ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধসে গেছে রাস্তার দু’ধার

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ১০ জুন ২০১৯

 কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধসে গেছে রাস্তার দু’ধার

এমএ রকিব, কুষ্টিয়া থেকে ॥ কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়ক প্রশস্তকরণসহ পুনর্নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়মের চিত্র সদ্যনির্মিত সড়কেই ফুটে উঠেছে। প্রায় ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়ক নির্মাণ প্রকল্পটির কাজ এখন সম্পন্ন হওবার পথে। অথচ সামান্য বৃষ্টির পানির তোড়ে এ সড়কের অসংখ্য স্থানের দুই পাশে বালির পাড় ধসে পড়েছে। ভেঙ্গে পড়া এসব খানাখন্দ এখন মাটি দিয়ে ভরাট করার চেষ্টা চলছে। রাস্তার পাড় ভেঙ্গে পড়ায় পথচারী ও যান চলাচলে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঠিকাদারের গাফিলতি ও ত্রুটিপূর্ণ কাজের ফলে সদ্য সংস্কার ও নির্মিত মহাসড়কটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, আহলাদিপুর-রাজবাড়ী, পাংশা-কুমারখালী-কুষ্টিয়া (চৌড়হাস) পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ, মজবুতীকরণ, হার্ডসোল্ডার নির্মাণ, দুটি কালভার্ট ও সার্ফেসিংসহ আনুষঙ্গিক কাজে ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের ৮ মার্চ কার্যাদেশ অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৮ ফুট চওড়া সড়কটির দু’পাশে আরও ৬ ফুট প্রশস্তকরণসহ সিলকোট, ২ কালভার্ট নির্মাণ ও এক হাজার মিটার প্যালাসাইডিং কাজ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ত্রুটিপূর্ণ নির্মাণ কাজ ও ঠিকাদারের গাফিলতিতে বাস্তবায়িত হওয়ার আগেই প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ে। সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হওয়ার পথে এগুলোও ক’দিন আগে সামান্য বৃষ্টির পানিতে রাস্তার দু’পাশের বালির পাড় অসংখ্য স্থানে ধসে পড়েছে। এতে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টিসহ সদ্য নির্মিত সড়কের অংশবিশেষ ভেঙ্গে গেছে। এভাবে কুষ্টিয়ার চৌড়হাস মোড় থেকে কুমারখালী পর্যন্ত কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের দুই পাশে দেড় শতাধিক স্থান ভেঙ্গে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ সড়কে পথচারী ও যানবাহন চলাচল মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সিডিউল মোতাবেক এ মহাসড়কের পেভমেন্ট থেকে কমপক্ষে ৩ ফুট দৈর্ঘ্য পর্যন্ত শক্ত মাটি ভরাট ও কমপ্যাক্ট করার পর সোল্ডার নির্মাণের বিষয়টি অনুসরণ করা হয়নি। সড়কের পাশের পাড় ঘেঁষে মাটির পরিবর্তে দায়সারাভাবে বালু দিয়ে ভরাট করার ফলে সামান্য বৃষ্টির পানিতে বালু ধসে পড়ে এসব গর্ত সৃষ্টিসহ মহাসড়কের অংশবিশেষ ভেঙ্গে গেছে। এদিকে প্রায় ২শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য সংস্কার ও পুনর্নির্মিত কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কের বেহাল দশায় স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার লাহিনীপাড়ার বাসিন্দা আব্দুর রহিম জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ হাইওয়ে সংস্কার ও উন্নয়নে ত্রুটিপূর্ণ কাজ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। উন্নয়নমূলক এ কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না হলে জনগণের দুর্ভোগ ও দুর্ঘটনার ঝুঁকিসহ সরকারের আর্থিক ক্ষতি বাড়বে। তিনি প্রকল্পের কাজ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানান। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রকল্পের কাজ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিঃ ও জহুরুল লিমিটেড (জেভি)। মহাসড়কের উন্নয়ন প্রকল্প সম্পন্নের মেয়াদ ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জহুরুল লিমিটেডের (জেভি) স্বত্বাধিকারীকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে রবিবার সরেজমিন ঘুরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে সড়কের পাড়ের ভাঙ্গন ঠেকাতে মাটি ভরাট করতে দেখা গেছে। এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির পাশাপাশি প্রকল্প তত্ত্বাবধানকারী সরকারী প্রতিষ্ঠান সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও উদাসীনতা রয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, বৃষ্টির কারণে সড়কের বর্ধিত অংশের দু’পাশের পাড় ভাঙ্গনের আশঙ্কায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পূর্বেই চিঠি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সে মোতাবেক তারা বৃষ্টির আগে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় মাটি ধসে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। তবে সড়কের ভাঙ্গন সংস্কারসহ প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে বলে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান।
×