ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ প্রহরায় ভিসির ক্যাম্পাস ত্যাগ;###;ইউজিসির তদন্ত রিপোর্ট মন্ত্রণালয়ে

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু ভার্সিটির ভিসিকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে

প্রকাশিত: ১০:২০, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

 গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু  ভার্সিটির ভিসিকে  সরিয়ে দেয়া হচ্ছে

বিভাষ বাড়ৈ ॥ সরিয়ে দেয়া হচ্ছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত উপাচার্য খোন্দকার নাসির উদ্দিনকে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সরেজমিন তদন্ত রিপোর্টে উপাচার্যের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধের প্রমাণ পাওয়ার পর এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রবিবার মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনেও উপাচার্যকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের তোলা অধিকাংশ অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এদিকে রবিবার রাত ৯টার পর পুলিশ প্রহরায় গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নিজের কোয়ার্টার থেকে গাড়িতে করে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন। তিনি ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেছেন বলে জানা গেছে। রবিবার সন্ধ্যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, ইউজিসির তদন্ত রিপোর্ট পেয়েই দ্রুত সে অনুসারে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রবিবার সকাল থেকেই পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচীতে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি, উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী ও শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন সিলেটে অবস্থান করায় এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হয়নি। আজকালের মধ্যেই তদন্ত রিপোর্ট অনুসারে উপাচার্যকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ^বিদ্যালয় শাখার কর্মকর্তারা। তবে তদন্ত রিপোর্ট অনুসারে ব্যবস্থা নেয়ার কথা আগেই জনকণ্ঠকে জানিয়েছিলেন উপমন্ত্রী উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী। কি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেছেন, শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এখন তো বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ। আমরা ইউজিসির কাছে একটি প্রতিবেদন চেয়েছি। তারা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিলে সে অনুসারেই একটা সিদ্ধান্ত হবে এবং আচার্যের সঙ্গে আলোচনা করে সে ব্যবস্থা নেব। এদিকে ইউজিসি দ্রুততম সময়ে তদন্ত কাজ শেষ করে রবিবার দুপুরে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ইউজিসি চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোঃ কাজী শহীদুল্লাহর কাছে জমা দিয়েছে। এ সময় কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. দিল আফরোজা বেগম, প্রফেসর ড. মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক মোঃ কামাল হোসেন ও একই বিভাগের উপ-পরিচালক মৌলি আজাদ উপস্থিত ছিলেন। ইউজিসি সদস্য ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি গত ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে। কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের বক্তব্য গ্রহণ করে। জানা গেছে, তদন্ত কমিটির প্রতি ইউজিসি চেয়ারম্যানের নির্দেশ ছিল, কোন দুর্বল ও অস্পষ্ট তদন্ত রিপোর্ট দেয়া যাবে না। সরাসরি বক্তব্য দিয়ে রিপোর্ট করতে হবে। চেয়ারম্যান বলেছিলেন, শিক্ষার্থীরা বিপদের মধ্যে আছে। উদ্বেগের মধ্যে আছে। তাই সময় নষ্ট করা যাবেনা। দ্রুত তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে। চেয়ারম্যানের নির্দেশ অনুসারেই কাজ শেষ করে কমিটি স্পষ্ট সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিল করেছে। কিন্তু কি আছে কমিটির প্রতিবেদনে? কমিটির একাধিক সদস্য জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন, উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে আসা অধিকাংশ অভিযোগেরই সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। কমিটি উপাচার্যকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। এছাড়া কমিটি তার বিরুদ্ধে তোলা বিভিন্ন অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে উল্লেখ করে আইনী ব্যবস্থা নেয়াসহ তিনটি সুপারিশ করেছে। কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেছেন, আমরা দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত শেষ করেছি। যেহেতু ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিত তৈরি হয়েছে, শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে-এসব বিষয় বিবেচনা করে আমরা দ্রততার সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার আগেই জানিয়েছিলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা সজাগ আছি। আমরা বসে নেই। তদন্ত কমিটি কাজ করছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর সন্ধ্যায় চেয়ারম্যান ড. কাজী শহীদুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমার কথা ছিল শিক্ষার্থীরা একটা সঙ্কটের মধ্যে আছে তাই দ্রুত রিপোর্ট করতে হবে। কোন গোজামিল রিপোর্ট করা যাবেনা। স্পষ্ট রিপোর্ট দিতে হবে। আমি মনে করি, কমিটি স্পষ্ট ও দ্রুত সময়ে রিপোর্ট দেয়ার কাজটি সুন্দর মতোই করেছে। আমি মনে করি এত দ্রুত সময়ে একটি সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নজির খুব বেশি নেই। আমরা আন্তরিক দ্রুত সমস্যাটির সমাধানের বিষয়ে। কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন তারা উপাচার্যের দ্রুত অব্যাহতির সুপারিশ করেছেন। আপনিও বলছেন স্পষ্ট রিপোর্ট। তাহলে কি অব্যাহতির সুপারিশের বিষয়টি সঠিক? এমন প্রশ্নে চেয়ারম্যান বলেন, আসলে রিপোর্ট সিলগালা করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। আমরা এর বেশি কিছু প্রকাশ করতে পারিনা। মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। তবে কমিটির সদস্যরা যদি বলে থাকেন উপাচার্যকে অব্যাহতি দেয়ার কথা তাহলে তারা ঠিক বলেছেন। মিথ্যা বলেননি। এদিকে গোপালগঞ্জ থেকে জনকণ্ঠের নিজস্ব সংবাদদাতা নীতিশ চন্দ্র বিশ্বাস জানিয়েছেন, বৈরী আবহাওয়া ও নানা প্রতিকূলতার মধ্যে গোপালগঞ্জ বশেমুরবিপ্রবি’তে ভিসির অপসারণের দাবিতে বিরতিহীন আন্দোলনের একাদশ দিনে রবিবার শিক্ষার্থীদের অনশন ও অবস্থান কর্মসূচী চলে। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের নিচে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা এক সংবাদ-সম্মেলন করে আশা প্রকাশ করেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরা মাত্রই শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এবং গোপালগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এমপিসহ শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়াসমূহ প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন। সংবাদ-সম্মেলনে তারা আরও বলেছেন যে, ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো দিন। এদিন ভিসি অপসারণের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ভিসির পেটোয়া বাহিনী হামলা চালায়। এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি ৩-সদস্যবিশিষ্ট প্রহসনমূলক তদন্ত কমিটি গঠন করে। অদ্যাবধি সে কমিটি কোন পদক্ষেপ নেয়নি বা আশানুরূপ কোন ফলও দিতে সক্ষম হয়নি। ইতোমধ্যে ওই কমিটি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। তাই এ সংবাদ-সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এছাড়াও বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়বাংলা চত্বরে ভিসির বিভিন্ন দুর্নীতি ও অপকর্মের চিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। একই স্থানে বিকেলেও তারা ভিসির বিকৃত চিত্রাঙ্কনের আয়োজন করে।
×