ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মোরেলগঞ্জে খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ

প্রকাশিত: ০৯:০৫, ১১ মে ২০১৯

মোরেলগঞ্জে খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রায় সব বেড়িবাঁধ, খাল ও রাস্তা ঘের ব্যবসায়ীদের দখলে চলে গেছে। যে যার মতো করে জনগুরুত্বপূর্ণ খালে বাঁধ দিয়ে রাস্তা ও পাউবো বাঁধ কেটে জমিতে লবণ বদ্ধ করে রেখেছে। মাছ চাষের নামে প্রধাবশালী ঘের ব্যবসায়ীরা স্বেচ্ছাচারিতা করছে। তাদের কাছে সাধারণ চাষীরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েও গ্রামবাসীরা কোন কথা বলতে পাচ্ছেন না। কোন প্রকার নালিশ বা’ টু শব্দ করলে নানাপ্রকার হুমকি-ধমকিসহ চাষীদের ওপর নির্মম নির্যাতন করা হচ্ছে। থানা পুলিশ, পাউবো, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি সকলেই যেন রহস্যজনক উদাসীন। ফলে আক্ষরিক অর্থে এখানে হাজার হাজার চাষী অসহায় বন্দী জীবন-যাপন করছেন। শুক্রবার সরেজমিনে বহরবুনিয়া ও পঞ্চকরণ ইউনিয়ন ঘরে গ্রামবাসী সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়। বহরবুনিয়া ইউনিয়নে জনসংখ্যা প্রায় ২২ হাজার। স্থানীয়দের প্রধান আয়ের উৎস্য কৃষি। বাগদা, গলদা ও সাদা মাছের ঘের ব্যবসার সঙ্গেও অনেকে জড়িত। এ ইউনিয়নে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৭শ’টি ঘের রয়েছে। খাল রয়েছে ৩১টি। কাঁচা রাস্তা প্রায় ২০ কিলোমিটার। আংশিক পাকা বা ইটসোলিং রাস্তা প্রায় ১১ কিলোমিটার। ঘের ব্যবসায়ীরা রেকর্ডীয় ৩১টি খালের ৩০টিতেই বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করছেন। খালের পানি প্রবাহ নির্ভর করে ঘের মালিকদের ইচ্ছার ওপর। অনেক খাল অস্তিত্বও হারিয়েছে। পূর্ব বহরবুনিয়া হিন্দুপাড়ার নাদের আলী খাল, কলেজ বাজার এলাকার জুব্বার আলী খাল, সিরাজ মাটারের বাজার সংলগ্ন কাটা খাল, মিয়ার, হোগলাবুনিয়ার খালসহ উল্লেখযোগ্য সরকারী খালগুলো ঘের ব্যবসায়ীদের দখলে। অসংখ্য বাঁধ ও গড়া দিয়ে প্রভাবশালীরা এসব খালে ঘের করছেন। সূর্যমুখী খালের পশ্চিম পাড় থেকে শুরু করে সিরাজ মাস্টারের বাজার পর্যন্ত দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার ১০-১২ স্থানে কেটে কাঠের বক্স বসিয়ে জমিতে লবণ পানি তোলা হয়েছে। কালীবাড়ি হয়ে পূর্ব বহরবুনিয়ায় যাওয়ার ইটসোলিং রাস্তা বিভিন্ন জায়গা থেকে কেটে বক্স ও পাইপ বসিয়েছেন জমিতে অনুরূপ লবণ পানি তুলছেন ক্ষমতাসীন ঘের ব্যবসায়ীরা। এ ইউপির চেয়ারম্যান রিপন তালুকদার নিজেও কয়েকটি ঘেরের মালিক। খাল দখল ও রাস্তা কাটায় তার ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। মিয়ার খাল ও জুব্বার আলীর খাল দুটি চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের দখলে। জুব্বার আলীর খালে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বাঁধ দেয়ায় ২৫-৩০টি পরিবার এখন পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান রিপন তালুকদার বলেন, জনসাধারণের অসুবিধা হয় এমন কিছু করা হয়নি। ৩১টি খালের পানি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। অন্যথায় এলাকাবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হতো। খাল বেদখলের বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ইউনিয়ন সচিবের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার একটি কাঠের বাক্স অপসারণ করা হয়েছে। খালের বাঁধ অপসারণ ও রাস্তা কাটার বিষয়ে শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভালুকা নিজস্ব সংবাদদাতা ভালুকা, ময়মনসিংহ থেকে জানান, ভালুকা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডে অবস্থিত রোয়ার ফ্যাশন কোম্পানির লোকেরা বোরো কৃষি জমির ওপর বাঁধ নির্মাণ করার ফলে বাঁধের উজানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে শতাধিক বিঘা জমির ফসল নষ্ট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় ভুক্তভোগী কৃষকরা একাধিকবার পৌর মেয়র ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। জানা যায়, রোয়ার ফ্যাশন উজানের পানি ঠেকানোর জন্য ২০১৮ সালে মিলটির পশ্চিম ও উত্তর পাশে বোরো জমির ওপর ৪০ ফুট চওড়া বিশাল একটি বাঁধ নির্মাণ করে। সে বাঁধটি বর্তমানে রাস্তা হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। উজানের পানি নিষ্কাশনের জন্য বাঁধের নিচে সরু একটি কালভার্ট বসানো হয়। কালভার্টটি এমনভাবে বসানো হয়েছে তাতে উজানের পানি পুরোপুরি নিষ্কাশন হয় না। এতে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে। চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকরা তাদের নিজের টাকা দিয়ে বাঁধের উজানের পানি নিষ্কাশন করে বোরো ধান লাগায়। এ মৌসুমে কয়েক দফা বৃষ্টি হওয়ায় নতুন করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে কৃষকদের বোরো ধান ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়াও মিলটির তিন হাজার শ্রমিকের প্রশ্রাব পাইপ দিয়ে উজানের ফসলি জমিতে ফেলা হচ্ছে। এতে প্রস্র্রাবের এসিডে দুর্গন্ধ ও জলাবদ্ধতায় বাঁধের লাগোয়া জমিতে ফসলই হচ্ছে না। এ ঘটনায় ভালুকা পৌর মেয়র ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার না পেয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে ভুক্তভোগী কৃষকরা অভিযোগ করেন। সরেজমিনে দেখা যায় বাঁধের উজানে পানিতে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কায় অপরিপক্ক বেশ কিছু ধান কেটে নিয়ে গেছেন। বাঁধের পাশের ৯-১০ বিঘার ধান গাছ মরে পুড়ে বাদামি রং হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। বাঁধ নির্মাণ করার সময় মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন মিলনের উচ্চ মূল্যের ৪ শতক জমি কোম্পানির পরিচালক শামীম আজাদ খান জোরপূর্বক দখল করে নেয় বলে আবুল হোসেন মিলন অভিযোগ করেন। ওই এলাকার হাজী মোঃ আব্দুস ছামাদ বলেন, কোম্পানির শ্রমিক কর্মচারীদের প্রস্র্রাবের লাইনটি সরাসরি আমাদের ফসলি জমিতে ফেলা হচ্ছে, এতে প্রস্র্রাবের গ্যাসে জমির ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মিলের পরিচালক শামীম আজাদ খান বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধার কোন জমি দখল করিনি। উজানের পানি নিষ্কাশনের ড্রেনে বিদ্যুতের টাওয়ার নির্মাণ করার সময় মাটিতে পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়ায় কিছুটা জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। পরে আমি ব্যক্তিগত শ্রমিক দিয়ে ওই মাটি সরিয়ে ড্রেন পরিষ্কার করে দিয়েছি।
×