ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্য গোপন করে আনা হয়েছে ক্যাসিনো সামগ্রী

প্রকাশিত: ১১:২৩, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

তথ্য গোপন করে আনা হয়েছে ক্যাসিনো সামগ্রী

মোয়াজ্জেমুল হক, চট্টগ্রাম অফিস ॥ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত আমদানিনীতি আদেশের সুবিধায় দেশে ক্যাসিনোসহ জুয়া খেলার বিভিন্ন উপকরণ এসেছে। শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদফতরের চলমান তদন্তে বুধবার পর্যন্ত এ জাতীয় সামগ্রির ১৫ চালানের আমদানিকারককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তন্মধ্যে ঢাকার পুষ্পিতা এন্টারপ্রাইজের মালিক সুরঞ্জন শেখর তাপস স্বীকার করেছেন ক্যাসিনোর উপকরণ ঘোষণা দিয়েই তিনি ২০১৮ সালে এক কন্টেনার সামগ্রী আমদানি করেছেন এবং তা সোহাইল এন্টারপ্রাইজের বাণিজ্যিক স্বার্থে। এদিকে, দেশে পণ্য আমদানিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তিন ধরনের বিধান রেখেছে। তন্মধ্যে রয়েছে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য, নিয়ন্ত্রিত পণ্য ও শর্তসাপেক্ষে পণ্য আমদানি। এছাড়া দেশে জুয়া সংশ্লিষ্টবিরোধী আইনটি দেড়শ’ বছরের বেশি পুরনো। বর্তমানে যেটি চালু রয়েছে সেটি ১৮৬০ সালে প্রণীত এবং তা ‘বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন’ নামে অভিহিত। এছাড়া জুয়ার আয়োজক মালিকের এ আইনে তিন মাসের কারাদ- ও অনুর্ধ ২০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। সঙ্গত কারণে দেশে জুয়ার বিস্তৃতি বন্ধ করতে হলে আইনের পরিবর্তন সময়ের দাবি। অপরদিকে, বঙ্গীয় এ আইন রাজধানী ঢাকায় প্রয়োগের সুযোগ নেই। কেননা, আইনটি বর্তমান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) অধ্যাদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পুলিশী অধ্যাদেশে জুয়া খেলার বিরুদ্ধে জরিমানার বিধান রয়েছে মাত্র ১০০ টাকা। এদিকে, বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা শহরে যে ৬০টি ক্যাসিনোর কথা বেরিয়ে এসেছে সেখানে জুয়ার পাশাপাশি মদ বেচাকেনা ও পান এবং মানি লন্ডারিংয়ের এন্তার কারবার রয়েছে। যে কারণে ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে অর্থ, স্বর্ণ, অবৈধ অস্ত্রসহ যা বেরিয়ে এসেছে তা সচেতন সকল মহলকে বিস্মিত করেছে। শুল্ক ও গোয়েন্দা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, খেলনা সামগ্রীর নামে অধিকাংশ চালান এসেছে চীন, হংকং এবং ভারতের মুম্বাই থেকে। এ জাতীয় সামগ্রী আসার তথ্য মিলেছে। বিগত ২০০৯ সাল থেকে সাম্প্রতি পর্যন্ত ডিজিটাল গেমিংসহ বিভিন্ন নামে যেসব চালান এসেছে সেসব চালানের আমদানিকারক, ব্যাংকিং কাগজপত্রের তদন্ত চলছে। বুধবার দুই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি পুষ্পিতা এন্টারপ্রাইজ ও অপর এ-থ্রি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল। এছাড়া আরও ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে শুল্ক ও গোয়েন্দা বিভাগ সূত্র। এদিকে, ক্যাসিনো সরঞ্জামের সঙ্গে বিভিন্ন কনসাইনমেন্টে আরও ১১টি চালানের খবর মিলেছে, যা চীনের মাহাজং খেলা নামে পরিচিত। এটি চারজনে মিলে খেলতে হয়। বেটিং হয় মোটা অঙ্কের অর্থের। এছাড়াও রয়েছে রোটার গেম সেট ও পোকস সেট। ক্যাসিনোর নাম গোপন করে এসেছে রোলেট গেম টেবল, পোকার গেম, ক্যাসিনো ওয়্যার গেম টেবলসহ সকল সরঞ্জামে তথ্য গোপন ও মিথ্যা ঘোষণায়। সেসব সামগ্রীতে দেশে জুয়ার কারবার সম্প্রসারিত হয়েছে এবং বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় ব্যাপক রূপ নিয়েছে। সূত্র মতে, চট্টগ্রাম বন্দর, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বেনাপোল স্থলবন্দর, কমলাপুর আইসিডির মাধ্যমে এসব সামগ্রী আমদানি হয়ে আসার এ পর্যন্ত তথ্য মিলেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানিনীতি অনুসারে এসব পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ, নিয়ন্ত্রিত, শর্তসাপেক্ষে কোনটিতেই পড়ে না। কেননা, এখানে জালিয়াতির ঘটনাটি ঘটেছে ক্যাসিনো শব্দ, জুয়া বা দেশের আইনবিরোধী কোন শব্দ ব্যবহার না করে।
×