ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গাইবান্ধা জেলা হাসপাতাল এখন নিজেই অসুস্থ

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ৩০ আগস্ট ২০১৯

গাইবান্ধা জেলা হাসপাতাল এখন নিজেই অসুস্থ

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ২৯ আগস্ট ॥ মূল ড্রেনের মুখ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতায় তীব্র দুর্গন্ধ এবং চরম অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালটি এখন নিজেই অসুস্থ। ফলে আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীসহ ওয়ার্ডগুলোতে ভর্তিকৃত রোগীদের হাসপাতালে অবস্থান করা দুঃসহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসপাতালের চারপাশে পরিবেষ্টিত মূল ড্রেনটি নির্মাণ কাজের পাথর দিয়ে ভরাট হয়ে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ওই ড্রেনে জমানো পানি হাসপাতালে চারপাশে উপচে পড়ে এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও তীব্র দুর্গন্ধের সৃষ্টি করছে। তদুপরি এই ড্রেনের জমানো পানিতে অবলীলাক্রমে মশারা বংশ বৃদ্ধি করে চলেছে। যা ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গু রোগের সহায়ক হয়ে উঠছে। এছাড়া হাসপাতালের চারপাশে জমে রয়েছে নানা বর্জ্য। যা থেকেও দুর্গন্ধ হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো এবং চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। গাইবান্ধা পৌরসভার প্যানেল মেয়র তানজিমুল ইসলাম পিটার হাসপাতালে অসুস্থ রোগীদের দেখতে গিয়ে এহেন অবস্থায় নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ পরিস্থিতির উন্নয়নে তিনি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আসাদুজ্জামানের কাছে অভিযোগ করলে তিনি উল্টো পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে ড্রেনটির উন্নয়ন করার অনুরোধ জানান। এ ব্যাপারে প্যানেল মেয়র সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালটিতে বিরাজমান দুর্গন্ধে রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে পৌরসভার মেয়র এ্যাড. শাহ মাসুদ জাহাঙ্গীর কবীর মিলন বলেন, গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালের ড্রেন নির্মাণ, সংরক্ষণ, ভবন নির্মাণ, ভবনের উন্নয়ন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের গণপূর্ত বিভাগের। এটা পৌরসভার আওতাধীন নয়। এতদসত্ত্বেও জনস্বার্থে পৌরসভা থেকে হাসপাতালটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রতিদিন দু’জন পরিচ্ছন্ন কর্মী সেখানে নিয়োজিত রয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, হাসপাতালের উন্নয়ন ও নতুন ভবনের জন্য প্রায় ৩৭ কোটি টাকার একটি চলমান প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এতদসত্ত্বেও এই ড্রেনটির সংস্কার বা উন্নয়ন কেন হচ্ছে না তা বোধগম্য নয়। এদিকে রোগের চাপে বেহাল ২৫০ বেডের এই হাসপাতালটি। বেডে ঠাঁই না পেয়ে ওয়ার্ডের মেঝেতে এবং করিডরগুলোর দু’পাশে বিছানা পেতে চিকিৎসাধীন রয়েছে রোগীরা। হাসপাতালের ওয়ার্ডে এবং করিডোরে পা ফেলারও তিলমাত্র স্থান নেই। তদুপরি ভর্তিকৃত রোগীদের দেখতে আসা আত্মীয়-স্বজন এবং পরিচর্যাকারীদের ভিড় এবং প্রতিনিয়ত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও সঙ্গীদের এই হাসপাতালটি সর্বক্ষণই যেন একটি জনাকীর্ণ বাজারে পরিণত হয়। এতে চিকিৎসা নিতে আসা গুরুতর অসুস্থ রোগীদের চরম বিপাকেও পড়তে হয়। তদুপরি এহেন অবস্থায় হাসপাতালে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার লেশমাত্রও খুঁজে পাওয়া দায়। গোটা হাসপাতাল চত্বরে চারপাশে ফেলা বর্জ্য এবং টয়লেটের দুর্গন্ধে টেকা দায় হয়ে পড়ে। এই বিরুদ্ধ এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই চিকিৎসা নিতে হয় রোগীদের। এ ব্যাপারে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ড্রেনটির মুখে জমা পাথরের কারণে ড্রেনে জলাবদ্ধতা এবং পানি উপচে পড়ে এই দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মীরসরাই নিজস্ব সংবাদদাতা মীরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহজ সরল পথটি দিয়ে দীর্ঘদিন সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ এর মধ্য দিয়ে চলাচল করছে। শুধু রোগী ও সাধারণ মানুষ নয় একটি বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসাসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ও একই সড়কের কাদা মাটি পার হয়ে যাতায়াত করছে। মীরসরাই উপজেলার একমাত্র সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৮নং দুর্গাপুর ইউনিয়নের মস্তাননগরে অবস্থিত। সাড়ে ৪ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য যা বিকল্পহীন হাসপাতাল। যানবাহনের সুবিধার জন্য মহাসড়ক দিয়েই দূর-দূরান্তের যাত্রীরা চলাচল করতে হয় বলে অধিকাংশ রোগীরাই এখন হাসপাতালের পেছনের পূর্ব পার্শ্বের মহাসড়কেই নেমে এই রাস্তা দিয়ে হাসপাতালে আসে। আবার কয়েকটি গ্রামের সাধারণ মানুষের যাতায়াত, শাহ কালা প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করে। কিন্তু মাত্র কোয়ার্টার কিলোমিটারের এই রাস্তাটি কালের বিবর্তনের পর আজও কাঁচা থেকে যাওয়ায় রোগীসহ সর্বসাধারণকে কাদা মাড়িয়েই যেতে হয় হাসপাতালে, বিদ্যালয়ে কিংবা গন্তব্যে। আর খুব অসুস্থ রোগী হলে কোলে বা কাঁধে করেই নিয়ে যেতে হচ্ছে। শিশুরাও চলাচলের অনুপযোগী সড়কটি। উক্ত সড়ক দিয়ে মঙ্গলবার পথচারী মনছুরা বেগম (৪৫) জানায়, আমি শিশু আবরার (৬) কে ডাক্তার দেখাতে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কাদার জন্য কোলে করে নিয়ে যাচ্ছি। অপর পথচারী সাইফুল ইসলাম (৩৪) বলে আমার বাড়ি সোনাপাহাড় গ্রামে, প্রতিদিন জোরারগঞ্জ যেতে হয় এই রাস্তা দিয়ে কাদা মাড়িয়ে। পূর্ব পার্শ্বের সোনাপাহাড়, ওপাশের হাজিশ্বরাই এর সকলেই এই রাস্তা দিয়ে কাদা পেরিয়েই যেতে হয়। এই বিষয়ে দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান বিপ্লব বলেন, এই রাস্তাটির পাকা করা প্রয়োজন চলাচলকারী সকলের কল্যাণে, শীঘ্রই এই বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। মীরসরাই উপজেলা প্রকৌশলী আহসান হাবিব জানান এই রাস্তাটি উন্নয়নের বিষয়ে আমি শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব, আর এতে আশা করছি শীঘ্রই মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
×