ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এসএমই খাতে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার তাগিদ

প্রকাশিত: ১০:৪২, ৩০ জুন ২০১৯

এসএমই খাতে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার তাগিদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) উদ্যোক্তাদের অভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। এসএমইকে সকল শিল্পের ‘মা’ আখ্যায়িত করে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, এসএমই বাঁচলে সব ইন্ডাস্ট্রির বিকাশ ঘটবে। আর এ কারণে এ শিল্প খাতকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে স্বল্প সুদ ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের উদ্যোগ নেয়ার ওপর তাগিদ দেয়া হয়। শনিবার রাজধানী বিজয় নগরীর একটি হোটেলে ‘এসডিজি-২০৩০ অর্জনে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পপণ্যের ব্যবসা সম্প্রসারণের গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাক্ট বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল ও বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির যৌথ উদ্যোগ সেমিনারটির আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউসেপ বাংলাদেশের পরিচালক মোঃ হাবিবুর রহমান। এছাড়া এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সভাপতি মোঃ মুনতাকিম আশরাফ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামী পাঁচ বছরে দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে ৩০ লাখ লোককে কাজ দিতে হবে। এই বিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হলে এ মুহূর্তে এসএমই খাতের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প উন্নয়ন ও বিকাশে সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া প্রয়োজন। উদ্যোক্তাদের জন্য কমন ফ্যাসিলিটি তৈরি করা, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে অগ্রসর জেলাসমূহে পরিকল্পিত শিল্পপার্ক ও শিল্প সহায়ক অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট ও এ্যাপ্রোচ বিবেচনা করা যেতে পারে। এছাড়া ফাউন্ড্রি ও মেশিনিংয়ে উন্নত প্রযুক্তির সম্প্রসারণ ঘটানো, দেশে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে শক্তিশালী বাজার তৈরি, সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে ব্যবহৃত মৌলিক কাঁচামালের ওপর উচ্চ আমদানি শুল্ক উল্লেখযোগ্য হারে কমানো, আমদানি প্রতিযোগিতা মোকাবেলা এবং পরিবর্তনশীল প্রযুক্তি ধারণ ও প্রয়োগ ও দক্ষ লোকবল গড়ে তোলার জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ সেন্টার স্থাপন করতে হবে। এছাড়া পণ্যের মান উন্নয়নের লক্ষ্যে টেস্টিং সেন্টার স্থাপন করতে হবে। এছাড়া এসএমই শিল্প নীতিমালা তৈরি করার ওপরও জোর দেয়া হয়। মুনতাকিম আশরাফ বলেন, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র ও মাঝারি এন্টারপ্রাইজগুলোর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা অনস্বীকার্য। এ খাত শ্রমঘন এবং উৎপাদন সময়কাল স্বল্প হওয়ায় জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে দ্রুত অবদান রাখতে সক্ষম। এক্ষেত্রে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো বিশেষ করে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূল করা এবং নারী-পুরুষর সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে এ খাত ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম। এশিয়ার বেশকিছু সমৃদ্ধশালী দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসএমই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া বিশ্বের অন্য দেশও এসএমইর ওপর ব্যাপক গুরুত্বারোপ করছে। এসএমইর মাধ্যমেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, আয় বৈষম্য কমিয়ে আনা, দারিদ্র্য বিমোচন সম্ভব। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী উদ্যোক্তা পর্যায়ে ক্লাস্টার অর্থায়নের আওতায় সম্ভাবনাময় অঞ্চলে সুনির্দিষ্ট খাত বা ক্লাস্টারভিত্তিক এসএমই অর্থায়ন কর্মসূচী চালু রয়েছে। ক্লাস্টার খাতে এসএমই নীতিমালার আওতায় নারায়ণগঞ্জের জামদানি শিল্প, বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জে মণিপুরী তাঁত, লেবু, আনারস, পান, মধু চাষ, বাঁশ ও বেতের সামগ্রী মৃৎশল্প, বগুড়ায় হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কক্সবাজার ও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ, সাতক্ষীরা অঞ্চলে হাতে বোনা শিল্প খাতে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড অঞ্চলভিত্তিক ক্লাস্টার অর্থায়ন করছে। ক্লাস্টারভিত্তিক অর্থায়নের লক্ষ্যে এরই মধ্যে বেশকিছু খাত-ক্লাস্টার নির্বাচন করা হয়েছে এবং ওইসব খাত-ক্লাস্টারে অর্থায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বগুড়া অঞ্চলে হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড গুচ্ছ আকারে এসএমই ঋণ বিতরণ করছে। এভাবে প্রতিটি ব্যাংক এগিয়ে এলে সারাদেশে এসএমই শিল্পের বিকাশ ঘটবে।
×