ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বারিধারাকে হারিয়ে শুভ সূচনা শেখ রাসেলের

প্রকাশিত: ১০:০২, ২১ ডিসেম্বর ২০১৯

  বারিধারাকে হারিয়ে শুভ সূচনা শেখ রাসেলের

রুমেল খান ॥ একদিকে ২০১২ আসরের চ্যাম্পিয়ন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। অন্যদিকে খর্বশক্তির অনভিজ্ঞ উত্তর বারিধারা ক্লাব। অনুমান করুন, দু’দলের লড়াইয়ের ফল কি হতে পারে। বলবেন, রাসেল বড় ব্যবধানে কুড়িয়ে নেবে জয়। হ্যাঁ, শুক্রবার ফেডারেশন কাপ ফুটবলে ঠিকই জিতেছে ‘বেঙ্গল ব্লুজ’ খ্যাত রাসেল। কিন্তু অনায়াসে জয় বরং অনেক ঘাম ঝরিয়ে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনের প্রথম ম্যাচে ‘ডি’ গ্রুপে তারা ১-০ গোলে হারায় এক মৌসুম বাদে আবারও প্রিমিয়ার লীগে ফেরা বারিধারাকে। প্রথমার্ধে দু’দলই গতিশীল ফুটবল খেলার চেষ্টা করে। রাসেল মাঝমাঠ ব্যবহার করে এবং বারিধারা উইং দিয়ে আক্রমণে যায়। রাসেলই তুলনামূলক বেশি আক্রমণ করে এবং একটি গোল আদায় করে নেয়। তবে গোল হজমের পর বারিধারা নিজেদের সামলে গোছানো ফুটবল খেলে। তাদের একাধিক আক্রমণ রাসেলের ডিফেন্সকে কাঁপিয়ে দিলেও ফিনিশিংয়ের অভাবে দুর্ভাগ্যবশত কোন গোল পায়নি। ম্যাচ শেষে বারিধারার কোচ, সাবেক জাতীয় ও তারকা ফুটবলার আলফাজ আহমেদ বলেন, ‘আমার স্ট্রাইকার ও ক্যাপ্টেন সুমন এবারই প্রথম খেলছে। স্থানীয়দের মধ্যে সাইদুল ছাড়া দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই নতুন। কোচ হিসেবে আমিও নতুন। সেই হিসেবে আমরা এই ম্যাচে তেমন খারাপ খেলিনি। এই টুর্নামেন্টটিকে আমরা প্রস্তুতিমূলক হিসেবে নিয়েছি। নেক্সটে আমরা আরও ভাল করব।’ আলফাজ জানান, তাদের এক মাসের প্রস্তুতি ছিল এই আসরে অংশ নেয়ার জন্য। এই মৌসুমে তাদের লক্ষ্য মাঝামাঝি অবস্থানে যাওয়া। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাদের আরেকজন বিদেশী খেলোয়াড় আসার কথা। এলে দলটা আরও ভারসাম্যপূর্ণ হবে। আলফাজ বলেন, ‘আজ আমরা যেভাবে খেলেছি, তাতে আমরা এক পয়েন্টও পেতে পারতাম। যে দুটি পরিষ্কার সুযোগ পেয়েছিলাম গোল করার জন্য, সেগুলো কাজে লাগাতে পারলে তিন পয়েন্টও পেতে পারতাম।’ আলফাজ খেলোয়াড়ী জীবনে স্ট্রাইকার ছিলেন। এখন তিনি কোচ। তার দলের ক্যাপ্টেন সুমন রেজাও স্ট্রাইকার। তিনি যখন এই ম্যাচে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে একা পেয়েও গোল করতে পারলেন না, তখন কেমন লেগেছিল আলফাজের? ‘মনে হয়েছিল আমি ওই মুহূর্তে মাঠে থাকলে একটু অন্যভাবে চেষ্টা করে (কাট করে) গোলটা করতে পারতাম। আসলে এত বড় দলের বিরুদ্ধে না খেলার অনভিজ্ঞতাই হচ্ছে গোল মিসের মূল কারণ। তবে আমার দলে দু’তিনজন খেলোয়াড় আছে, যারা আগামীতে জাতীয় দলে খেলার যোগ্যতা রাখে।’ আলফাজরা আছেন চার দলের গ্রুপে। ‘এখনও দুটি ম্যাচ আছে। সেগুলোতে জিততে পারলে কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়া সম্ভব।’ শেখ রাসেলের সহকারী কোচ মাসুদ পারভেজ কায়সার বলেন, ‘আমাদের হেড কোচ সাইফুল বারী টিটুর গোড়ালিতে চিড় ধরেছে। সপ্তাহ তিনেক লাগবে সুস্থ হতে। তাই আজকের ম্যাচে তাকে আপনারা ডাগআউটে দেখেননি।’ গত লীগের পর শেখ রাসেলের এটাই প্রথম কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ম্যাচ ছিল। গত মৌসুমের চার খেলোয়াড় এবার রাসেলে নেই। এ প্রসঙ্গে কায়সারের ভাষ্য, ‘নতুন যারা এসেছেন, তারাও ভাল। তবে দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাদের একটু সময় লাগবে। আজকের ম্যাচে যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সেভাবে আমরা খেলতে পারিনি। তবে প্রথম ম্যাচ জিতে তিন পয়েন্ট পাওয়াতে আমি খুশি। এ জন্য খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ। কেননা প্রতিপক্ষ যেমনই হোক না কেন, প্রথম ম্যাচ জেতা সবসময়ই অনেক চাপের ও কঠিন।’ কায়সার স্বীকার করেন টিম ডিফেন্ডিং, বিল্ড আপ, বল ট্রানজিশন ... সবকিছুতেই শেখ রাসেলের আরও অনেক উন্নতি করতে হবে। ম্যাচ নিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমার্ধে বারিধারা দুটি গোলের সুযোগ পেয়েছিল। তাদের গোলরক্ষক একটা বল দারুণ সেভ করেছে। আরেকটা বল ওরা মিস করেছে। আমরা একটি গোল করলেও অনেক মিস করেছি। টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে হলে সব বিভাগেই ভাল করতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই।’ রাসেলের মিডফিল্ডার মোঃ আবদুল্লাহ গত এক বছর চোটের কারণে খেলতে পারেননি। তবে দলের সঙ্গেই তিনি ছিলেন এবং অনুশীলন করেছেন। বৃহস্পতিবারের ম্যাচে তিনি যথেষ্ট ভাল খেলেন। তাকে নিয়ে কায়সারের মূল্যায়ন, ‘এবার খেলায় ফিরে সে অনেক ভাল খেলেছে। উইথ দ্য বল এবং সেটপিসে সে আগের মতোই ক্ষুরধার আছে। তার ভাল খেলার ব্যাপারে আমরা অনেক আশাবাদী ছিলাম। তবে বল প্লেসিংয়ের ব্যাপারে ওর এখনও কিছু দুর্বলতা রয়ে গেছে। এগুলো ওকে কাটিয়ে উঠতে হবে।’ কায়সার আরও যোগ করেন, ‘এই আসর শুরুর আগে আমরা দুটি ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলেছি ঠিকই। কিন্তু ফ্রেন্ডলি ম্যাচ আর কম্পিটিটিভ ম্যাচ খেলার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে। আমাদের গত মৌসুমের দুই ডিফেন্ডার (বিশ্বনাথ ও ইায়াসিন) এবার নেই। ডিফেন্ডারদের সঙ্গে মিডফিল্ডারের যে সমন্বয়, সেটা ঠিক করতে আমাদের আরও কয়েকটা কম্পিটিটিভ ম্যাচ খেলতে হবে।’ রাসেলের তিমুর লেস্তের ফরোয়ার্ড পেদ্রো প্রথমার্ধের শেষদিকে আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন। তার হ্যামিস্ট্রংয়ে টান পড়েছে বলে জানান কায়সার। আগামী ২ জানুয়ারি অস্ট্রেলিয়া থেকে ক্রিস্টোফার হার্ট নামের এক ফুটবলারের আসার কথা। তিনি এলে দলের শক্তিমত্তা আরও বাড়বে বলে মনে করেন কায়সার। এছাড়া বারিধারার অধিনায়ক সুমনের খেলা দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন কায়সার। ৯ মিনিটে ডানপ্রান্ত দিয়ে রাসেলের আক্রমণ। ডিফেন্ডার সোহেল রানার ডান পায়ের উঁচু ক্রস। বক্সের ভেতরে জটলার মধ্যে লাফিয়ে উঠে উজবেক ফরোয়ার্ড আযিযোভ আলিশেরের লাফিয়ে ওঠা হেডটি পোস্টে যখন প্রায় ঢুকেই যাচ্ছিল, তখনই অসাধারণ তৎপরতায় লাফিয়ে উঠে পাঞ্চ করে সেটা কর্নারে পরিণত করে বারিধারাকে গোল হজমের হাত থেকে রক্ষা করেন গোররক্ষক আজাদ হোসেন। ১৭ মিনিটে প্রতিপক্ষের ভুল পাস থেকে বল পেয়ে যান রাসেলের মিডফিল্ডার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। থ্রু পাস বাড়ান সতীর্থ নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড রাফায়েল উদোয়িনের উদ্দেশে। তিনি বল নিয়ে বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন। ওদিকে বিপদ বুঝে সামনে এগিয়ে আসেন বারিধারার গোলরক্ষক আজাদ। কিন্তু তাকে বিন্দুমাত্র কোন সুযোগই দেননি রাফায়েল। ডান পায়ের নিয়ন্ত্রিত গড় নো প্লেসিং শটে লক্ষ্যভেদ করেন (১-০)। ৩৪ মিনিটে বারিধারার আক্রমণ। গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড ল্যান্ডিং ডার্বোয়ের পাস পেয়ে বল নিয়ে রাসেলের বক্সে ঢুকে পড়েন অধিনায়ক-ফরোয়ার্ড সুমন রেজা। প্রতিপক্ষ গোলরক্ষককে একেবারে ফাঁকায় মুখোমুখি পেয়ে যান। বাঁ পায়ের যে শটটি নেন সুমন, সেটি গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা ঝাঁপিয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। ৪২ মিনিটে ডি-বক্সের সামান্য বাইরে বল পান বারিধারার মিডফিল্ডার পাপন সিং। তিনি ডান পায়ের দূরপাল্লার অথচ যে বুলেট গতির-উঁচু শটটি নেন বাঁ পায়ে, তা ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ দক্ষতায় কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন গোলরক্ষক রানা। বেঁচে যায় রাসেল। ৬৩ মিনিটে রাসেলের আক্রমণ। বক্সের ভেতরে ঢুকে গোলরক্ষককে ফাঁকায় পেয়েও গোল করতে পারেননি রাফায়েল। তার ডান পায়ের শট পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ৮৫ মিনিটে রাসেলের আক্রমণ। ডি-বক্সের ভেতরে বল পেয়ে যান আলিশের। তিনি লক্ষ্য করেন বারিধারার গোলরক্ষক অনেকটা এগিয়ে আছেন নিজের গোলপোস্ট থেকে। বুদ্ধি খাটিয়ে তিনি বলটা আলতো করে উঁচু করে তুলে মারেন গোলপোস্ট লক্ষ্য করে। গোলরক্ষক পড়িমড়ি করে পেছনে দৌড় লাগান। কিন্তু বলের নাগাল পাননি। তবে ভাগ্য ঠিকই সহায় হয় তার। বল জালে না ঢুকে সাইডপোস্টে লেগে ফিরে এলে তা ধরে ফেলেন বারিধারা গোলরক্ষক। এরপর রাসেল আরও কয়েকটি আক্রমণ করলেও তা আর সফলতার মুখ দেখেনি। রেফারি সুজিত ব্যানার্জি খেলা শেষের বাঁশি বাজালে ওই এক গোলের জয় নিয়েই পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে রাসেল। হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়ে আলফাজ আহমেদের বারিধারা।
×