ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাড়তি ভাড়ায় বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু

প্রকাশিত: ১০:১৮, ২৭ জুলাই ২০১৯

 বাড়তি ভাড়ায় বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে প্রথম দিনেই বাড়তি দামে বিক্রি শুরু হলো বাসের অগ্রিম টিকেট। তাছাড়া এসি বাসের টিকেট ও কাক্সিক্ষত পরিবহনের টিকেট না পাওয়ারও অভিযোগ করেছেন সাধারণ যাত্রীরা। আট থেকে ১১ আগস্টের টিকেটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। শুক্রবার সকাল থেকেই দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বাসের অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু করে নামী-দামী পরিবহন কোম্পানিগুলো। বৃষ্টি উপেক্ষা করে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে ভোর থেকেই কাউন্টারের সামনে দাঁড়ান নগরীর মানুষ। প্রথম দিন হলেও কাউন্টারের সামনে বেশ চাপ ছিল। অনেকে তিন থেকে চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট পেয়েছেন। এবারও নামী-দামী প্রতিটি বাস কোম্পানি অনলাইনে টিকেট কাটার ব্যবস্থা রেখেছে। নারীদের জন্য রাখা হয়েছে পৃথক কাউন্টার। যাত্রীদের সুবিধার্তে অঞ্চলভিত্তিক টিকেট বিক্রির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পরিবহন মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আট থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত চারদিনের অগ্রিম টিকেট দেয়া হচ্ছে। তবে কিছু কিছু কাউন্টারে এক আগস্ট থেকেই মিলছে অগ্রিম বাসের টিকেট। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর কল্যাণপুর, শ্যামলী ও গাবতলীর বাস কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও কমেনি টিকেট প্রত্যাশীদের ভিড়। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই কাউন্টারগুলোতে আসছেন তারা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দীর্ঘ হতে দেখা যায় কাউন্টারগুলোর সামনের লাইন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এবার অঞ্চলভিত্তিক ভাগ করে চারটি আলাদা কাউন্টারে টিকেট বিক্রি হচ্ছে। তবুও চাপ কম নয়। আশরাফুল আলম নামে টিকেট কাটতে আসা এক ব্যক্তি জানান, ‘দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর কাক্সিক্ষত টিকেট হাতে পেয়েছি। আমি ৯ আগস্টের তিনটি টিকেট কিনেছি। এবার সপরিবারেই বাড়ি যাব।’ শ্যামলী পরিবহনের টিকেট প্রত্যাশী বিল্লাল হোসেন জানালেন, এসি বাসের টিকেটের দামের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। কোম্পানিগুলো ইচ্ছে মতো এসি বাসের টিকেটের দাম হাকাচ্ছে। যাত্রীরা বাধ্য হয়ে তা কিনছেন। এস আলম পরিবহনের যাত্রী আলাল হোসেন জানালেন, দীর্ঘ লাইন। লম্বা দুর্ভোগ। বৈরী আবহাওয়ার কথা বিবেচনায় না নিয়ে টিক্রেট বিক্রি শুরু করেছে কোম্পানিগুলো। কিছু কিছু কাউন্টারের সামনে তাঁবু দেখা গেলেও তা ভিড় অনুযায়ী পর্যাপ্ত নয়। অনেক কাউন্টারের সামনে তাঁবুও নেই। হানিফ পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার সবুজ বলেন, আমাদের টিকেট বিক্রিতে কোন ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। আসাদগেট, শ্যামলী ও কল্যাণপুর থেকে অঞ্চলভেদে টিকেট বিক্রি হচ্ছে। প্রথম দিন হিসেবে আজ একটু চাপ আছে। তবে সব রুটেরই পর্যাপ্ত টিকেট রয়েছে। টিকেট কাটতে আসা আসলাম জানালেন, তিনি যশোর যাবেন। কিন্তু ভাড়া দিতে হবে সাতক্ষীরা পর্যন্ত। ৮ আগস্ট বিকেলের টিকেটের জন্য এসপি গোল্ডেন লাইনের কাউন্টারে এসেছেন। কিন্তু বিকেলের টিকেট সব বিক্রি হয়ে গেছে। তাই ওই দিন রাতের টিকেট কিনতে হয়েছে। বাড়তি ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেন দিনাজপুর ও রংপুরের যাত্রীরাও। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদের সম্ভাব্য দিন ১২ আগস্ট। এই হিসাব ধরেই অগ্রিট টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় পরিবহন কোম্পানিগুলো। ৯ ও ১০ আগস্ট শুক্র-শনিবার দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি। এরপর ১১ থেকে ১৩ আগস্ট রবি, সোম ও মঙ্গলবার ঈদের তিন দিনের ছুটি। ১৪ আগস্ট বুধবার অফিস খোলা থাকলেও অনেকেই ঐচ্ছিক ছুটি নিচ্ছেন। চাঁদ ওঠার কারণে ঈদ এক দিন পিছিয়ে গেলে বুধবার ঐচ্ছিক ছুটি নেয়ার প্রয়োজনও পড়বে না। বৃহস্পতিবার ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সরকারী ছুটি। ১৬ ও ১৭ আগস্ট শুক্র ও শনিবার আবার সাপ্তাহিক ছুটি। টানা নয় দিনের ছুটি উপভোগ করতে ঘরমুখী মানুষ আগেভাগে রাজধানী ছাড়বেন। তারা ফিরবেনও ধীরে সুস্থে। নয় দিনের লম্বা ছুটিতে অনেকে আবার ধীরে সুস্থে বাড়ি ফিরবেন। তাই বাস মালিকেরাও খানিকটা স্বস্তিতে। এসপি গোল্ডেন লাইনের স্বত্বাধিকারী জুনায়েদ হোসেন লস্কর বলেন, ঈদের টিকেটের জন্য ৭ আগস্ট রাতের বেলা যাত্রীদের চাহিদা রয়েছে। তবে ৮ আগস্ট দুপুরে টিকেটের চাহিদা বেশি। ৯ আগস্টও একই অবস্থা। তবে ১০ আগস্টে তুলনামূলক কম রয়েছে। তবে যাত্রাপথের চিন্তায় কপালে ভাঁজ রয়েছে জুনায়েদ হোসেনের। তিনি বলেন, পুরো বর্ষার সময় এবারের ঈদের ছুটি পড়েছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে ফেরিঘাটের অবস্থা ভাল নয়। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ফেরিতে বাস পারাপারে সময় বেশি লাগছে। এই অবস্থা এখনও কাটেনি। ঈদের সময় কোরবানির পশুবাহী ট্রাকও পারাপার হবে। তাই বাড়তি ট্রিপ দেয়া হবে না। যাত্রীরা জানিয়েছেন, ঈদের আগাম টিকেট দেয়া শুরু হলেও ১ আগস্ট থেকে বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। এসি বাসের টিকেটের মূল্য লাগামহীন। ১ হাজার টাকার এসি বাসের টিকেট ১ হাজার ৩৫০ টাকা, ১ হাজার ২০০ টাকার টিকেট ১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গাবতলীতে হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন জানান, সারা বছর বাসের টিকেট ছাড় দিয়ে কম দামে বিক্রি করা হয়। ঈদের সময় বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়া রাখা হয়। এসি বাসের টিকেটের ভাড়া বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাস মালিকেরা জানান, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এসি বাস আনা হয়। এগুলো দামের পার্থক্য রয়েছে। তাই টিকেটের দামেও পার্থক্য থাকে। ২৯ জুলাই থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট ॥ ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট আগামী ২৯ জুলাই থেকে বিক্রি শুরু করবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ২৯ জুলাই টিকেট বিক্রি শুরু হয়ে, চলবে ২ আগস্ট পর্যন্ত। ১২ আগস্ট ঈদ-উল-আজহার সম্ভাব্য দিন ঠিক করে অগ্রিম টিকেটে বিক্রির তারিখ নির্ধারণ করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ২৯ জুলাই প্রথম দিন দেয়া হবে ৭ আগস্টের টিকেট। ৩০ জুলাই ৮ আগস্টের, ৩১ জুলাই ৯ আগস্টের, ১ আগস্ট দেয়া হবে ১০ আগস্টের এবং ২ আগস্ট বিক্রি হবে ১১ আগস্টের টিকেট। রেলপথ মন্ত্রী জানান, এবার ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর কমলাপুর ছাড়াও আরও চারটি জায়গা থেকে টিকেট সংগ্রহ করা যাবে। এবারও ৫০ ভাগ টিকেট বিক্রি হবে অনলাইনে। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট মিলবে বিমানবন্দর স্টেশনে। রাজধানীর তেজগাঁও রেল স্টেশন থেকে পাওয়া যাবে ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী ট্রেনের টিকেট। নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট বিক্রি হবে বনানী স্টেশন থেকে। গুলিস্তানের রেল ভবন থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী ট্রেনের টিকেট পাওয়া যাবে। রেলমন্ত্রী জানান, টিকেটের ৫০ শতাংশ বিক্রি হবে কাউন্টার থেকে বাকি ৫০ শতাংশ মোবাইল এ্যাপ এবং অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে কাউন্টারে টিকেট বিক্রি শুরু হবে, চলবে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত। তবে মোবাইল এ্যাপস এবং অনলাইনে টিকেট সকাল ছয়টা থেকে বিক্রি শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রেলপথ মন্ত্রী। ঈদ-উল-ফিতরের আগে মোবাইল এ্যাপসের মাধ্যমে টিকেট কিনতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি হয়েছে। এবারের ঈদের আগে টিকেট কিনতে গেলে এমন হবে কিনা এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সিএনএসবিডি তাদের সক্ষমতা আগের চেয়ে বাড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত ঈদের পরে আমরা তাদের সঙ্গে বসেছিলাম, তারা আমাকে জানিয়েছে এ্যাপসের মাধ্যমে টিকেট বিক্রির সক্ষমতা বাড়িয়েছে। ঈদ-উল-ফিতরের সময় প্রতি মিনিটে তাদের সার্ভার ১৫ হাজার হিট নিতে পারত। এবার প্রতি মিনিটে এক লাখ হিট নিতে পারবে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণের জন্য আমরা একটি কমিটি করে দিয়েছি।
×