ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সারা বছর মশক নিধন, ১৫ সদস্যের বিশেষ কমিটি

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সারা বছর মশক নিধন, ১৫ সদস্যের বিশেষ কমিটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশে বছরব্যাপী এডিস কিউলিক্সসহ সকল প্রকার মশা নিধনের ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট বিশেষ কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম এমপি। একইসঙ্গে উক্ত কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার ও প্রতিবেদন অনুযায়ী দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। রবিবার রাজধানীর সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলন কক্ষে মশা ও ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গের বিস্তার রোধে সমন্বিত ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য অধিদফতর, পরিবেশ অধিদফতর, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কীটতত্ত্ববিদসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত শোনেন। সভাপতির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট করার জন্য মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (নগর উন্নয়ন) আহ্বায়ক করে ১৫ সদস্যের একটি কমিটি করা হচ্ছে। কমিটির সদস্যদের চূড়ান্ত মতামত ও সুপারিশের ভিত্তিতেই এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কমিটিতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি করা হবে। তারা একটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম কিভাবে উন্নত করা যায়, কি করে সারা বাংলাদেশকে মশক নিধন বা ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ থেকে রক্ষা করা যায় এজন্য একটি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য পরামর্শ দিবে এবং আগামী এক মাসের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন দিবে। এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, উন্নত বিশ্ব মশা নিধনে কীটনাশক ব্যবহারে সচেতন হচ্ছে। কারণ কীটনাশক ব্যবহারে পরিবেশের ক্ষতি হয়। এজন্য মশা মারতে গিয়ে যেন পরিবেশ নষ্ট না হয় সে বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। তাই এমন একটি উপায় আমাদের বের করতে হবে যাতে মশা কমে এবং পরিবেশ বাঁচে। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভবন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় কতটা পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রশ্নটি একেবারেই যথার্থ। আমরা সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য দায়বদ্ধতার আওতায় নিয়ে আসব। মন্ত্রী বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো এ বছরের মতো আগামী বছর যাতে ডেঙ্গুর প্রভাব না থাকে সে বিষয়ে কাজ করা। এজন্য আজকের (রবিবার) সভায় ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট করার জন্য একটি কমিটি করে দিয়েছি। তাজুল ইসলাম বলেন, রূপকল্প ২০২১, ২০৪১, এসডিজি অর্জনে মশা ও অন্যান্য ক্ষতিকর কীটমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। এজন্য ডেঙ্গু নিধনে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, মশাসহ অন্যান্য ক্ষতিকর কীটপতঙ্গের বিস্তার নিয়ন্ত্রণ (বায়োলজিক্যাল কন্ট্রোল), কার্যকর ও যথাসম্ভব পরিবেশবান্ধব কীটনাশক প্রয়োগ, নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং বছরজুড়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিরোধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরী। সভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ইনট্রিগ্রেটেড ভেক্টর ম্যানেজমেন্ট কর্মকৌশল বাস্তবায়নের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা, রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণ, বায়োলজিক্যাল নিয়ন্ত্রণ, কীটনাশকের যথাযথ ও নিরাপদ ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত এবং আবাসস্থল সুরক্ষার কৌশল ও কর্মপন্থা নেয়া হয়। সেই সঙ্গে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। সভায় বক্তরা বলেন, আমাদের দেশে কীটনাশক ব্যবহার হয় বিদেশেও ব্যবহার হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এক ওষুধ ব্যবহার হচ্ছে ২০ বছর যাবত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ডেঙ্গু হয়। মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশেও হয়। সে তুলনায় বাংলাদেশে তুলনামূলক কম হয়। ওষুধ আমদানি প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে। শুধু সিটি কর্পোরেশনের জন্য বসে থাকলে হবে না। যার যার ঘরের নিজেরা নিরাপত্তা দেবে। সভায় বক্তারা বলেন, দেশের বর্তমান বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঢাকা মশক নিবারণী দফতরকে একটি অধিদফতরে উন্নীত করতে হবে। ডেঙ্গু বা এডিস মশা নিধনে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করা, ভেক্টর কন্ট্রোল সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে। এজন্য একটি এ্যাডভাইজরি বা কারিগরি কমিটি গঠন করতে হবে। জনবল বাড়ানোসহ জনপ্রতিনিধিদের মাঠে নামাতে হবে। এ কাজগুলো সরাসরি মন্ত্রণালয়কে মনিটর করতে হবে। কীটনাশকের ক্ষেত্রে দেশে উৎপাদনের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করতে হবে।
×