ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জীবন পরিবর্তনের মন্ত্র

প্রকাশিত: ১২:২৫, ৩০ আগস্ট ২০১৯

জীবন পরিবর্তনের মন্ত্র

আপনি হয়ত বিষণœতায় ভুগছেন আপনার কিছু ভাল লাগে না সবকিছু অর্থহীন মনে হয় জীবনটাকে বোঝা মনে হয়। মনে হয় আপনি সবার চেয়ে অনেক পিছিয়ে। আপনি যা চাচ্ছেন তা পারছেন না অন্যরা এগিয়ে যাচ্ছে এ সমস্ত ভাবনা আমাদের প্রথমে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেয় তারপর ধীরে ধীরে নানা শারীরিক ব্যাধি সৃষ্টি করে এবং আমরা ধীরে ধীরে নিজ পরিবার থেকে, বন্ধু থেকে, সমাজ থেকে এমনকি নিজের থেকেই নিজে আলাদা হয়ে যাই। এ সমস্যা থেকে আমরা কিভাবে মুক্তি পেতে পারি এ জন্য আমাদের আদৌ কি কিছু করণীয় আছে? নাকি কিছুই করার নেই? কেন আমি ধীরে ধীরে কিভাবে এভাবে একটি জালের মধ্যে একটি সীমাবদ্ধ ক্ষেত্রে জড়িয়ে যাচ্ছি আর কিভাবেই বা আমি এর থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি? হ্যাঁ এই সমস্যা এই জটিলতা এই অসফলতা এই মানসিক পীড়ন থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় আছে। এর সমাধান হয়ত আপনার নিজের হাতেই আছে। আমরা নিজেই জানি না আমরা কিভাবে নিজেকে চালিত করছি। নিজের অজান্তেই আমাদের অবচেতন বা সাবকনসাস মাইন্ড ভুল জিনিসকে, মিথ্যা জিনিসকে সত্য ভেবে আমাদের মানসিক ও শারীরিকভাবে পঙ্গু করে দিচ্ছে। ঋৎঁংঃৎধঃরড়হ ও উবঢ়ৎবংংরড়হ থেকে বের হয়ে আসার কি কোন পথ নেই? অবশ্যই রয়েছে এবং তা আপনি নিজেই করতে পারেন। সে জন্য আপনাকে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হবে না বড় বড় ডাক্তারের কাছে যেতে হবে না আপনি নিজেই নিজেকে, নিজের চিন্তাকে নিজের ইচ্ছাকে নিয়ন্ত্রণ করে এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারেন। চলুন দেখা যাক আমরা কিভাবে এই সমস্ত সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারি। কী কারণে আমাদের এই মানসিক পীড়ন? হতে পারে রেজাল্ট ভাল হচ্ছে না, আপনার চেয়ে পাশের বাড়ির কেউ একজন ভাল জায়গায় সুযোগ পেয়ে গেল, আপনি চাকরিতে অন্যদের চেয়ে বসের কাছে কম সমাদর পান, আপনি প্রেমে ব্যর্থ বা আপনার ব্যবসার উপার্জন কমে যাচ্ছে ইত্যাদি বিষয়। আপনার কি মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সফল মানুষটি সব দিক দিয়ে সফল? অবশ্যই নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে সফল মানুষটিরও অনেক অপূর্ণতা রয়েছে। আসলে পরিপূর্ণভাবে কেউ সফল নয়। তাই বিচলিত হওয়ার তেমন কিছু নেই। অনেক কিছু করব তা না ভেবে যা আছে সেটাকেই আমি অনেক গ্রহণযোগ্য করে তুলব এটা যদি হয় আপনার মূলমন্ত্র তবে আপনি আর ধুঁকবেন না। নিজেকে কখনই অপারগ, দুঃখী, দুর্বল, বঞ্চিত, অসফল ভাবনে না। না পাওয়াটা প্রকাশ না করে যারা সফল তাদের সঙ্গে মিশে যান দেখবেন আপনি অনেক সবল বোধ করবেন। সবারই না পাওয়া আছে যারা বুদ্ধিমান তারা তা প্রকাশ করে না। সেখান থেকে বের হয়ে আসে। আমার জীবনই শুধু দুঃখে ভরা এটা ভাবা খুবই বোকামি আর মানসিক দুর্বলতার প্রকাশ। আপনি যারা সফল তাদের কাতারে মিশে গেলে প্রথমে হয়ত তারা আপনাকে গ্রহণ করবে না কিন্তু ধীরে ধীরে তারাও আপনাকে তাদের কাতারের লোক ভাবতে শিখবে। এভাবে নিজেকে উজ্জীবিত করতে পারবেন। একটি কাজে অসফল হলে আমরা অধৈর্য হয়ে পড়ি তাই প্রয়োজনে একাধিক কাজের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিন। কখনই ধৈর্য হারাবেন না। নানা কাজে জড়িয়ে কাজে বৈচিত্র্য আনুন। বিখ্যাত কাউকে অনুকরণ করলেই বিখ্যাত হওয়া যায় এই ধারণা ভুল। যারা বিখ্যাত হয়েছে তারা আর দশ জনকে অনুসরণ করে বিখ্যাত হয়নি নিজের চেষ্টায় অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে তবেই বিখ্যাত হয়েছে। তাই কৌতূহল, জিজ্ঞাসা, জানার চেষ্টা, একবার না পারলে ভেঙ্গে না পড়ে; নিজেকে সামলে নিয়ে, ধীরে ধীরে এগিয়ে যান। আসলে আমরা কাজের চেয়ে ভাবনার জগতে বেশি বাস করি। মনে করি ভাবলেই, চিন্তা করলেই সব কিছুর সমাধান হয়ে যাবে। মনে মনে ভাবি যদি রাজা হতাম কত আরাম, আয়েশ, কত প্রতিপত্তি নিয়ে বাস করতাম। কিন্তু বাড়ির পাশে পতিত জমিটি আবাদ করে যে সোনা ফলানো যায় তা অনেকের মাথায় আসে না। যাদের আসে তারাই হয় সফল। কোন কাজকেই ছোট করে দেখবেন না। এক শ’ তলায় লিফট ছাড়া উঠতে গেলে একটা একটা করে সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। তাই সময় নিন। আপনার কোন বন্ধু হয়ত আপনার চেয়ে ভাল করছে সে ডাক্তার হয়ে গিয়েছে বা ইঞ্জিনিয়ার কিংবা দেখা গেল কেউ ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করছে অথবা আপনার সহকর্মী একই চাকরি করে তিনি অন্যভাবে বা পরিশ্রম করেই হোক, অনেক উপরে উঠে গেছেন। এমন লোক রয়েছে কোন কারণে তিনি জীবনে সফলতা পেয়েছেন এক সময় আপনাকে সমান চোখে দেখত কিন্তু এখন আপনাকে অবজ্ঞা করছে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করছে এটা আপনার জন্য খুবই মানসিক চাপের কারণ কিন্তু সবার ক্ষেত্রে তা ঘটেনা কারণ সবাই জীবনকে সমানভাবে দেখে না একেক জন একেক ভাবে জীবনকে দেখে; কেউ হয়ত তার বন্ধু তার সহকর্মী তার প্রতিবেশী অনেক বেশি সফল হয়েছে এটা নিয়ে কিছুই চিন্তা করবে না কিন্তু আবার কেউ তার প্রতিদ্বন্দ্বী এগিয়ে যাওয়ায় তার সফলতায় ঈর্ষা, লজ্জা হিংসায় জ্বলবে অথবা ভাববে অন্যরা তাকে আর এখন মূল্য দেবে না। তো এই সমস্ত ব্যাপার থেকে আপনি কিভাবে বের হয়ে আসবেন, মানসিকভাবে কিভাবে শক্তিশালী থাকবেন, ভারসাম্যপূর্ণ’ থাকবেন? এ জন্য আপনাকে খুব বেশি কিছু করতে হবে না। হয়ত একটি দিনই আপনাকে পুরো পাল্টে দেবে হয়ত টাকা পয়সা, যশ-খ্যাতি দিয়ে নয় কিন্তু মানসিকভাবে আপনাকে অনেক শক্তিশালী রাখবে সুস্থ রাখবে যা আপনার স্বাভাবিক জীবনযাপন ও ভবিষ্যত উন্নতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন হয়ত পড়ালেখায় ভাল করছে, একজন হয়ত অর্থনৈতিকভাবে অনেক উপরে উঠে গেছে, একজন হয়ত জীবনে অনেক সফল হয়েছে বিখ্যাত হয়েছে কিংবা খ্যাতি পেয়েছে আর আপনি তা দেখে ভাবছেন আপনি তাদের কাছে খুবই নগণ্য তুচ্ছ আসলে এটা আপনার মানসিক হীনম্মন্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনার নিজেরও এমন কিছু ক্ষমতা রয়েছে এমন কিছু পারদর্শিতা রয়েছে যা অন্য কারও নেই; তাই অন্যরা কিভাবে বিখ্যাত হলো সফল হলো জীবনে এগিয়ে গেল তা নিয়ে চিন্তা না করে আপনি নিজে কিভাবে নিজেকে এগিয়ে নিতে পারবেন তা নিয়ে চিন্তা করুন। অন্য কেউ বা কিছু নয় আপনার সব ভাবনার বিষয় হোন আপনি নিজেই। তাহলে দেখবেন অন্যের ওপরে উঠে যাওয়া সফলতা এগুলো আপনাকে ভাবাবে না। আপনার হয়ত নিজের এমন কিছু গুণ আছে যা অন্যের নেই আর আপনাকে অন্যের মতোই হতে হবে অন্যের মতো না হলে জীবন বিফল এই চিন্তাগুলো খুবই নেগেটিভ চিন্তা। আপনি আপনার নিজস্ব সৃষ্টিশীল চিন্তা আপনার শক্তি আপনার মেধা কাজে লাগিয় হয়ত ছোট কাজ করেই অন্যের চেয়ে অনেক বেশি দূর এগিয়ে যেতে পারেন আর অন্যরা কী করল এই চিন্তা যদি আপনার মাথায় থাকে তাহলে আপনি নিজে কিছু করতে পারবেন না। অন্যকেই শুধু মূল্যায়িত করবেন। আপনি ভাবুন আপনি নিজে কী করলেন, কী করছেন, আজ কী করলেন, আগামীকাল কী করবেন। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সমান শারীরিক, ক্ষমতা, দুটি হাত আর কাজ করার শক্তি ও বুদ্ধি দিয়ে পাঠিয়েছেন। ভেবে দেখুন তো পৃথিবীতে কতজন ডাক্তার আছে, ইঞ্জিনিয়ার আছে নিশ্চয়ই লাখ লাখ। সবার নাম কি সবাই জানে? ছোট্ট একটা মোবাইল মেকার নষ্ট মোবাইল ঠিক করে তার দিন কাটে কিন্তু একজন সচিবও তার কাছে দায়বদ্ধ তাকে ছাড়া তার নষ্ট, গুরুত্বপূর্ণ মোবাইটি অচল। তা হলে বোঝা যাচ্ছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠার অনেক পথ রয়েছে আমরা হয়ত নিজেই তা জানি না কিংবা আমরা প্রথাগত পথ আঁকড়ে ধরে থাকি এবং ভাবি এভাবেই আমাদের উন্নতি লাভ করতে হবে। কিংবা তার মতো হতে হবে এক্স, ওয়াই, জেড যাদের সবাই সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে, সামাজিক প্রতিপত্তি বেশি কিন্তু এটি ভুল ধারণা। আমরা নিজেরাই পাল্টে ফেলতে পারি আমাদের নিজেকে আরও বেশি যোগ্য ভেবে গুরুত্বপূর্ণ ভেবে অন্যরা আমাদের নিয়ে কী ভাবলা সেটা চিন্তা না করে আমাদের নিজেকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে, ভাবতে হবে আমি কী করতে পারি এবং অবশ্যই আমি চেষ্টা করলে অনেক কিছু করতে পারব এই আত্মবিশ্বাসটি থাকতে হবে। নিজেকে নিয়ে প্রশ্ন করুন গত এক বছরে আপনি কতটা চেষ্টা করেছেন। নিজের উন্নতি করার চেষ্টা করেছেন নাকি শুধু ভেবেছেন কিভাবে অন্যরা এত এগিয়ে গেল এত উন্নতি লাভ করল। বাংলায় একটি কথা আছে ‘যত মত তত পথ’ তাহলে আপনার মতামত যদি ভিন্ন হয় তবে আপনি ভিন্ন পথে তৈরি করে নিতে পারবেন। শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হলো একজনকে শুধু আর্থিকভাবে লাভবান করা নয় উচ্চ শিক্ষা মানুষকে শারীরিক, মানসিক এবং আত্মিক প্রশান্তি দান করে এবং এভাবে সে তার নিজের ভালর ব্যাপারে, চমৎকার জীবন গঠনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। আবার এমনও ব্যক্তি রয়েছেন যারা স্বশিক্ষিত। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটিতে কতটি বই পড়ানো হয় ১৪০টি ১৫০টি। কিন্তু এমনও লোক রয়েছেন যিনি সারা জীবনে শত শত বই পড়েছেন। কোন একাডেমিক শৃঙ্খলায় না থেকে। তিনি নিজেই নিজেকে শিক্ষিত করে তুলেছেন। এই ব্যক্তিটির ক্ষেত্রে কী বলবেন? পৃথিবীর মাটির উপরে যত সোনা-মণি-মুক্তা রয়েছে তার চেয়ে মাটির নিচে সাগরতলে আরও বেশি মণি-মুক্তা-সম্পদ রয়েছে। তাহলে আমরা যেটা দেখি সেটাই কি সব? আপনাকে ভাল রেজাল্ট করতেই হবে এমনটা বাধ্যতামূলক নয়। তাহলে এখন আমরা কি করতে পারি? আমরা কি করতে পারি তা জানার আগে চলুন একটু অন্য বিষয়ে আলোচনা করি। ধরুন বাংলাদেশে যদি কবি নজরুল, লালন শাহ জন্ম না নিত তাহলে তাদের এত সৃজনশীল কর্ম আমরা কি পেতাম? পেতাম না। কিন্তু শুধু তারা জন্ম নেননি তারা স্রোতের প্রতিকূলে গিয়ে একেবারে নিঃস্ব থেকে এমন কর্ম সৃষ্টি করে রেখেছে গেছেন যাতে তাদের যুগ যুগ এমনকি শত শত বছর ধরে মানুষের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে থাকছেন। তাহলে তারা কিভাবে পারলেন এবং তারা দুজনেই কোন ধরনের একাডেমিক শিক্ষা নেননি। মানে প্রথাগত পড়ালেখা করেননি। তারা খুবি, তুচ্ছ, অবহেলিত থেকে এত উপরে উঠে গেল; তা কিভাবে সম্ভব হলো? এটা সম্ভব হয়েছে তাদের মানসিক শক্তি-সামর্থ্য এবং তাদের সৃজনশীলতাকে অন্য কোনভাবেই নষ্ট হতে না দিয়ে কোন দিকে কর্ণপাত না করে তারা এগিয়ে গিয়েছেন নিজের মতো করে এবং অবশ্যই তাদের মাঝে নিষ্ঠা, সততা, কঠোর পরিশ্রম কাজ করেছিল। তারা একবিন্দু সময়ও তাদের ধ্যান, জ্ঞান, সাধনা ছাড়া অন্য কিছুতে ব্যয় করেননি। আবার যদি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা ধরা হয় তিনি হয়ত বিত্তশালী পরিবারের ছিলেন তার বাবা মা তাকে ইংল্যান্ডে পাঠিয়েছিলেন ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য। কিন্তু ইংল্যান্ড তার ভাল লাগেনি তিনি ব্যারিস্টার হননি তিনি ইংরেজী সাহিত্যের বোদ্ধা হননি। তিনি দেশে ফিরে এসেছেন আবার সেই বাংলা সাহিত্যই চর্চা করেছেন। উৎকণ্ঠিত হবে না আপনি ঠা-া মাথায় কাজ করে যান সমস্যা হলে হতেই পারে আপনি ইচ্ছা করলে কি সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন? ভেবে দেখুন জীবনে কতবার সমস্যা এসেছে কিন্তু কিছু সমস্যা জেনে এসেছে কিছু না জেনে কিছু হয়ত আপনার ভুলে। আপনি সব সময় চিন্তা করবেন যাতে ভবিষ্যতে ভুল না হয় বা ভুল কম হয়। ভুল হয় না পৃথিবীতে এমন মানুষ একটিও নেই। সে হতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি কিংবা হতে পারে সবচেয়ে বোকা। চালাক জ্ঞানী চতুর সবাই ভুল করে। তাই নিজেকে ছোট ভাববেন না বোকা ভাববেন না। আর উৎকণ্ঠা থেকে দূরে থাকার একটি উপায় হচ্ছে আপনি নিজেকে আনন্দিত রাখুন একটু মজা করুন। হয়ত গান শুনতে পারেন একটি কৌতুক অভিনয় দেখতে পারেন একটি মজার বই পড়তে পারেন। তা হলে দেখবেন আপনার মন অনেক সতেজ হয়ে গিয়েছে এবং আপনি টেনশন থেকে অনেকটাই বের হয়ে আসবেন। আর যখন টেনশন থেকে বের হয়ে আসবেন তখন দেখবেন আপনার ভুল কম হবে। রবীন্দ্রনাথ তার একটি গানে বলেছেন ‘সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরই অপমান’ মানে আমরা যদি সঙ্কুচিত হয়ে থাকি যদি ভয় পাই এই অপমান অন্য কারও নয় আমাদের নিজেরই। অবশ্যই আমাকে ছলচাতুরী অসৎ উপায়ে কাউকে ঠকানো যাবে না; তাহলে আমি মানসিকভাবে নিজের কাছেই নিজে অপরাধী হয়ে পড়ব তাই নিজের কাছে প্রথমে নিজেকে শুদ্ধ হতে হবে সৎ হতে হবে সত্য হতে হবে। আমাদের আগে নিজেকে নিজের মনকে জানতে হবে একটি স্থায়ী স্থির সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং কাজ করে যেতে হবে। নজরুল বলেছেন ‘মিথ্যা শুনিনি ভাই এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই।’ তাহলে আমাদের হৃদয় যদি এত মহৎ হয়ে থাকে এত সুন্দর হয়ে থাকে, এত পবিত্র হয়ে থাকে, আমরা কি তাকে ব্যবহার করে এগিয়ে যেতে পারি না? অবশ্যই পারি। আপনি একাকী বসুন শুধু নিজেকে নিয়েই ভাবুন। আমি কিভাবে কাজ করলে আরও এগিয়ে যেতে পারব হয়ত সেটি একদিনে হবে না, এক সপ্তাহে হবে না, এক মাসে হবে না, হয়ত সেটি হতে এক বছর দুই বছর বা দশ বছর সময় লাগবে। যেমন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত গায়ক হাসান বলেছেনÑ আমি দশ বছর গান গাচ্ছি না। নিজে গাই কিন্তু সেই গান কাউকে শোনাই না। তিনি জনপ্রিয় হওয়ার পরেও আবার ১০ বছর সময় নিয়েছেন নিজেকে তৈরি করার জন্য তাহলে আমরা কি একটি মাস ৬ মাস একটি বছর ব্যয় করতে পারি না নিজেকে সফল করে তোলার জন্য? আমার বিশ্বাস আমরা যদি অন্যরা কি করল তা না ভেবে আমি নিজে কি করতে পারি তা ভাবি সেভাবে কাজ করি তাহলে আমরা অবশ্যই সফলকাম হব আসুন আমরা সেভাবেই ভাবতে শিখি নিজের মতো কাজ করি অন্যের দ্বারা চালিত না হয়ে অন্য দ্বারা ভাবিত না হয়ে নিজের যে চিন্তা শক্তি আছে সেটা দিয়েই ভাবি নিজের দুটি হাত আছে সেটি দিয়ে কর্ম করি। আপনার বাড়ির পাশে নিশ্চয়ই ফাঁকা জায়গা পড়ে রয়েছে সেখানে আপনি কয়েকটি গাছ লাগান তার ফল পাবেন তেমনি আজকে যে কাজ শুরু করবেন নীরবে-নিভৃতে সে কাজে ফল পাবেন হয়ত আজ নয় কাল নয় পরশু নয় অবশ্যই নিশ্চয়ই একদিন। ইংরেজীতে দুটো কথা আছে নো দাই সেলফ ‘মানে নিজেকে জানো’ আর একটি কথা ‘হেল্প দাই সেলফ’ মানে নিজেকে সাহায্য কর। আপনাকে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসবে না কারও মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকলে চলবে না। আপনাকে আপনি সাহায্য করতে পারেন অন্য কেউ এসে আপনার জীবন বদলে দেবে এটা ভাবা, নিজেকে তুচ্ছ ভাবা, ছোট ভাবা, অকর্মণ্য ভাবা। তাই অন্যের দিকে তাকিয়ে না থেকে নিজের দিকে তাকান। আমরা নিজেরাই অনেক কিছু করতে পারব অন্যের সাহায্য ছাড়া। আরেকটি চিন্তা করতে হবে, আমি অন্যর সাহায্য নেব না বরং অন্যকে সাহায্য করব। তাহলে দেখবেন ধীরে ধীরে আপনি কেমন যোগ্য হয়ে উঠেছেন অন্যের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছেন। আপনার এলাকা থেকে ঢাকা যাওয়ার রাস্তা যেমন একটি নয় অনেকগুলো রয়েছে আপনার জীবন আরও সামনের দিকে এগিয়ে চলার অনেকগুলো রাস্তা রয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কোন্টাকে গ্রহণ করবেন আর কোন্টা করবেন না। আবার রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গে আসি। তিনি তার একটি গানে বলেছেন ‘ক্লান্তি আমার ক্ষমা কর প্রভু, পথে যদি পিছিয়ে পড়ি কভু’ রবীন্দ্রনাথ এখানে স্রষ্টার কাছে বলছেন যে তিনি যেন ক্লান্ত না হন তিনি যেন পিছিয়ে না পড়েন। যদি আমাদের মানসিক শক্তি থাকে যদি আমরা আমাদের চারিত্রিক কাঠিন্যকে কাজে লাগাতে পারি যদি আমরা লজ্জিত না হয়ে নিজেদের বঞ্চিত না ভেবে কুণ্ঠিত না থাকি তাহলে আমরা পিছিয়ে থাকব না। তাই আমাদের একটি থিওরি মেনে চলতে হবে তা হচ্ছে সিম্পল লিভিং হাই থিনকিং মানে আমাদের জীবনযাত্রা যত সাধারণ হোক আমাদের চিন্তা-চেতনা হবে উঁচু মানের। আমাদের বিচলিত হওয়ার আরেকটি কারণ রয়েছে সেটি হচ্ছে আমরা বর্তমানকে নিয়ে না ভেবে সবসময়ই অতিতে কী ভুল করেছি আর ভবিষ্যতে কী হবে সেই ভাবনায় আচ্ছন্ন থাকি। কিন্তু অতীত ও ভবিষ্যত এই চিন্তা কখনই আমাদের জন্য শুভ কিছু বয়ে আনতে পারে না। সে জন্য আমরা সব সময়ই বর্তমানে বয়ে চলা এই সময়ে কি করছি চারদিকে কী ঘটছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলব। তাহলে আমরা বিভ্রান্তিতে পড়ব না। বিষয় নিয়ে ভাবনার দরকার নেই। সেগুলোই আমাদের মাথায় বেশি চলে আসে এবং আমাদের চিন্তার কেন্দ্রবিন্দুকে আঘাত করে। এতে আমরা অস্থির হয়ে যাই; বলতে পারি যখন এটা বেশি মাত্রায় হয় আমরা অনেকটাই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ি। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত রুটিন মেনে কাজ, একটা টার্গেট নিয়ে কাজ, প্রতিদিন হাঁটলে, প্রতিদিন হাসলে এবং না বলতে শিখলে, যে কোন বিষয়ে অস্থির না হলে আমাদের শরীরে এমন হরমোন নিসৃত হয় যা আমাদের মানসিকভাবে সুস্থ রাখে ও দৃঢ়চেতা রাখে। পরিশেষে নিজিকে নিজেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিন আমি এই সময়ের মধ্যে এই কাজটি করবই এবং করতে থাকুন নিরলসভাবে; দেখবেন আপনার মাথা থেকে অনেক বাজে চিন্তা দূর হয়ে গেছে। তাই সুস্থ, সুন্দর, সতেজ, ভারসাম্যপূর্ণ থকতে হলে একটাই কথা ভাববেন তা হলো নিজেকে নিয়েই ভাবুন; চারপাশের ঘটে যাওয়া অসংখ্য ঘটনায় নিজেকে না জড়িয়ে নিজের জন্য যে কাজ করবেন সেটাই গুরুত্বপূর্ণ ভেবে এগিয়ে যান সফল, সবল, শক্তিশালী, ঋজু মানসিকতার দিকে।
×