ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুরে বাস-ট্রাক চালকদের কর্মবিরতি, যাত্রীদের দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৮:৪২, ২০ নভেম্বর ২০১৯

শেরপুরে বাস-ট্রাক চালকদের কর্মবিরতি, যাত্রীদের দুর্ভোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর ॥ গত ১ নবেম্বর থেকে কার্যকর হওয়া সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাতিলের দাবিতে শেরপুরে বাস, ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিক্সার চালকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এতে বুধবার ভোর থেকে শেরপুর জেলার অভ্যন্তরিণ ও দূরপাল্লার রুটে বাস, ট্রাক ও সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকার পাশাপাশি যাত্রী সাধারণ চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে পড়েছেন। জানা যায়, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর হওয়ার কারণে সারাদেশের ন্যায় সোমবার থেকে শেরপুর জেলার অভ্যন্তরিণ ও দূরপাল্লার রুটে বাস চলাচল বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন শুরু করেন চালক-শ্রমিকরা। উদ্ভুত অবস্থা নিরসনের লক্ষ্যে মঙ্গলবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুবের উপস্থিতিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের আলোচনার প্রেক্ষিতে ওইদিন বিকেল থেকে অভ্যন্তরিণসহ দূরপাল্লার রুটে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু শেরপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার দু’টি বাস ফুলপুরে অন্য চালক-শ্রমিকদের বাধা পেয়ে ফিরে আসে। ওই ঘটনার পর থেকে দূরপাল্লার আর কোন বাস চলাচল করেনি। ফলে খোয়ারপাড় থেকে স্বল্প সংখ্যক সিএনজিচালিত অটোরিক্সা শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী রুটে যাতায়াত করলেও সকল রুটে দূরপাল্লার বাসসহ ট্রাক চলাচল বন্ধ রয়েছে। চালক-শ্রমিকরা জানায়, নতুন আইনে পরিবহন শ্রমিকদের চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইনে সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে গণ্য না করে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে জামিন অযোগ্য করা হয়েছে। বিপুল অঙ্কের অর্থদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনা পরিকল্পিতভাবে ঘটে না। কিন্তু অপরাধ পরিকল্পিতভাবে ঘটে। তাই আইনটি বাতিলের দাবিতে তারা কর্মবিরতি পালন করছেন। বুধবার দুপুরে শহরের গৌরীপুর এলাকার পৌর বাস টার্মিনাল ও নবীনগর বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, দূরপাল্লার রুটের বাসগুলো সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে আছে। টার্মিনালে বেশ কয়েকজন যাত্রী থাকলেও চালকেরা কর্মবিরতি পালন করায় তারা কোথাও যেতে পারছেন না। ওইসময় আসাদুল ইসলাম নামে শেরপুর সদরের এক বাসিন্দা বলেন, তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি চাকরি করেন। ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন। আজ কাজে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চালকদের ধর্মঘটের কারণে কর্মস্থলে যেতে পারছেন না। এতে বিপাকে পড়েছেন তিনি। ডা. সেকান্দর আলী কলেজের শিক্ষক শামসুল আলম বলেন, জরুরী দাপ্তরিক কাজের জন্য তার ঢাকায় যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাস চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন। জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হান্নান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের পর তাদের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার চালকেরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। ওইদিন বিকেলে দু’টি বাস ঢাকার উদ্দেশে রওনাও দিয়েছিল। কিন্তু পথিমধ্যে অন্য চালকদের বাধা পেয়ে বাসগুলো ফিরে আসে। ফলে চালকেরা বুধবার ভোর থেকে ফের ধর্মঘট পালন করছেন। এ ব্যাপারে শেরপুরের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) এটিএম জিয়াউল ইসলাম জানান, উদ্ভুত অবস্থা নিরসনে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মালিক-চালকদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে একটি সমঝোতা হয়েছিল। সেই সমঝোতার আলোকে মঙ্গলবার বিকেল থেকে বাস চলাচল শুরু করলেও অন্য জেলার শ্রমিকদের বাধার মুখে ফের চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। তবে এখানকার অবস্থা উচ্চ পর্যায়ে জানানো হয়েছে। সমস্যাটি যেহেতু সারাদেশের, সেহেতু আমরা আশা করছি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ ও নির্দেশনায় তার আশু নিরসন হবে। সেইসাথে দুর্ভোগের কবল থেকে রক্ষা পাবেন যাত্রী সাধারণ।
×