ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তিন মাসেই ভাঙ্গন ঠেকানো জিওব্যাগুলো নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৭:২৫, ৮ নভেম্বর ২০১৯

তিন মাসেই ভাঙ্গন ঠেকানো জিওব্যাগুলো নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, বাউফল, পটুয়াখালী ॥ তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙ্গনের হাত থেকে একটি প্রাইমারী স্কুল রক্ষা করতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার পর, তিন মাস যেতে না যেতেই পাউবোর সেই ব্যাগগুলো ওই নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদী সরকারি প্রাইমারি স্কুলটি নদীর ভাঙ্গ থেকে রক্ষা করতে ২শ’ মিটার জায়গা জুড়ে গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ১৩ হাজার বাল ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়। জানা গেছে, তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন রোধে টেকসই প্রকল্প গ্রহনের দাবিতে স্থানীয় লোকজন মানববন্ধনসহ লাগাতার নানা কর্মসূচির প্রেক্ষিতে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম চলতি বছর ১৮ মে ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং তার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে নিমদী সরকারি প্রাইমারি স্কুল এলাকায় নদীর ২শ’ মিটার জুড়ে ১৩ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয় । এতে স্থানীয় লোকজনের মাঝে আশার সঞ্চার হলেও অব্যহত ভাঙনে এখন সেই জিও ব্যাগগুলো নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত উপায় জিও ব্যাগগুলো ফেলায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকার লোকজন দাবি করেন, তেঁতুলিয়া নদীর ধানদী, ডালিমা, কচুয়া ও তাঁতেরকাঠী ভাঙ্গন কবলিত পয়েন্ট থেকে জিও ব্যাগগুলো ফেলা হলে প্রকল্পটি টেকসই হতো। এখন ওই সব পয়েন্টে ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় নিমদি স্কুল পয়েন্টে এলাকায় স্্েরাতের তীব্রতা বেড়ে গিয়ে চাপ পরছে জিও ব্যাগের উপরে। যার ফলে ব্যাগগুলো নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া মা-ইলিশের প্রজননকালীন নিমদি পন্টুনে কোস্টগার্ডের জাহাজ নোঙ্গর করে রাখায় ঢাকাগামী দোতালা লঞ্চগুলো পন্টুনে না ভিড়তে পেরে জিও ব্যাগের উপর গিয়ে নোঙ্গর করায় বেশ কয়েকটি ব্যাগ ফেটে যায়। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, সঠিক ভাবে প্রকল্পের কাজ করা হয়নি। নদীর পাড়ের ভাঙ্গনের শিকার পাঁচ গ্রামের মধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা হয় নিমদি প্রাইমারী স্কুল সংলগ্ন মাত্র ২শ’ মিটার জায়গায়। যে কারণে তিন মাস যেতে না যেতেই ওই প্রকল্পের সুফলতা এখন কুফল বয়ে এনেছে। বালুভর্তি ওই জিও ব্যাগগুলো এখন নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে স্কুল ভবনটিও আবার ঝুঁকির মধ্যে পরেছে। অভিযোগ রয়েছে, জিও টেক্সটাইল নামে জিও ব্যাগ উৎপাদনকারী ঢাকার ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়মানুযায়ি প্রকল্পের কাজ করেননি। জিও ব্যাগে ৩শ’ কেজি বালু ভর্তি করার কথা থাকলেও তা করেননি। সমপরিমান কাদাবালু মিশ্রিত অবস্থায় ব্যাগগুলো সেলাই দিয়ে নদীতে ফেলেছেন। এর ফলে পানিতে ডিলেডালা হয়ে যায় অধিকাংশ ব্যাগ। নদীর ২শ’ মিটার দৈর্ঘ্য ও প্রায় নদীর ৯ মিটার গভীরে জিও ব্যাগগুলোর কথা থাকলে তীরের কাছাকাছি জায়গায় ব্যাগগুলো ফেলা হয়েছে। যার স্রোতের টানে ব্যাগের নিচের অংশ থেকে মাটি সরে গিয়ে ব্যাগগুলো নদী গর্ভে চলে গেছে। এ ভাবে চলতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই এ প্রকল্পটির সুফল বঞ্চিত হবে এলাকার লোকজন। মাহবুবুর রহমান চৌধুরি নামে একজন বলেন, ‘ সত্তর দশক থেকে তেঁতুলিয়ার অব্যহত ভাঙ্গনের কবলে পরে নাজিরপুর ইউনিয়নের নিমদী, ধানদী, ডালিমা, কচুয়া, তাঁতেরকাঠী এবং ধুলিয়াই উনিয়নের মঠবাড়িয়া ও নতুনবাজার হয়ে বাকেরগঞ্জের একটি এলাকার সহস্রাধিক বাড়ি ঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠা, জনপথসহ কয়েক হাজার একর কৃষি জমি তেঁতুলিয়া নদীর অতল গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এলাকার লোকজন ভাঙনরোধে টেকসই প্রকল্প গ্রহনের দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ও বিভিন্ন কর্র্মসূচি পালন করে করে আসছে। সেখানে নিমদি একটি স্কুল রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলার মাত্র তিন মাসের মাথায় আবার তা ভাঙনে বিলীন হচ্ছে। ভাঙ্গনকবলিত এলাকার মানুষের সাথে এ কেমন প্রহসন ? আমরা এসব এলাকার ভাঙ্গন ঠেকাতে টিকসই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুরক্ষা চাই।’
×