ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তি পেলেন গণতন্ত্রপন্থী ছাত্রনেতা জসুয়া

প্রকাশিত: ০৯:১৯, ১৮ জুন ২০১৯

মুক্তি পেলেন গণতন্ত্রপন্থী  ছাত্রনেতা জসুয়া

জেল থেকে সোমবার মুক্তি পাওয়ার পর হংকংয়ের প্রখ্যাত গণতন্ত্রপন্থী ছাত্রনেতা জসুয়া ওং শহরটির প্রধান নির্বাহী ক্যারি লামের পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ২০১৪ সালে গণতন্ত্রের সমর্থনে বিক্ষোভে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন। ওই আন্দোলন থেকে শহরটির জন্য নিজেদের নেতা নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। এদিকে বিতর্কিত বিলটি পুরোপুরি বাতিল ও তার পদত্যাগের দাবিতে জোর বিক্ষোভের মুখে ক্যারি লাম ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। বিবিসি। হংকংয়ের জনগণ একটি বিতর্কিত বিলের বিরুদ্ধে সম্প্রতি আবারও রাস্তায় নেমে আসে। ওই বিলে হংকংয়ের বাসিন্দাদের মূলভূখ- চীনে সমর্পণের অনুমতি দেয়ার কথা রয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ওং আরও বিক্ষোভের আয়োজন করবেন এবং লামের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন। আয়োজকরা বলছেন, শনিবার লাম বিলটি স্থগিত করা সত্ত্বেও তার পদত্যাগ ও বিলটি পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে রবিবার ২০ লাখের ওপরে লোক বিক্ষোভে অংশ নেন। তবে পুলিশ দাবি করছে বিক্ষোভকারীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৩৮ হাজার। ‘আমব্রেলা মুভমেন্ট’ নামে পরিচিত বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দুটি ভিন্ন মামলায় ওংয়ের কারাদ- হয়। এক মাসের সাজা কমায় তিনি সোমবার মুক্তি পান। এদিকে হংকং কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা যান চলাচল স্বাভাবিক করতে সোমবার সকালে পার্লামেন্টের বাইরের একটি প্রধান সড়ক থেকে সরে গেছে। পুলিশ সকালে ওই ব্যস্ত সড়ক থেকে বিক্ষোভকারীদের সরে যাওয়ার অনুরোধ জানালে তারা কোন প্রকার সংঘর্ষ ছাড়াই সেখান থেকে সরে যায়। এরপর বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশই নিকটবর্তী একটি পার্কে অবস্থান নেয়। অপরদিকে হংকংয়ে লাখো মানুষের উত্তাল বিক্ষোভের মুখে ক্ষমা চেয়েছেন ক্যারি লাম। রবিবার লাখ লাখ বিক্ষোভকারী কালো পোশাক পরে রাস্তায় নেমে ক্যারি লামের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে এবং বিতর্কিত বিলও পুরোপুরি বাতিলের দাবি জানায়। এ পরিস্থিতিতেই এক বিবৃতিতে হংকং-এর জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন ক্যারি লাম। সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, বিলটি নিয়ে সরকারের কার্যক্রম সমাজে বিতর্ক এবং বিরোধ সৃষ্টি করেছে। এতে জনমনে হতাশা এবং ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘লাম হংকংয়ের জনগণের কাছে এর জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। সমাজে সমালোচনাকে সৎসাহস ও বিনয়ী মনোভাব নিয়ে গ্রহণ করে নেয়া এবং আরও ভালভাবে জনগণের সেবা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।’ বিচারের জন্য বাসিন্দাদের চীনের মূলভূখণ্ডে পাঠানোর সুযোগ রেখে হংকং সরকারের প্রত্যর্পণ বিল পাসের পরিকল্পনা নিয়ে গত সপ্তাহ থেকে হংকংয়ে কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ ও সহিংসতা দেখা দিয়েছে। গণআন্দোলনের মুখে হংকং সরকার ওই পরিকল্পনা স্থগিতের ঘোষণা দিলেও প্রতিবাদকারীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা হংকংয়ের ওপর বেজিংয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় উদ্বেগ জানিয়েছে। রবিবার বিক্ষোভকারীদের কারও কারও হাতে ‘গুলি করো না, আমরা হংকংয়ের নাগরিক’ লেখা ব্যানার দেখা গেছে। এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এই বাণিজ্য নগরীতে গত বুধবার বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছোড়ে। রবিবার অনেকে পুরো পরিবার নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। এদিন সেন্ট্রাল হংকংয়ের সড়কগুলো যেন কালো রঙের সমুদ্রে পরিণত হয়। তারা প্রধান নির্বাহী ক্যারি লামের বিরুদ্ধে তাদের হতাশা ও ক্ষোভ উগরে দেয়। তারা ‘পদত্যাগ করো’ ‘পদত্যাগ করো’ বলে স্লোগান দেয়। কেউ কেউ বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন অভিযান চালানো পুলিশদের খুঁজে বের করে শাস্তির মুখোমুখি করার দাবি করছে। গত বুধবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৭০ বিক্ষোভকারী আহত হন। বহিঃসমর্পণ নিয়ে প্রস্তাবিত যে বিলটির কারণে হংকং রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে তাতে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত হংকংয়ের যে কোন বাসিন্দাকে তাইওয়ান, ম্যাকাউ কিংবা চীনের মূলভূখণ্ডে পাঠানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। বেজিংপন্থী হংকং সরকারের যুক্তি, বহিঃসমর্পণের সুযোগ না থাকায় হংকং চীনের অন্যান্য অংশের অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে, একে ব্যবহার করে চীন হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিকদের ওপর দমনপীড়ন চালাতে পারে বলে আশঙ্কা সমালোচকদের। আর বিরোধীদের আশঙ্কা, বিলটি কার্যকর হলে হংকংয়ের বেজিংবিরোধী হিসেবে পরিচিতরা কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রণাধীন চীনের বিচার ব্যবস্থার জালে আটকা পড়বেন।
×