ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গঠন করা হচ্ছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি;###;এমওইউ সই কাল ;###;সৌর বিদ্যুত ৪৫০ ও বায়ু বিদ্যুত ৫০ মেও;###;চারটি এলাকা নির্বাচিত

৫ শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত ॥ অবশেষে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে

প্রকাশিত: ১০:২০, ২৬ আগস্ট ২০১৯

৫ শ’  মেগাওয়াট বিদ্যুত ॥ অবশেষে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে

রশিদ মামুন ॥ নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আসছে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত। দীর্ঘদিনের জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে এজন্য গঠন করা হচ্ছে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) রিনিউএবল। বাংলাদেশ এবং চীনের সরকার পর্যায়ে গঠিত এই কোম্পানি দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করবে। এর মধ্যে ৪৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুতের সঙ্গে থাকবে ৫০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুত। আগামীকাল মঙ্গলবার বিদ্যুত উৎপাদনের নতুন এই কোম্পানি গঠনের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হবে। এমওইউ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ এবং চীনের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোম্পানি গঠনের বিষয়ে বিদ্যুত বিভাগের প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। জানা গেছে, ৫০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য চারটি এলাকাকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে। জমির প্রাপ্যতা, সৌর রশ্মি, বায়ু প্রবাহ এবং গ্রিডের দূরত্ব বিবেচনায় নিয়ে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা এবং পায়রাকে বিদ্যুত উৎপাদনের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পাবনা, সিরাজগঞ্জ এবং পায়রাতে তিনটি বড় কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, জীবাশ্ম জ্বালানি ভয়ঙ্কর পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করছে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোও জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদন কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে। জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে মোট বিদ্যুত উৎপাদনের অন্তত ১০ ভাগ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এখন দেশে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। দশ শতাংশ হারে হিসাব করলে দেশে এখন ২ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুত থাকার কথা ছিল। কিন্তু দেশে গ্রিড সংযুক্ত সৌর বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ৩৩ মেগাওয়াট। এর বাইরে সোলার হোম সিস্টেম থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হয় বলে সরকার দাবি করছে। তবে এই দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সরকার এসডিজি বাস্তবায়নে বেসরকারী খাতের অংশ গ্রহণে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনের চেষ্টা করে। তবে উদ্যোক্তারা নবায়নযোগ্য খাত থেকে বিদ্যুত উৎপাদনে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি। চীনকে সঙ্গী করে নতুন এই উদ্যোগে বিদ্যুত বিভাগ আশার আলো দেখছে। মনে করা হচ্ছে এবার সত্যিকার অর্থেই নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদনে গতি আসবে। নতুন এই কোম্পানিতে দেশীয় কোম্পানি নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট এ্যান্ড ইমপোর্ট কোম্পানির (সিএমসি) সমান অংশীদারিত্ব থাকছে। অর্থাৎ বাংলাদেশ সরকার এবং চীন সরকার সমানভাবে এই কোম্পানির অংশীদার। জানতে চাইলে এনডব্লিউপিজিসিএল-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, আমরা পাবনা ৬০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুত এবং পায়রা ৫০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুত দিয়ে কোম্পানির কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে পাবনা এবং পায়রার বিদ্যুত কেন্দ্রের বিষয়ে সম্ভাব্যতা জরিপ চলছে। আগামী মাসের মধ্যে সম্ভাব্যতা জরিপের কাজ শেষ হবে। তিনি বলেন, এছাড়া সিরাজগঞ্জ এবং গাইবান্ধায় আরও জমি অধিগ্রহণের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে আগামী ২ বছরের মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করা হবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সরকার অনেক দিন থেকেই অকৃষি খাস জমিতে সৌর বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করে আসছিল। কিন্তু সরকারী সংস্থাগুলো অকৃষি খাস জমির সংস্থানে ব্যর্থ হয়। এই প্রথম পাবনাতে ৬০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুতের জন্য ২০৫ একর অকৃষি খাস জমির সংস্থান করা সম্ভব হয়েছে। পাবনার সুজানগরের চররামকান্তপুর মৌজায় কেন্দ্রটির জন্য জমি দিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়। এভাবে চরের অকৃষি জমিতে সৌর বিদ্যুত উৎপাদন করা সম্ভব হলে দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এজন্য শুধু বিদ্যুত বিভাগের ওপর একা দায়িত্ব দিলেই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। মনে করা হয় বিদ্যুত বিভাগের সঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি যৌথ কমিটি গঠন করে জমি অনুসন্ধানে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া জরুরী বলে মনে করা হয়। এনডব্লিউপিজিসিএল-এর প্রকল্প পরিচালক (নবায়নযোগ্য জ্বালানি) প্রকৌশলী মোহাইমেনুল ইসলাম বলেন, পাবনায় প্রাথমিকভাবে ৬০ মেগাওয়াটের কেন্দ্র নির্মাণ করা হলেও এখানে আরও ১৪০ মেগাওয়াট কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় জমি রয়েছে। এছাড়া সিরাজগঞ্জে ১০০ মেগাওয়াটের একটি কেন্দ্র নির্মাণের জমি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আমরা চেষ্টা করছি আগামী বছর শেষ নাগাদ দুটি কেন্দ্রের বিদ্যুত গ্রিডে যোগ করতে। আশা করা যায় এই সময়ের মধ্যে আমরা অন্তত ২০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুত গ্রিডে দিতে পারব। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট করে দুটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। যার প্রথম ইউনিট আগামী ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসছে। নতুন এই কোম্পানি গঠনের ফলে এবার কয়লা থেকে সৌর এবং বায়ুতে বিদ্যুত উৎপাদন করবে কোম্পানিটি।
×