ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রথম ধাপে এক লাখ শিশুকে পুনর্বাসন করা হবে

’২০ সালের মধ্যে শিশু শ্রম নিরসনে ২৮৪ কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ৫ অক্টোবর ২০১৯

’২০ সালের মধ্যে শিশু শ্রম নিরসনে ২৮৪ কোটি টাকার প্রকল্প

ফিরোজ মান্না ॥ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন সামনে রেখে সরকার ২০২০ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনে প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে এক লাখ শিশুকে পুনর্বাসন করা হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব শিশুকর্মীকে পুনর্বাসনের আওতায় নিয়ে আসবে সরকার। এ জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে প্রকল্পে ১৫ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি বেসরকারী সংস্থা প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজে হাত দিয়েছে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে জড়িত শিশুদের রক্ষা করার জন্য এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। বেশ কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠান (এনজিও) প্রকল্প বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে কাজ করবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি এনজিওকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তারা ২০২০ সালের মধ্যে একলাখ শিশুকে পুনর্বাসনের কাজ শুরু করেছে। ২০১৮ সালে এই প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। কিন্তু নানা কারণে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দেয়। তবে মন্ত্রণালয় বলছে ২০২০ সালের মধ্যে প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর এক জরিপে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৮ খাতে ১৬ লাখ ৯৮ হাজার ৮৯৪ শিশুকর্মী রয়েছে। তাদের মধ্যে ৭ লাখ ৪৫ হাজার ৬৯০ মেয়ে শিশু। শিশুশ্রমে নিয়োজিতদের ৫৭ শতাংশের কাজই অস্থায়ী। শিশুশ্রম বেশি কৃষি ও কল-কারখানায়। এসব জায়গায় ১০ লাখের বেশি শিশু কাজ করে। এ ছাড়া দোকানপাটে ১ লাখ ৭৯ হাজার, নির্মাণ কাজে ১ লাখ ১৭ হাজার শিশু কাজ করছে। বর্তমানে শিশুশ্রমে নিয়োজিত আছে এমন ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু এক সময় স্কুলে যেতো। কিন্তু পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে তারা পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়েছে। আর ১ লাখ ৪২ হাজার শিশু কখনোই স্কুলে যায়নি। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে প্রায় ১৬ কোটি ৮০ লাখ শিশু নানাভাবে শ্রম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এদের মধ্যে সাড়ে ৮ কোটি শিশু নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত রয়েছে। বাংলাদেশে শিশুশ্রম নিরসনে সরকারের উদ্যোগ দেশ-বিদেশে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি রয়েছে। এ বিষয়ে সেভ দ্য চিলড্রেনের চাইল্ড রাইটস গবর্নেন্স এ্যান্ড চাইল্ড প্রোটেকশন সেক্টর জানিয়েছে, সরকার শিশুদের জন্য ৩৮ কাজকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে গাড়ির হেলপার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এই কাজে শিশুরা বেশি টাকা আয় করতে পারে। তাকে যখন পুনর্বাসনের কথা বলা হবে, তখন তার পরিবারের জন্য অবশ্যই আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। আবার যেখানে আয় কম, সেখানে পুনর্বাসনের ভিন্ন কৌশল হাতে নিতে হবে। কোন একক পদ্ধতিতে সব ধরনের শিশুর পুনর্বাসন করা সম্ভব নাও হতে পারে। অনেক শিশুকে গ্যারেজ, রেস্টুরেন্ট জাতীয় জায়গায় কেবল সারাদিন সুরক্ষিত থাকবে ভেবে বাবা-মায়েরা কাজে দেন। এজন্য তারা কোন পারিশ্রমিকও নেন না। কর্মজীবী বাবা-মা তার শিশুটিকে একটি জায়গায় রেখে যেতে চান মাত্র। এসব ক্ষেত্রে ভিন্নভাবে ভাবতে হবে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, সরকার শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে শ্রমজীবী শিশু ও তার পরিবারের আর্থসামাজিক পুনর্বাসনের কথা যেমন চিন্তা করতে হবে । তেমনি একটি শিশুও যেন এখন থেকে কাজে নতুন করে শিশুশ্রমে যুক্ত না হয়, সে বিষয়েও সংশ্লিষ্টদের চিন্তা করা উচিত। গ্রাম থেকে যেসব কারণে শিশুরা শহরে এসে যে কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নেমে যাচ্ছে এই কারণগুলো চিহ্নিত করে গোড়াতেই তা দূর করার উদ্যোগও নিতে হবে। তা না হলে দিনে দিনে শিশুশ্রম বাড়তেই থাকবে। বিদ্যালয় থেকে অনেক শিশু প্রাথমিক অবস্থাতেই ঝরে পড়বে। ‘জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ-২০১৩’র তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু কোন না কোন শ্রমে নিয়োজিত ছিল। বর্তমানে সরকারের নানা উদ্যোগ নিয়ে এ সংখ্যা অনেক কমিয়ে এনেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপে দেখা গেছে, ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশুই বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে জড়িত। ৩৮টি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম নির্ধারণ করে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শ্রমজীবী শিশুদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশা থেকে সাধারণ শ্রমে নিযুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে দেশ থেকে অনেকাংশে শিশুশ্রম উঠে যাবে। শিশুশ্রম নিরসনে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার রয়েছে। সরকারের এই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের জন্যই শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।
×