ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জনকণ্ঠের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে উজবেকিস্তান খেলতে যাচ্ছে খুদে দাবাড়– খুশবু

প্রকাশিত: ০৮:১৫, ১২ জুন ২০১৯

জনকণ্ঠের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে উজবেকিস্তান খেলতে যাচ্ছে খুদে দাবাড়– খুশবু

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বয়স মাত্র ৭। চেহারাটা ভারী মিষ্টি। এত আস্তে কথা বলে, শোনাই যায় না! স্বভাবেও ভীষণ লাজুক মেয়েটি। অথচ ৬৪ ঘরের দাবা বোর্ডে বসলেই সে একেবারে পাল্টে যায়। প্রতিপক্ষ যতই সিনিয়র-অভিজ্ঞ হোক, মোটেও ঘাবড়ায়না। বরং জেতার জন্য চেষ্টা করে সর্বাত্নক। এই বয়সেই দেশী-বিদেশ সব ধরনের টুর্নামেন্ট মিলিয়ে ৯টিতে চ্যাম্পিয়ন, ৬টিতে রানারআপ এবং ১টিতে তাম্রপদক পেয়েছে। এর মধ্যে আছে তিনটি আন্তর্জাতিক শিরোপা। অভাবনীয় এই সাফল্য কুড়ানো এই খুদে দাবাড়–র নাম ওয়ারসিয়া খুশবু। বেশ কদিন ধরেই মন ভাল ছিল না খুশবুর। কেননা একটি মাত্র বিমান টিকেট এবং নিবদ্ধন ফির অর্থের অভাবে তার উজবেকিস্তানে যাওয়া হয়ে পড়েছিল অনিশ্চিত। ওখানে তার এশিয়ান ইয়ুথ চেস চ্যাম্পিয়নশিপে খেলার কথা, যা অনুষ্ঠিত হবে ১৯-২৯ জুন পর্যন্ত (গত বছর এই চ্যাম্পিয়নশিপের অনূর্ধ-৬ বিভাগে খুশবু স্বর্ণপদক জয় করেছিল)। এ নিয়ে দৈনিক জনকণ্ঠে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ‘খুদে দাবাড়– খুশবুর আহাজারি’ শিরোনামে। তবে আবার হাসি ফিরে এসেছে খুশবুর মুখে। কেননা তার উজবেকিস্তান যাওয়া নিশ্চিত হয়েছে। সেটা সম্ভব হয়েছে জনকণ্ঠে খুশবুর রিপোর্টটি প্রকাশের প্রেক্ষিতেই। খুশবুর পাশে দাঁড়িয়েছে একটি সফটওয়্যার কোম্পানি ‘বিট মাসকট প্রাইভেট লিমিটেড।’ বুধবার তারা উজবেকিস্তানে দাবা টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের জন্য এন্ট্রি ফি ও এয়ার টিকেট বাবদ এক লাখ ষাট হাজার টাকার চেক দিয়েছে। মহাখালীর নিউ ডিওএইচএসে নিজেদের অফিসে খুশবুর হাতে সেটা তুলে দেন প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার আবু বকর সিদ্দিক, ফিন্যান্স ম্যানেজার অসীম কুমার ঘোষ। সেখানে উপস্থিত ছিলেন গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীবও, যিনি খুশবুকে কোচিং করান এলিগেন্ট চেস একাডেমিতে। চেক পেয়ে খুশবুর প্রতিক্রিয়া, ‘আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। দোয়া চাইবেন আমি যেন ভাল খেলতে পারি।’ গ্র্যান্ডমাস্টার রাজীব বলেন, ‘বিট মাসকটকে ধন্যবাদ খুশবুর পাশে দাঁড়ানোর জন্য।’ ভবিষতেও প্রতিষ্ঠানটি দাবায় সহায়তা থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে। তারা বিশ্বাস করে উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ এবং নারী দাবার কিংবদন্তি রানী হামিদের মতো এখনও অনেক মেধাবী বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে। তারাও সুযোগ পেলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে আরও বেশি সাফল্য ও সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাবার যোগ্যতা রাখে। চেক প্রদান অনুষ্ঠানে সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন খুশবুর বাবা মেহেদী কায়সার এবং তার মা এশা কায়সার। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দাবায় এই অল্প বয়সেই চোখ ধাঁধাঁনো সাফল্য কুড়িয়ে নিয়েছে খুশবু। ২০১৮ সালে জাতীয় অ-১৬ দাবায় বয়সভিত্তিকে অ-৮ বিভাগে, স্বাধীনতা দিবস র‌্যাপিড দাবায় অ-১০ বিভাগে, গেটওয়ে আন্তর্জাতিক স্কুল দাবায়, এলিগেন্ট ঢাকা আন্তর্জাতিক স্কুল দাবায় বয়সভিত্তিক চ্যাম্পিয়ন হয় সে। একই বছরে শেখ রাসেল স্মৃতি স্কুল দাবায় এবং প্রধানন্ত্রীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত দাবা প্রতিযোগিতায় রৌপ্যপদক লাভ করে। আন্তর্জাতিক দাবায়ও কিস্তিমাত করেছে খুশবু। ২০১৮ সালে ভারতের কোলকাতায় দ্য টেলিগ্রাফ স্কুল দাবায়, উজবেকিস্তানে ওয়ের্স্টান ইয়ুথ এশিয়া চেস টুর্নামেন্টে অ-৬ বিভাগে এবং থাইল্যান্ডে এশিয়ান ইয়ুথ চ্যাম্পিয়শিপে অ-৬ বিভাগে স্বর্ণপদক জেতে। শেষের টুর্নামেন্টে অন্য দুটি ক্যাটাগরিতে দুটি রৌপ্যপদকও লাভ করে। ২০১৯ সালে এলিগেন্ট জাতীয় যুব দাবায় অ-৮ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন এবং সদ্যসমাপ্ত জাতীয় জুনিয়র দাবায় (অ-২০) তা¤্রপদক লাভ করে খুশবু। এ বছরই অ-১৩ স্ট্যান্ডার্ড দাবা টুর্নামেন্টে এবং ভারতের মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিত মুম্বাই আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় অ-৮ বিভাগে রানারআপ হয়েছে। খুশবু। ২০১৭ সালে প্রতিযোগিতামূলক আসরে খেলতে নেমেই ফিদে আন্তর্জাতিক রেটিং লাভ করে। আরেক ক্ষুদে দাবাড়স আর্শিয়া দাসকে ভারতের ভবিষত্যের সেরা সম্ভাবনাময় দাবাড়– হিসেবে ধরা হয়। ২০১৮ সালে ভারতের কোলকাতায় খেলতে গিয়ে টেলিগ্রাফ স্কুল দাবায় সেই আর্শিয়াকে হারিয়ে দিয়েছিল খুশবু! দেশেও সে তার চেয়ে বয়সে বড়-সিনিয়র রেটিংধারী দাবাড়–কে হারিয়েছে।
×