ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কানাডার আদালতে রায়ের পর ফের আবেদন করব ॥ আইনমন্ত্রী

খুনী নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরাতে আরও একধাপ অগ্রগতি

প্রকাশিত: ১১:০৪, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

খুনী নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরাতে আরও একধাপ অগ্রগতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনী নূর চৌধুরীর স্ট্যাটাস (অবস্থান সংক্রান্ত তথ্যের বিধি নিষেধ) তুলে নিতে বাংলাদেশের আবেদন মঞ্জুর করেছে কানাডার আদালত। আদালতের রায়ে খুনী নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরানোর উদ্যোগে একধাপ অগ্রগতি হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন দেশের আইন বিশেষজ্ঞরা। ফেডারেল কোর্টের বিচারক ও’রেইলি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য প্রশাসনকে এই নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, কানাডার কোর্ট আমাদের পক্ষে রায় দিয়েছে এবং খুনী নূর চৌধুরীর স্ট্যাটাস প্রকাশের বাধাগুলো দূর হয়েছে। আমরা কানাডার অভিবাসনমন্ত্রীর কাছে আগেও আবেদন করেছিলাম। শীঘ্রই আবারও আবেদন করব, যাতে তারা নূর চৌধুরীর স্ট্যাটাস প্রকাশ করে। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ এ বিষয়ে বলেন, কানাডা সরকার নূর চৌধুরীর অবস্থান জানাক, এরপর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কানাডার আদালত ডিরেকশন দিয়েছে, দেখা যাক কর্তৃপক্ষ কি বলে। এর বেশি তো আর কিছু বলা যাবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আইনী পথে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে সরকার। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন, কানাডার ফেডারেল আদালতের রায়ে বঙ্গবন্ধুর খুনী নূর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আরও একধাপ এগিয়ে গেল। প্রচলিত আইনেই বলা আছে, খুনীরা কোনক্রমেই বিচারের হাত থেকে রেহাই পাবে না। কানাডার ফেডারেল আদালত রায়ে বলা হয়, নূর চৌধুরীর অবস্থান জানতে চেয়ে বাংলাদেশ যে আবেদন করেছে তা বৈধ। এ ধরনের তথ্য প্রকাশ জনস্বার্থের জন্য ক্ষতির কারণ হবে না। ঘাতক নূর চৌধুরী কানাডায় কিভাবে আছে ও ‘প্রি-রিমুভ্যাল রিস্ক এ্যাসেসমেন্টের’ (পিআরআরএ) আবেদন কী পর্যায়ে আছে সে বিষয়ে বাংলাদেশকে কানাডা কোন তথ্য দিচ্ছে না অভিযোগ করে গত বছরের জুনে ‘জুডিসিয়াল রিভিউর’ (বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা) আবেদনটি করা হয়। কানাডার উচ্চ আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করে বলছে, কানাডা কর্তৃপক্ষ ও নূর চৌধুরীর বিষয়ে বাংলাদেশকে তথ্য না দেয়ায় যেসব যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। আর তাই বাংলাদেশের আবেদন আবার বিবেচনা করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালতের রায়ে আরও বলা হয়, নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী ’৯৬ সালে কানাডায় ‘ভিজিটর’ স্ট্যাটাস পায়। এর কিছুদিন পরই তারা ‘রিফিউজি প্রটেকশনের’ (শরণার্থী হিসেবে সুরক্ষা) আবেদন করে। ’৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দায়ে বাংলাদেশে ফেরার হিসেবে নূর চৌধুরীর বিচার হয় এবং সেখানে দোষী সাব্যস্ত হয়। এছাড়া, গুরুতর ‘অরাজনৈতিক’ অপরাধে নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী ২০০২ সালে ‘রিফিউজি প্রটেকশন’ সুরক্ষা থেকে বাদ পড়ে। তবে নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়নি। বাংলাদেশে ফিরলে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হতে পারে এমন যুক্তি দেখিয়ে নূর চৌধুরী ‘প্রি-রিমুভ্যাল রিস্ক এ্যাসেসমেন্টের’ জন্য অনুরোধ করেছে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সেনাবাহিনীর একদল উচ্চাভিলাসী সদস্যের হাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ইনডেমনিটি অধাদেশ জারি করে তদানীন্তন সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যার পথ রুদ্ধ করে দেয়। অবশেষে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু করে। ২০০৯ সালে উচ্চ আদালতের বিচার প্রক্রিয়া শেষে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ ও মুহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি কর্নেল (অব) সৈয়দ ফারুক রহমান প্রাণভিক্ষার আবেদন করলেও সিদ্ধান্ত হয় জাতির পিতাকে হত্যার মতো জঘন্য অপরাধের আসামিকে প্রাণভিক্ষা দেয়া যায় না। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে, কারাগারে থাকা পাঁচ খুনীর ফাঁসির আদেশ কার্যকর এবং একজন বিদেশে মারা গেলেও, বাকি ছয় আসামি নয় বছর ধরে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এর মধ্যে এএম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী অবস্থান করছে কানাডায়। শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তান অথবা হংকংয়ে। তার পাকিস্তানের পাসপোর্ট রয়েছে বলে জানা গেছে। রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ও আব্দুল মাজেদ চৌধুরী ভারতে, কর্নেল (অব) আব্দুর রশিদ লিবিয়া, রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। লে. কর্নেল (অব) আজিজ পাশা ২০০২ সালে জিম্বাবুইয়েতে মারা গেছে।
×