ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আশরাফুল আলম

বিপন্ন নারীযাত্রী

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ২৩ মে ২০১৯

  বিপন্ন নারীযাত্রী

প্রায়শ বাসে যাতায়াতকারী মহিলারা বাসে নির্যাতিত হন। তারা বিভিন্ন উপায় ও তথ্য দিয়ে তাদের নির্যাতনের ধরন ব্যাখ্যা করেন। অনেকে লিখতে তাগাদা দেন। আমরা দায় এড়াতে পারি না। আমি কান পেতে শুনি তাদের সেসব দুঃখের কথা। বাসে নির্যাতিত নারীদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স, ছাত্রী, গার্মেন্টস কর্মী, স্কুল শিক্ষক, গৃহিণী কেউ বাদ পড়েনি। আমি অফিসে যাই বাসে। আমার চোখেও অনেক দৃশ্য দেখেছি। কিন্তু সেদিন স্কুল শিক্ষক এক ম্যাডামের কথায় আমার দুঃখটা আরও বড় হতে থাকে। আসলে সেদিন কী হয়েছিল ঐ স্কুল ম্যাডামের? বোরকাপরা ভদ্র মহিলার বাহু ধরে টেনে বাসে তুলেছে বাসের হেলপার। তিনি কি বাসে উঠতে গিয়ে পড়ে যাচ্ছিলেন? তেমন কোন সম্ভাবনা বিন্দুমাত্র ছিল না। তবুও তার গায়ে হাত দেবে এটাই হেলপারদের স্বভাব। প্রতিবাদ করেননি লজ্জায়। হেলপার, কন্টাক্টর, ড্রাইভার মেয়েদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করে। এমনকি মায়ের নাম তুলেও গালি গালাজ করে। ড্রাইভারকে নিয়ে তাদের আপত্তির সীমা নেই। ড্রাইভার তার পাশে মেয়েদের বসাতে ভালবাসেন। সম্ভবত এজন্যই তার পাশে সিট রাখা হয়েছে। তাদের সঙ্গে রসালো কথা বলেন আর গাড়ি চালান। এ জন্য অনেক সময় ড্রাইভার গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারান বা দুর্ঘটনার শিকার হন। ড্রাইভারের পাশে ইঞ্জিনরুম। ভিতর থেকে ইঞ্জিনের গরম মেয়েদের পোহাতে হয়। কেউ কেউ রস করে বলেন, মেয়েরা বেশিরভাগই দোজখে যাবে তাই দোজখের আগুন সহ্য করার ক্ষমতা দুনিয়াতে অভ্যাস করানো হচ্ছে আমাদের দ্বারা। প্রতিবাসে মেয়েদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৫-৬ টি সিট। কাউন্টার বাসের ক্ষেত্রে সামনের ৩টি সারি শিশু, মহিলা ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখা হয়েছে। ৩টি সারিতে ৯জন যেতে পারে। আর বাকি ৫০টি আসন পুরুষের জন্য রাখা হয়েছে। এখানেও নারীরা বৈষম্যের শিকার। ৫-৬টি সিট ফিলাপ হলে আর তাদের বাসে উঠতে দেয় না। হেলপাররা ধাক্কা দিয়ে গেট থেকে মেয়েদের নামিয়ে দেয়। সিট নেই বলে চিৎকার করে। যদি জোর করে কোন মেয়ে উঠেই পড়ে। পুরুষদের মাঝে ঝুলে থেকে তার যে শিক্ষা হয় সে আর কোনদিন ভুলেও দাঁড়াবে না পুরুষদের মাঝে। সে না পারে বলতে লজ্জায় না পারে সহ্য করতে। আমাদের ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণের দুই আসনের মেয়র যোগ্য লোক। নারীদের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা তারা দেখিয়ে থাকেন। মাননীয় মেয়রদের নিকট মেয়েরা আবেদন রেখেছেন, অন্তত বাসে নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পেতে চান। তাদের জন্য বাসে পুরুষের সিটের বিপরীতে পর্যাপ্ত সংখ্যক আসনের ব্যবস্থা রাখলে সমস্যাগুলো অনেকাংশে দূর হবে। এ জন্য মেয়রদের পদক্ষেপ কামনা করি। বাসে কেউ অশালীন আচরণ করলে তাদের অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এসব প্রচারকার্যে মেয়রদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রাখতে হবে। মাননীয় মেয়রগণের নিকট বাসে নারী নির্যাতনের বিষয়টি সমাধানের জন্য সবাই মিলে আকুল আবেদন পেশ করছি। উলন রামপুরা, ঢাকা থেকে
×