি মাছের পোনা ভাসতে দেখেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নদীর ঘাটে ঘাটে নারী পুরুষেরা মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। প্রায় সবাই এক কেজি-আধা কেজি করে মাছ পান। দুর্বৃত্তদের জালে বড় মাছগুলো আটকা পড়লেও ছোট মাছগুলো নদীতে ভেসে ওঠে। লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার শফিউর রহমান মজুমদার বলেন, বিষ প্রয়োগের মরা ও আক্রান্ত মাছ খেলে মানুষ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। এ বিষয়ে বান্দরবান জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অনিল কুমার সাহা বলেন, লামা ও আলীকদম উপজেলায় মৎস্য কর্মকর্তা না থাকায় দুর্বৃত্তরা সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিষ ঢেলে মাছ শিকার করা একটি দ-নীয় অপরাধ। এই বেআইনী কাজের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
×