ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ উৎসবের অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৯:৩২, ২৬ মে ২০১৯

ঈদ উৎসবের অর্থনীতি

আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে চাঙ্গা হয়ে উঠছে দেশের অর্থনীতি। আর কিছুদিন পরেই ঈদ-উল-ফিতর। তাই পবিত্র শবে বরাত শেষ হতেই জমে উঠেছে রাজধানীসহ সারাদেশের ঈদের বাজার। মানুষের আয় আগের চেয়ে বেড়েছে। বেড়েছে কেনার সামর্থ্যও। ভোগ্যপণ্যের চাহিদায় এসেছে বৈচিত্র্য। রমজান মাস এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের আয়ের প্রধান মৌসুম। অভিজাত মার্কেট ও শপিংমল হতে শুরু করে পাড়া-মহল্লার ছোট-বড় বিপণি বিতান ও ফুটপাথের দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় এখন বাড়ছে ক্রমশ। ঈদকে সম্মুখে রেখে সাজ সাজ রব এখন বিদেশী ব্র্যান্ড ও আউটলেটগুলোতেও। প্রতি বছরই পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে আসে নতুন কালেকশন। এসব কালেকশন যেমন বাহারি, তেমনি চিত্তাকর্ষক। নতুন নতুন ডিজাইনে ক্রেতাগণ মোহিত ও পুলকিত হন। থাকে মূল্যছাড়, বিশেষ ছাড় বা র‌্যফেল ড্রয়ের ব্যবস্থাও। জানা যায় পোশাকের দোকানেই কেনাকাটা হয় ৮০ হাজার কোটি টাকার উপরে। নারীর সাজ-গোছ, আসবাবপত্র ও গৃহসজ্জার নানা পণ্যের চাহিদাও বেড়ে যায় বহুগুণ। ঈদকে ঘিরে শহর ও গ্রামে প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। দর্জিপাড়ার ব্যস্ততা দেখলেই বোঝা যায় অর্থ প্রবাহ কতটা বেড়েছে। আগে চার-পাঁচজন কর্মচারী কাজ করলেও ঈদকে কেন্দ্র করে দ্বিগুণ লোক নিয়োগ করা হয়। মিলি নামের একটি মেয়ে বলল, “ড্রেস কিনে বানাতে হবে মনে পড়লেই মনে হয়, কেন দর্জির কাজটা শিখলাম না। একটি ড্রেসের মজুরি দিয়ে আর একটি ড্রেস কেনা যায়। তাই অনেকেরই এখন পছন্দ রেডিমেট ড্রেস।” ঈদ যত এগিয়ে আসছে ততই বাড়ছে রেডিমেট ড্রেসের দোকানে উপচেপড়া ভিড়। শিশুদের পোশাক মানেই তালিকায় থাকতে হবে দু-তিনটি ড্রেস। সঙ্গে জুতা কসমেটিকস এগুলো তো থাকবেই। বাবা-মায়ের আদরের সোনামণিদের চাহিদা পূরণ করতে চানরাতেও ছুটতে হয় শপিংমলে। বেতন, বোনাস ও রেমিটেন্স দিয়ে অর্থনীতিতে শুরু হয় বিশাল কর্মযজ্ঞ। প্রতি বছরের মত এবারও বেড়েছে রেমিটেন্স। প্রবাসী আয় যাচ্ছে ভ্রমন ও কেনাকাটায় যা দেশের অর্থনীতিকে করছে আরও বেগবান। দোকান থেকে কোন পণ্য ক্রয় করলেই মিলছে বাহারি রঙের শপিং ব্যাগ। বেচাকেনা যত বাড়ে তত বাড়ে এ ব্যাগের চাহিদা। এই চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন শপিং ব্যাগের কারখানার মালিক-কর্মচারীরা। নিজেদের দোকানের নামে ব্যাগ বানাতে হলে অন্তত ১০০টি ব্যাগের অর্ডার করতে হয়। বেশিরভাগ মানুষ এখন ভিসাকার্ড, মাষ্টারকার্র্ড ইত্যাদি কার্ড দিয়ে ক্রয় করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। দোকানদাররাও প্রতিবারের মতো কার্ডে দিচ্ছেন নানা সুযোগ-সুবিধা। লেনদেন ও কেনাকাটায় নগদ অর্থের পরিবর্তে কার্ডের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। আর কার্ডে কেনাকাটায় পণ্যের দাম কমাতে সহযোগিতা করছে ব্যাংকগুলো। এছাড়া ঈদে ঘরে ফেরা ও বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে আকাশপথে বিমান ভাড়ায়ও ছাড়ের ব্যবস্থা রয়েছে। জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন ব্যাংক তাদের কার্ডধারীদের জন্য নির্দিষ্ট শোরুম থেকে কেনাকাটায় ১০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়ের সুবিধা দিচ্ছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকগুলো নতুন গ্রাহক আকর্ষণের পাশাপাশি পুরনো গ্রাহকদের ‘ঈদ উপহার’ দিচ্ছে। মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে আড়ং ও এ্যাপেক্সে কেনাকাটায় মিলছে ৩০ শতাংশ ছাড়। এ ছাড়া আগোরা, মীনাবাজার ও স্বপ্নতে কেনাকাটায় মিলছে ১২ শতাংশ ছাড়। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) গ্রাহকেরা কার্ডে কেনাকাটায় আড়ং, এ্যাপেক্স, দেশী দশ, রিচম্যান, ইনফিনিটি, আগোরা ও ইউনিমার্টে পাচ্ছেন ১০ শতাংশ ক্যাশ ব্যাক সুবিধা। আরও বিভিন্ন ব্রান্ডে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত সুবিধা পাচ্ছেন ব্যাংকটির গ্রাহকরা। এনআরবি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আড়ংয়ে কেনাকাটায় মিলছে ২৬ শতাংশ ছাড়। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটায় মিলছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত মূল্যছাড়। ব্র্যাক, ডাচ্-বাংলা, ইস্টার্ন, সাউথইস্ট ব্যাংকের গ্রাহকরাও কার্ডে কেনাকাটায় পাচ্ছেন বিশেষ ছাড়। বর্তমানে দেশে দেড় কোটির বেশি ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। যাতে গত ডিসেম্বরে লেনদেন হয়েছে ১৩ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সারাদেশে এটিএম বুথ রয়েছে ১০ হাজার ৩৫৫। কেনাকাটার জন্য পয়েন্ট অব সেলস রয়েছে ৪৫ হাজার ৮৯৬টি। ইন্টারনেটের এই যুগে কেনাকাটা করতে এখন মার্কেটে না গেলেও একটি ক্লিকেই বাসায় পৌঁছে যাবে পণ্যটি। অনলাইনে শপিং করলে কোন ব্যাগ আপনাকে বহন করতে হচ্ছে না। কোন প্রোডাক্ট অর্ডার করে বাসায় আরামে ঘুম দিন আর অনলাইন শপের ডেলিভারি ম্যান এসে আপনার ঘুম ভাঙাবে! কি দরকার মার্কেটে গিয়ে কষ্ট করে কতগুলো ব্যাগ টেনে বাসায় নিয়ে আসা। অনলাইন শপের ওয়েবসাইটগুলোতে একটি অপশন থাকে রিভিউ। যেখানে ওই প্রোডাক্টটি যারা কিনেছেন তারা সেই প্রোডাক্টের ভাল খারাপ সম্পর্কে কমেন্ট করতে পারেন যা দেখে অন্য আরেকজন ক্রেতা সহজেই সেই প্রোডাক্ট টি সম্পর্কে ধারণা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে সেটা কিনবে নাকি কিনবে না! কিন্তু বাস্তবে শপিং মলে বা দোকানে সেটি যাচাইয়ের সুযোগ কম। কারণ সেখানে কেবল আপনি বিক্রেতার কাছ থেকেই প্রোডাক্টটি সম্পর্কে ধারণা পাবেন কোন ইউজারের কাছ থেকে নয়। তাই আপনি প্রোডাক্টটি সম্পর্কে আসল ধারণা সহজেই পাবেন না। এক্ষেত্রে আপনি অনলাইন শপকেই বাছাই করতে পারেন। ঘরে বসে অনলাইনে কেনাকাটার চলটা শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। পোশাক থেকে গহনা, প্রসাধনী থেকে নিত্যপণ্য সবই পাওয়া যায় অনলাইনে। ইন্টারনেটের যুগ সত্ত্বেও বেশিরভাগ মানুষই এখনও অনলাইন শপকে কেনাকাটার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছে না। তাই বিপণিবিতান থেকে শুরু করে ছোটবড় দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। বিশ্বজুড়েই ঈদ উৎসবের অর্থনীতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন উৎসব ঘিরে নানা ধরণের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড অর্থনৈতিক গতি প্রবাহ বাড়িয়ে তোলে। ভগ্ন অর্থনীতিকে দেখায় আশার আলো। বাংলাদেশে প্রায় তিন কোটির মতো লোক ছোট কিংবা বড় ব্যবসায়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে এদের ব্যবসা হয়ে ওঠে রমরমা। ফলে রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ের আকার বাড়ছে, দেশের অর্থনীতিতেও যোগ হচ্ছে বেশি পরিমাণ অর্থ।
×