ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০-১১৫ টাকায়;###; আমদানি ও পাইকারি দামের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ দাম নেয়া হচ্ছে খুচরায়

পেঁয়াজের বাজার অসাধু ব্যবসায়ীদের কবলে

প্রকাশিত: ১০:১৯, ১৯ অক্টোবর ২০১৯

পেঁয়াজের বাজার অসাধু ব্যবসায়ীদের কবলে

এম শাহজাহান ॥ অসাধু ব্যবসায়ীদের কবলে দেশের পেঁয়াজের বাজার। এর খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১৫ টাকা পর্যন্ত। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে আড়ত ও মোকামগুলোতে পর্যাপ্ত পেঁয়াজের মজুদ পাওয়া যাচ্ছে। অথচ আমদানি ও পাইকারি মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ ও তিনগুণ বেশি দাম নেয়া হচ্ছে খুচরা বাজারে। তবে দাম নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজের বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। খোঁজা হচ্ছে পেঁয়াজের নতুন উৎস। ভারতের পাশাপাশি মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, আগামী দুই মাসের চাহিদা মেটানোর মতো পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। চলতি মাসের শেষ নাগাদ ভারত পেঁয়াজ রফতানি পুরোদমে আবার চালু করতে যাচ্ছে। দেশটিতে নতুন পেঁয়াজ উঠানোর প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করা হয়েছে। আর দেশে নতুন পেঁয়াজ পাওয়া যাবে মধ্য নবেম্বরে। এছাড়া মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিসরে এ বছর পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভারতের বিকল্প উৎস হিসেবে এই তিন বাজার হতে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। ফলে মজুদকৃত পেঁয়াজ বাজারে ছাড়তে বাধ্য হবে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। কারণ নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলে এসব পেঁয়াজের চাহিদা হ্রাস পাবে, কমবে দামও। মজুদবিরোধী অভিযানে শাস্তি পেলে আমদানিকারকের লাইসেন্স বাতিল করতে পারে সরকার। জানা গেছে, সারাবছর দেশে ২৪-২৫ লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা থাকে। বিপরীতে দেশে উৎপাদন হয় ২০-২২ লাখ টন। উৎপাদিত পেঁয়াজের আবার ২৫-৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে থাকে বিভিন্ন কারণে। সব মিলিয়ে ৬-৭ লাখ টন পেঁয়াজের ঘাটতি রয়েছে দেশে। অসাধু আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা সারাবছর অপেক্ষায় থাকে ভারত কখন ‘রফতানিমূল্য’ বাড়ায় সেই সময়ের জন্য। প্রতিবছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ বাজার স্বাভাবিক রাখতে পেঁয়াজের রফতানিমূল্য বাড়িয়ে থাকে। তবে এবারও গত ২৯ সেপ্টেমর ভারত রফতানি বন্ধ করার ঘোষণা দিলে মাত্র একদিনের ব্যবধানে দেশে কেজিতে ২৫-৩০ টাকা দাম বাড়িয়ে দেয় আমদানিকারকরা। এর ফলে পাইকারি ও খুচরা বাজারে দুই থেকে তিনগুণ দাম বেড়ে যায়। এখন অভিযান চালিয়েও পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এদিকে, অতিরিক্ত মুনাফার আশায় বেপরোয়া হয়ে উঠছে পেঁয়াজের ব্যবসায়ীরা। পেঁয়াজের বড় মোকাম চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব অভিযানে ব্যবসায়ীদের কারসাজির প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জরিমানা করছেন। তবে দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করা হলে তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দিন সম্প্রতি পেঁয়াজ সংক্রান্ত এক বৈঠক শেষে জনকণ্ঠকে বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। পাশাপাশি ভারতের বিকল্প মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দাম নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানা করছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রয়োজনে ব্যবসায়ীদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনা হবে। ক্রেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশে এখনও আগামী দুই মাসের চাহিদা মেটানোর মতো পেঁয়াজের মজুদ রয়েছে। ভারতে আগামী মাসের শুরুতে নতুন পেঁয়াজ উঠা শুরু হবে। বাংলাদেশে নতুন পেঁয়াজ উঠবে নবেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে। আর এ কারণে ভারত শীঘ্রই পেঁয়াজ রফতানির ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। চলতি মাসের শেষ নাগাদ ভারতের রফতানি না করার আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব কারণে মজুদকৃত পুরান পেঁয়াজ বাজারে না ছাড়লে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে ব্যবসায়ীদের। বতর্মান খুচরা বাজারে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ভালমানের পেঁয়াজ ১১০-১১৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। ভারতের পাশাপাশি অন্য তিনদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দুটি জাহাজ থেকে পেঁয়াজ খালাস করা হয়েছে। আরও দুটি খালাসের অপেক্ষায় আছে। এছাড়া তুরস্ক থেকেও পেঁয়াজবাহী জাহাজ বাংলাদেশে আসার পথে আছে। মিয়ানমার থেকে প্রতিদিন পেঁয়াজ ঢুকছে দেশের বাজারে। আর বর্তমানে দেশে যে পরিমাণে পেঁয়াজ মজুদ আছে, তা দিয়ে আগামী দুই মাস ভালভাবেই চলবে। এছাড়া এবছর নতুন পেঁয়াজের ভাল উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। পেঁয়াজ আমদানিতে বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা দিয়ে রেখেছে সরকার। এলসি সহজ করা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনে ঋণ দেয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। শুধু তাই নয়, নৌ ও স্থলবন্দরগুলোতে যাতে পেঁয়াজের দ্রুত ছাড় করা যায় সে বিষয়েও নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য আমদানি শুল্কমুক্ত রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি বাজার নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। মাঠে রয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকারসহ বিভিন্ন বেসরকারী সংগঠন। ঢাকার পেঁয়াজ বাজার খ্যাত শ্যামবাজার, মোহম্মদপুর কৃষি মার্কেট এবং মৌলভী বাজারের পাইকারি ও আড়ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ইতোমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের বৈঠকে যাননি ওই অঞ্চলের পেঁয়াজের আমদানিকারকরা। ইতোমধ্যে চট্টগ্রামে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজির প্রমাণ পাওয়া গেছে। মৌলভী বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছে, ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদফতর সম্প্রতি পেঁয়াজের সর্বনিম্ন রফতানি মূল্য প্রতি টন ৮৫০ ডলার বেঁধে দিয়ে একটি আদেশ জারি করে। পরবর্তীতে রফতানি বন্ধ করে ভারত। ভারতে মূল্য বৃদ্ধির খবরে কম দামে আনা পেঁয়াজও চড়া দামেই বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এখন ভারতের বেঁধে দেয়া দামে আমদানি হচ্ছে। এ কারণে এখন নতুন করে দাম বাড়ছে। তবে শীঘ্রই পেঁয়াজের দাম কমবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
×