ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কুয়াকাটা সৈকতের বালু লুট ॥ ভেস্তে যাচ্ছে রক্ষার উদ্যোগ

প্রকাশিত: ১১:০১, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

কুয়াকাটা সৈকতের বালু লুট ॥ ভেস্তে যাচ্ছে রক্ষার উদ্যোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২৫ ডিসেম্বর ॥ কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রক্ষায় সরকার এ বছর জরুরী প্রতিরক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে জিও টিউব দিয়েছে। অথচ ভাঙ্গনকবলিত সৈকতের বেলাভূমি থেকে ফ্রি-স্টাইলে এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে বালু কেটে নেয়া হচ্ছে। ছয় চাকার অবৈধ দৈত্যাকৃতির যানে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কুয়াকাটা সৈকতের অপূরণীয় ক্ষতি করছে চায়না সিকো কোম্পানি। স্থানীয়রা জানান, গত সাতদিন ধরে এভাবে বালু কাটায় সৈকতকে সাগর ভাঙ্গনের তীব্রতার দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের সী সাইটের বেলাভূমি কেটে গভীর করে বালু কাটায় স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ পর্যটকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। ফলে কুয়াকাটা সৈকতের ভাঙ্গন রোধে সরকারের উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে। তবে ওই কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধি মিঃ জ্যাংয়ের মুখপাত্র (দোভাষী) ইমন ইসলাম জানান, তাদের এ বালু নেয়ার অনুমতি দিয়েছে প্রকল্পের বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) প্রকৌশলী। বাপাউবো প্রকল্পের ৪৮ নং পোল্ডারের দায়িত্বরত প্রকৌশলী বালু নেয়ার অনুমতি কাউকে দেয়া হয়নি বলে জানান। পুরো বিষয়টি নিয়ে একধরনের কৌশলী পন্থা নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান জানান, তার দফতরের এ ধরনের অনুমতি দেয়ার কোন সুযোগ নেই। জানা গেছে, উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প, ফেজ-১ এর (সিইআইপি-১) আওতায় কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত লাগোয়া ঝুঁকিপূর্ণ ৪৮নং পোল্ডারের বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ চলছে। এ বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না সিকো কোম্পানি। এ কোম্পানির দায়িত্বরত প্রজেক্ট ইনচার্জ মিঃ জ্যাং কাজের ক্ষেত্রে কোন নিয়ম কানুনই মানছেন না। যেমন খুশি কাজ করছেন। কাজের মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন। এর পেছনে একটি স্থানীয় চক্র কাজ করছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধির সহায়তায় বেড়িবাঁধের কোলঘেঁষে অবস্থিত হোটেল সাগর কন্যা, বেঙ্গল গেস্ট হাউস ও সিভিউ হোটেলের অগ্রভাগ থেকে সৈকতের বালু রাতেদিনে ট্রাক ভরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রায় বিশ থেকে পঁচিশটি ট্রাক-ট্রলি বোঝাই করে গত সাতদিন এ বালু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে লতাচাপলী ইউনিয়নের আমখোলাপাড়া এলাকায়। এর আগেও এ কোম্পানি কুয়াকাটা সৈকত থেকে বালু নিয়ে অন্যত্র কাজে লাগিয়েছেন। পরে উপজেলা প্রশাসনের বাধারমুখে তখন বালু নেয়া বন্ধ হয়ে যায়। এরপর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও এখন আবার বালু কাটা হচ্ছে। সাউথ বীচ হোটেলের কেয়ার টেকার আনোয়ারসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, কয়েকদিন ধরে রাত-দিন ২০-২৫টি ট্রাক-ট্রলিযোগে এস্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে বালু কেটে নেয়া হচ্ছে। এসব বালু বোঝাই যানের কারণে পর্যটকরা চলাচল করতে পারছে না। মানুষ শব্দে ঘুমুতে পারছে না। প্রত্যেক ট্রাক-ট্রলিতে ৬শ’ থেকে ৭শ’ ঘনফুট বালু নেয়া হচ্ছে। চায়না সিকো কোম্পানির স্থানীয় প্রজেক্ট ইনচার্জ মিং জ্যাংয়ের মুখপাত্র দো-ভাষী মোঃ ইমন ইসলাম জানান, বেড়িবাঁধের স্লোপের নিচের বালু নেয়ার অনুমতি রয়েছে তাদের। এ বিষয়ে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প, ফেজ-১ (সিইআইপি-১) ৪৮ এবং ৪৭/২ পোল্ডারের দায়িত্বরত প্রকল্প প্রকৌশলী মোঃ মজিবর রহমান (সিএসই) জানান, বেড়িবাঁধের কোলঘেঁষে থাকা সমুদ্রের বালু নেয়ার বিষয় তিনি জানেন না।
×