ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

একনেকে ৮ হাজার ৯৬৮ কোটির আট প্রকল্প অনুমোদন

প্রকল্পের কেনাকাটায় সতর্ক থাকতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

প্রকাশিত: ১০:৫১, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

প্রকল্পের কেনাকাটায় সতর্ক থাকতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসা পাওয়া সহজ করতে প্রত্যেকটি বিভাগীয় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি করে ১০০ শয্যার পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার হাসপাতাল স্থাপন করা হবে। বিভাগীয় শহরগুলোতে ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপনসহ আটটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। একনেক বৈঠকে প্রকল্পের পণ্যের দাম নির্ধারণে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়াও মান বজায় রেখে সড়কের কাজ করার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। মঙ্গলবার শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদনকালে এই নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯৬৮ কোটি ৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৮ হাজার ৯৫২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ১৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা খরচ করা হবে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। সে সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব নুরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম এবং শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গীসসহ অন্যরা। সম্প্রতি বিভিন্ন প্রকল্পের পণ্য কেনায় অস্বাভাবিক মূল্যের চিত্র উঠে এসেছে। এরকম পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের পণ্যের দাম নির্ধারণে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বিষয়টি গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরে বলেন, প্রকল্পে বিভিন্ন পণ্যের অস্বাভাবিক দামের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আনেন তিনি। তখন প্রধানমন্ত্রী পণ্যের দাম নির্ধারণে আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন আইটেম থাকে, পণ্যের দাম থাকে, সেগুলোর দাম আরও সাবধানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। তাড়াহুড়া করে, দ্রুত কাজ করতে গিয়ে সেগুলো ভালভাবে খতিয়ে দেখতে পারি না। সেগুলোর মূল্য ভালভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা অহেতুক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চাই না। আমরা পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সাবধান হতে নির্দেশনা দিয়েছি। প্রকল্পের যে কোন পণ্যের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাজার যাচাই করে দাম নির্ধারণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর অন্য নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রকল্প শেষ হওয়ার আগেই তা সংশোধনের প্রয়োজন হলে করতে হবে। কিন্তু শেষ হওয়ার পর যেন সংশোধনীর জন্য না আসে সে নির্দেশনাও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী গুণগতমান বজায় রেখে সড়কের কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, রাস্তাঘাট প্রশস্ত করার ক্ষেত্রে রাস্তার পাশে গরিব মানুষের বাড়ি, জমি রক্ষা করতে হবে। বাড়িঘর যাতে যাতে ভেঙ্গে ফেলা না হয় সে বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে হবে। প্রয়োজনে এ্যালাইনমেন্ট পরিবর্তন করে হলেও অন্য পাশ দিয়ে রাস্তা ঘুরিয়ে নিতে হবে। তারপরও বাধ্য হয়ে মানুষের ঘরবাড়ি ভাংতে হলে তাদের উদারভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিদ্যুত আমদানি রফতানি নিয়েও কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ঝারখ- থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুত লাইন নির্মাণ করা হবে, সেটা দিয়ে শুধু আমদানিই নয়, ভবিষ্যতে হয়তো আমরা রফতানিও করতে পারব। এ সময় প্রকল্প তদারকি করতে আইএমইডিকে শক্তিশালী করতেও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়ও, কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিমানবন্দর করা হবে। কারণ এটি পর্যটনসহ বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক রুটের কৌশলগত স্থানে রয়েছে। এদিকে মঙ্গলবার অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি হলো ‘বিভাগীয় শহরে সরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য অধিদফতর ব্যয়ে ২০২২ সালের মধ্যে তা নির্মাণ করবে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিভাগ রয়েছে আটটি। এই আটটি বিভাগীয় সদরেই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। অর্থাৎ সেক্ষেত্রে আরও আটটি ক্যান্সার হাসপাতাল হতে যাচ্ছে দেশে। শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভার পর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে কারও যদি ক্যান্সার রোগ হয়, তা শুরুতেই যেন নির্ণয় করা যায় এবং সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিত করা যায়, সেই উদ্দেশেই এ প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ক্যান্সার চিকিৎসায় বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ও এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি। এই প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) এর সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের তথ্য উল্লেখ করা হয়। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখ ৫০ হাজার লোক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। প্রতি বছর এক লাখ ৮ হাজার লোক ক্যান্সারে মারা যায়। এ সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। ঢাকার মহাখালীতে ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে শয্যার সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ করা হয়েছে ইতোমধ্যে। যেখানে রেডিওথেরাপির আধুনিক যন্ত্রপাতিও সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও ঢাকার বাইরে বগুড়া মেডিক্যাল হাসপাতালে রেডিওথেরাপির সর্বাধুনিক লিনিয়ার এক্সিলারেটর মেশিন সংযুক্ত করা হয়েছে। তবে বিভাগীয় পর্যায়ে আটটি মেডিক্যাল কলেজের সবগুলোতে পূর্ণাঙ্গভাবে ক্যান্সার বিকিরণ চিকিৎসা, কেমোথেরাপি ব্যবস্থা চালু নেই। বেসরকারী কয়েকটি ক্যান্সার হাসপাতাল থাকলেও সেগুলোর চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় গরিব মানুষ সেখানে চিকিৎসা সেবা নিতে পারেন না বলেও উল্লেখ করা হয় প্রকল্প প্রস্তাবে। এমন পরিস্থিতিতে এ প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ক্যান্সারের প্রাদুর্ভাব বেশি হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্পটি অনুমোদনের ক্ষেত্রে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করেননি। ভেজাল খাবারসহ নানা কারণে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একে প্রতিরোধ করা জরুরী। অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ ফুলপুর-নকলা-শেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৮৫৫ কোটি টাকা। রাজশাহী-নওহাটা-চৌমাসিয়া সড়কের বিন্দুর মোড় হতে বিমান বন্দর হয়ে নওহাটা ব্রিজ পর্যন্ত পেভমেন্ট চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩২৬ কোটি টাকা। রাজশাহী মহানগরীর উপশহর মোড় থেকে সোনাদিঘী মোড় এবং মালোপাড়া মোড় থেকে সাগরপাড়া মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১২৬ কোটি টাকা। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা। জুনোসিস এবং আন্তঃসীমান্তীয় প্রাণিরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। স্ট্রেংদেইনিং মনিটরিং এ্যান্ড ইভালুয়েশন ক্যাপাবিলিটিজ অব আইএমইডি প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৬৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। ভারতের ঝাড়খ- থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুত আমদানির লক্ষ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর থেকে মনাকষা সীমান্ত দিয়ে ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২২৫ কোটি টাকা। একনেক সভায় উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা।
×